প্রেমানন্দ মহারাজের বাণী -2 (Teachings of Premananda Maharaj -2)

 প্রেমানন্দ মহারাজের বাণী -2:-

বর্তমান ভারতে সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক গুরুদের মধ্যে অন্যতম এবং বহু ভারতীয়দের হৃদয়ের মনি হলেন পরম পুরুষ, যুগ পুরুষ, সদগুরু, শ্রী প্রেমানন্দ মহারাজ। অতীতে সন্যাস মার্গ থেকে পরে ভক্তি মার্গ এর যাত্রা, কাশী তে ভগবান শিব এর উপাসনা থেকে শুরু করে বৃন্দাবনে রাধারানীজীর উপাসনা, সবে মিলে জ্ঞান ও ভক্তি মার্গের এক অনন্য মিলন। তাঁর দেওয়া আধ্যাত্মিক শিক্ষার মূল্যবান বাণী আজ শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা বিশ্বে প্রচারিত। তিনি এমন ভাবে সনাতন ধর্মের সহজ এবং সরল পথ দেখিয়েছেন যে ..এই পথ অনুসরণ করে যে কোনো ব্যক্তি নিজের জীবন কে আধ্যাত্মিক পথে চালিত করে নিজে সৎ, সুন্দর, আনন্দময় এবং উন্নত জীবন তৈরি করে, পরম কল্যাণ  তথা ভগবৎ প্রাপ্তির পথ প্রশস্ত করতে পারেন।

তিনি আধ্যাত্মিক যাত্রায়, ভগবৎ প্রাপ্তির যাত্রায় সব থেকে বেশি যেটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন সেটা হলো ঈশ্বরের নাম জপ। তিনি বলেন শিব, দুর্গা, কালী, রাধা ,কৃষ্ণ,গণেশ, ইত্যাদি সব দৈবিক নাম গুলি সব একই ঈশ্বরের নাম। যিনিই কৃষ্ণ, তিনিই রাম, তিনিই শিব, তিনিই দুর্গা, তিনিই রাধা, তত্বত ঈশ্বর এক, এর মধ্যে কোনো ভেদ নেই। তাই তিনি, বলেন..গুরু প্রদত্ত ঈশ্বরের  নাম হোক, বা নিজের পছন্দে চয়ন করা ঈশ্বরের যেকোনো নাম হোক, ঈশ্বর কে এক নামে জপ এবং ভজন করুন। তিনি বলেন ঈশ্বরের নাম জপ এর অসীম মহিমা। এই নাম জপ থেকেই, আধ্যাত্মিক সিদ্ধি, ভৌতিক সিদ্ধি, ভগবৎ প্রাপ্তি , সবকিছুই সম্ভব।

এখানে তাঁর দেওয়া উপদেশ ও বাণীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা  তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।...অবশ্যই পড়ুন জীবন ধন্য হয়ে যাবে।...

29) জীবনে যতক্ষণ এই চার জিনিস থাকবে না, ততক্ষণ ভগবৎ স্বীকৃতি পুষ্ট হবে না। :- 

প্রথম হলো- নিরন্তর গুরু প্রদত্ত নাম জপ ও মন্ত্র জপ।

দ্বিতীয় হলো - সৎসঙ্গ। এর পুষ্টতার জন্য সৎসঙ্গ অতি অনিবার্য। সৎসঙ্গ না হলে ভজন হয় না। "ভজন সঙ্গ না হোই সৎসঙ্গ বিনু।" যদি ভজনানন্দী মহাপুরুষের সঙ্গ না করা হয়, তাহলে ভজন হবে না।

 তৃতীয় হল - শাস্ত্র স্বাধ্যায়। আচার্য বাণী, মহাপুরুষের বাণী এর একান্তে স্বাধ্যায় এবং মনন।

 চতুর্থ হল-  সেবা। গুরু সেবা, পরিবার সেবা, সমাজসেবা, রাষ্ট্র সেবা, বিশ্বের সেবা। এসব যার মধ্যে আছে, তাঁর দিব্য স্বীকৃতি হবে এবং অসাধণ আপনাআপনি দূর হবে এবং তাঁর মধ্যে দিব্য সাধন সম্পত্তি প্রকাশিত হবে।

30) কাম, ক্রোধ, তথা লোভ, এই তিনটি ধন সোজা নরকে যাওয়ার সার্টিফিকেট দেয়। যদি কামাসক্ত হয়ে পর মাতা, বোন এর সঙ্গে ব্যভিচার করেন অথবা আপনার লোভের দ্বারা অন্যের প্রতি হিংসা করে ভাবেন, যে আমাকে তার ধন লুটে নিতে হবে, আমাকে তার ভোগ সামগ্রী লুটে নিতে হবে, তাহলে এসব কাজ নরকের সার্টিফিকেট দেবে। গোস্বামী তুলসীদাস সংস্কৃত শ্লোক হিন্দিতে অনুবাদ করে বলেছেন .."কাম, ক্রোধ, মদ, লোভ, সব নরক কে পন্থ।"

31) এমনও ব্যক্তি আছেন যাঁরা কিছুক্ষণ পূজা আরতি করেন, তারপর নেমে পড়েন..ছল, কপট, হিংসা, দ্বেষ, কু-ভাবনা কু-আচরণ, করতে। এমন মানুষদের করা পূজার ফল এমনি হয় যেমন আগুনের ছাই এর উপর করা হোম যজ্ঞ। যেমন  আগুন ছাড়া যজ্ঞ করলে তার কোন অর্থ বা মূল্য নাই, তেমনি আপনি সদাচার বা সৎ ব্যাবহারকে ছেড়ে দিয়ে ভগবানের পূজা করলে, সে পূজার ও কোন মূল্য নেই। এজন্য শাস্ত্র সম্মত কাজ করুন। বিনা ঈশ্বর ভজন করে যিনি যেখানেই থাকুন, ভালো বিচার থাকবে না। এর উচিত বিচার না থাকার কারণে ক্রিয়া আপনার পবিত্র হয় না এবং পবিত্র ক্রিয়া  না হওয়ার কারণে আপনার চিন্তা, শোক, ভয় এসবই চলতে থাকে। 

32) গুরুদেব !গৃহস্থির জন্য কোন স্থিতিতে নাম জপ নিষিদ্ধ থাকে? 

কোন ক্রিয়াতেই নাম জপ নিষিদ্ধ নেই, মন্ত্র জপের জন্য নিয়ম আছে। যখন আপনি অপবিত্র থাকবেন, তখন মন্ত্র জপ করবেন না, নাম জপ করতে পারেন। যদি আপনি নাম জপ করছেন, তাহলে সব থেকে বড় কাজ করছেন। ভগবান আদেশ করেছেন ..সর্বদা সর্বকালে আমার নাম স্মরণ কর এবং নিজের কর্তব্য পালন কর। শৌচক্রিয়া করছেন আর নাম চলছে, কাজ করছেন তো নাম চলছে। নাম জপ এর জন্য সব সময় সবকালেই অনুমতি আছে। 

33) যদি আপনি এই জন্মেই কর্মের হিসাব শেষ করে নিতে চান, তাহলে কেঁদে ফেলবেন। আপনি যেই হোন না কেন আপনার দ্বারা কি ভুল কাজ হয়নি? কখনো ভয়ানক ভুলও হয়েছে। কিন্তু আপনি নিজেকে ক্ষমা করেছেন। এমন কখনও প্রভুকে চেয়েছেন কি? যে.."প্রভু! আমার বড় ভুলের জন্য আমাকে বড় দণ্ড দিন।" দেখুন এটা একজনের কথা নয়, যতক্ষণ ভগবানে মন লাগে না, ততক্ষণ মন এর প্রতি ভরসা করা যায় না। মন পাপ করতে প্রবল। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের কর্ম -রেজিস্টার কে খুলে দেখুন। যদি সব কাজের দণ্ড পাওয়া যায় ..তাহলে দণ্ড পেতে পেতে হুশ খারাপ হয়ে যাবে। সেই কারণে বুঝুন যে.. অন্য কেউ নয়, আমাকে আমার কর্মই কষ্ট দিচ্ছে। আমার দুঃখের কারণ আমার কর্ম।  আমাদের চিন্তাভাবনা যদি ভালো এবং শুদ্ধ হয় এবং বুঝতে সক্ষম হই যে.. আমার কর্মই আমাকে দুঃখ দেয়। তাহলে আমরাও চাইবো যে আমার দ্বারা কেউ কষ্ট যেন না পান। 

34) যদি এক গ্লাস জলও পান করেন, তাহলে প্রথমে ভগবান কে অর্পিত করুন তারপর পান করুন। আর ভোজন যদি অভক্ষ্য হয়, তাহলে সেই ভোজন ভগবান কে অর্পণ করবেন না। কোন এমন পদার্থ নেই যেখানে ভগবানকে পাওয়া যাবে না, সে যাই জিনিস হোক, ভগবানকে না অর্পণ করে খাবেন না, বা পান করবেন না। যদিও এটা বাইরের কিয়া,  কিন্তু এর প্রভাব ভেতরে ঢুকতে শুরু করবে। প্রসাদ আপনার বৃত্তি কে শুদ্ধ করতে থাকবে। যেমন চরনামৃত হল ভগবানের উচ্ছিষ্ট অমৃত, এটা হল প্রসাদি বস্তু, এসব খেলে পাপ নষ্ট হয়। আর যদি ভোগ না লাগান, তাহলে পাপ খাবেন। গীতা তে ভগবান বলেছেন.. এটা আমার বৃত্তিকে নষ্ট করে। এর সঙ্গে নাম জপ শুরু করুন। প্রতিদিন যা কর্ম করছেন। দুই দুই ঘন্টা করে বা চার চার ঘন্টা করে হিসেব বের করে, যা কর্ম করলেন তা ঈশ্বরকে সমর্পণ করুন। হে শ্রীজি চার ঘণ্টায় যা কর্ম করলাম সব আপনাকে সমর্পিত করছি। "কৃষ্ণায় কৃষ্ণার্পনম বস্তু।" আপনি এক্ষুনি শুদ্ধ হতে শুরু করবেন। 

35) ভগবানের প্রাপ্তির জন্য কোন কঠোর তপস্যা করার প্রয়োজন নেই। ভগবৎ আশ্রয়, নাম জপ, আর যেখানেই যে কাজে আছেন, সেটাই ভগবানের সেবা হিসেবে মেনে নিন। শ্বাস হোক, শ্বশুর হোক, স্বামী হোক, পুত্র হোক, পারিবারিক জন হোক, এসবের সেবা ভগবানেরই সেবা। আজকাল বয়স বৃদ্ধ, অসুস্থ বুড়ি বিছানায় পড়ে আছেন, এদের দয়া করে সেবা শুশ্রূষা করুন, এদের কষ্ট দিলে ঘরে শান্তি পাবেন না। আপনি যে  আচরণ করছেন, সেটাই ভগবানের পূজা ধরে নিন। সামনে যিনি আছেন, তাঁর মধ্যে ভগবান দেখুন। আর নাম জপ করুন। দেখবেন যা মহান আত্মার গতি হয়, সেই গতি আপনারও হবে। বিশ্বাস করুন ..এটা অনুভব থেকে বলছি। ভগবানের প্রশান্তির জন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কোন কিছু বদলানোর প্রয়োজন নেই। নিজেকে সঠিক পথে পরিবর্তন করে আনার প্রয়োজন আছে ।

36) কোন ঝগড়া করার দরকার নেই। কোথাও যাওয়া আসার দরকার নেই। ঘরে থেকে এবং পতি ও পরিবারকে ভগবানের স্বরূপ মেনে চলুন। যেমন মন্দিরে হয়, সিয়ারাম জি, রাধেশ্যাম জী, শিব জি, সব মন্দিরেই থাকেন, তেমনি শ্বশুর, মাতা-পিতা, ভাই, বোন, বন্ধু, এসবই ঘরে ঘর মন্দিরের সদস্য। এর মধ্যেও ভগবান আছেন, এই রূপে সেবা করে এবং একান্তে উনাকে প্রার্থনা করুন। প্রভু! এই পরিবার রুপি সেবায় আপনি প্রসন্ন হয়ে যান এবং আমাকে আপনার চরণে প্রেম দান করুন। পাক্কা বলছি.. ঈশ্বর এর কৃপা পেয়ে যাবেন। আর যদি ধর্মবিরুদ্ধ আচরণ করেন, তবে কোথাও আনন্দ প্রাপ্তি হবে না।

37) দেখুন পূজা হল এক ভাগবতিক ক্রিয়া। এটা বাহারি ক্রিয়া এটা মঙ্গলময়। ঠিক। কিন্তু মনে চিন্তন কি চলছে, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।এখানে আধ্যাত্মিক খাস কথা হল চিন্তন এর। যদি আপনার চিন্তন শরীর এবং বিষয়ের উপর চলছে। তাহলে পূজা সম্পন্ন হবে না। কিন্তু আপনার মনে যদি চিন্তন ভালো চলছে। চিন্তন ঠিক চলছে। প্রভু তে চিন্তন চলছে। তাহলে আপনার সঠিক পূজা হচ্ছে। 

38) যেমন ধরুন যদি প্রারব্ধ আপনার দারিদ্রতা লিখেছে, তাহলে আপনি যদি মাথার ভর হয়ে  দাঁড়িয়ে যান।  24 ঘন্টা কর্মরত থাকুন। যতই রোজগার করুন, পাশ থেকে এমন ছিদ্র হয়ে যাবে, সেটা দিয়ে সব সঞ্চয় বেরিয়ে যাবে। আবার আপনার হাত খালি হয়ে যাবে। যতই উপায় করুন, আপনার পূর্বের কুকর্মের ফল ফলছে। কত এমন উদাহরণ আছে।  আবার অন্য ব্যক্তিকে দেখুন.. তিনি কোটি কোটি টাকার উপর বসে আছেন, তিনি তাঁর সুকর্মের  ফল ভোগ করছেন। দেখবেন কোন ইঞ্জিনিয়ার অনেক পড়াশোনা করেছেন কিন্তু গোবর চালাচ্ছেন, কাজ পাচ্ছেন না, এটা তার কর্মফল। এমন প্রারব্ধকে কেবল বদলাতে পারবে ভগবৎ ভজন, এবং ঈশ্বরের নাম জপ, আর কেউ নয়। 

39) যিনি নিজের মনকে পূজা তে লাগান এবং জিহ্বা তে নিরন্তর ভগবানের নাম জপ করেন, তিনি যে সুখ পান, সে সুখ কোন পদাধিকারী, বা কোন বৈভবশালী, বা কোন ভোগের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। এই জন্য বলি ভয় পাবেন না। অন্যায়ের আশ্রয় নেবেন না। আর রাধা রাধা জপতে থাকুন। জয় আপনার চরণতলে আসবে। আপনার চরণ চুম্বন করবে। বিশ্বাস করুন। অনেক সোজা এবং সরল পদ্ধতি এটা।

40) ভগবৎ প্রাপ্তির কথা বলছেন? আপনি যেখানে থাকেন সেখানেই ভগবৎ প্রাপ্তি সম্ভব। ভগবান শুধু বলেন আমি তারই জন্য সুলভ, যিনি আমাকে চিন্তাও করেন। এবার বলুন সমস্যা কি? আমি বাইরে সবার সাথে মিশবো, ভালো ভাষা ব্যবহার করব এবং ভেতরে ভেতরে নিজের প্রভুর চিন্তন করব। সত্যি করে বলছি। এমন চললে ভগবত প্রাপ্তি হয়ে যাবে। 

41) "মানুষ জন্ম আনন্দের জন্য"লোক এমন ভেবে একে নষ্ট করছেন।  ৮৪ লাখ যোনির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল মানব দেহ, আর এতেও কান্নাকাটি? সেই কিউ মিউ। যান উঠুন। এমন ভূমিকা পালন করুন যে..সকল কষ্ট সহ্য করে হাসতে হাসতে চলুন।প্রিয় প্রভুর সাথে মিলিত হন । এই দেহ প্রভুর সনে মিলন ঘটানোর জন্যই প্রাপ্তি হয়েছে। তাই সৎকর্ম করুন, ঈশ্বরের নাম জপ করুন এবং অপরের সেবা করুন ।

42) যদি আপনি ভগবানের আশ্রয় নিয়ে থাকেন, আর নাম জপ করছেন, তাহলে কারও হিম্মত নেই আপনাকে ধর্ম বিরুদ্ধ হয়ে আপনার সঙ্গে কুব্যবহার করতে পারবেন। আমিও ছেলেই ছিলাম। ছোট্টবেলায় পরিবার ছেড়ে এসেছি। সকল জায়গায় উঠবস করা। কোথাও কারো সামর্থ্য ছিল না আমার প্রতি কেউ অধর্ম ব্যবহার করে। এটা আমি দেখেছি। জঙ্গলে সাপ, কাঁকড়া বিছা সব বাহির হতো, আর আমি তখন পদ্মাসনে বসে আছি। পাশ দিয়ে কালো সাপ পার হয়ে যাচ্ছে, ব্যাস নিশ্চয় করে প্রভুর নাম জপ করতে করতে বসে থাকতাম ।। যদি সাপের কামড়ানোর থাকে তাহলে আপনি যেখানেই যান, সাপ আপনাকে কাটবে। এই সাপ নয় তো অন্য সাপ কামড়াবে। আর যদি সাপে কামড়ানোর নেই, তাহলে আপনার শরীরের উপর দিয়ে চলে যাবে, কিন্তু কামড়াবে না। আমি চোখ বন্ধ করে মন্ত্র জপ করছি, আর ধীরে ধীরে সামনে থেকে সাপ পার হয়ে গেল, সাপ কিছু করলো না। কেউই এই সৃষ্টিতে আপনার একটি চুল বাঁকাতে পারবে না, আমাদের কর্মই আমাদের পতিত করে। আর যদি আমি ঈশ্বরের ভজন করছি, তাহলে সেই কর্ম কেও ভগবান আটকাবেন।

43) ১৫ কিলোমিটার দূর রাত তিনটের সময় পালিয়েছিলাম।নিশ্চয় ছিল জীবন যাবে যাক, কিন্তু বাড়ি ফিরব না। যখন বের হয়েছি, ভগবত প্রাপ্তি না হলে ছাড়ছি না।  কিন্তু দুপুর হতে হতেই মন অস্থির করছিল.. কোথায় থাকবো? ভেতর থেকে উত্তর আসে.. যেখানে ভগবান রাখুন। কেমনে থাকবো? যেমন ভগবান রাখবেন। তুমি তো কাউকে জানো না? ভগবান যেমনি রাখবেন তেমনি থাকবো। মারা যাবো, কিন্তু ফিরে যাব না। শুধু ভগবানের ভজন করব ..এটা দীর্ঘ নিশ্চয়ই ছিল। তারপর এমন অবস্থা হয়ে গেল, কোনদিন বাড়ি যাই নি। বাড়ির কোন দিন মনে আসেনি। জীবনে এত কষ্ট পার হয়েছে। কিন্তু মনে আসেনি যে.. ঘরে ফিরে যাই। ভগবানের হয়ে এসেছি, আমি ভগবানের। এটাই আমার মনের কথা। এখানে লড়তে লড়তে অবশেষে কাজ হয়ে গেল। 

44) একজন পঞ্চম শ্রেণীর বিদ্যার্থী, তিনি পিএইচডি প্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে বসে থাকলে, তিনি পিএইচডি প্রাপ্ত শিক্ষকের যোগ্যতা সম্বন্ধে কি জানতে পারবেন? তিনি হয়ত এটা বলতে পারবেন, যে শিক্ষক মশাই ভালো পড়ান। এর থেকে বেশী জানতে পারবেন না। যেদিন সেই ছাত্রও P. H.D করবেন তখন তার শিক্ষক মশাইকে মনে পড়বে, যে শিক্ষক মশাই কত মহান, কত উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। আর তিনি নীচে নেমে সাধারণ মানুষের  মতো হয়ে আমাদের মাত্রা শেখাতেন । ভগবৎ প্রাপ্ত মহাপুরুষ নিজে নীচে নেমে সাধারণ মানুষ কে শিক্ষা দেন। বাস্তবে তাদের কাউকে উপদেশ দেওয়ার দরকার পড়ে না, কারন তিনি ভগবৎ প্রাপ্ত। ভগবৎ প্রাপ্ত, এর অর্থ তিনি সর্বত্র ভগবানকে দেখেন। আর তিনি তার স্থিতিতে থেকে নীচে নেমে এসে আপনাকে উপদেশ করছেন। আপনাকে আদেশ করছেন। আপনার সেবা নিচ্ছেন। তিনি নিজের স্থিতি থেকে নীচে নেমে, আপনাকে উপরে তোলার কথা বলছেন। সন্তজনের স্থিতি সন্তজনই বুঝতে পারেন। বাহরি ব্যক্তি সেটা বুঝতে পারেন না। 

45) যাঁর জিহ্বায় হরিনাম বিরাজ করছে, তিনি মুচি, মেথর, চন্ডাল যাই হন না কেন, তিনি পরম শ্রেষ্ঠ হয়ে যান, পরম বন্দনীয় হয়ে যান। হরি কে যদি কেউ অধীন করতে পেরেছেন, আজ পর্যন্ত না কোন তপস্বী করেছেন, না কোন যোগী করেছেন, না কোন জ্ঞানী করেছেন। যদি কেউ হরিকে বশ করেছেন... "সুমির  পবন সুত পাবন নাম, আপনি বস করি রাখে রাম।" শুধুমাত্র ঈশ্বরের নাম জপ এ এমন সামর্থ্য আছে, যা হরিকে অধীন করতে পারে। 

46) লোক বলেন.. যে রাম রাম, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, বললে বা রাধারানীর নাম জপ করলে, অন্ন সংস্থান হবে? বা পরিবার চলবে? আপনার পরিবারে সদস্য কতজন? সব বিচার করে দেখুন। আপনাকে কি মনে হয়, অন্যায় করে আমাদের দিন চলে? এই পৃথিবীতে.. হারাম কাজ করে তো বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় নিঃশ্বাস টুকুও মেলে না। এখানে যেদিন আপনার পূন্য শেষ হয়ে যাবে.. তখন একটি নিশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারবেন না। আপনার জীবন শেষ করে দেওয়া হবে। এখানে হারাম করে কিছু পাওয়া যায় না। আপনি নিজের অহংকার প্রভুতে সমর্পণ করে দেখুন, আনন্দময় হয়ে যাবেন। লোকের এটাই ভ্রম যে সবকিছু আমার দ্বারা চলে। তাদের ভয় লাগে যদি আমি প্রভুর সাহারায় চলে যাই, তবে তো সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে তো তখন বাবাজি হওয়া ছাড়া উপায় নাই।  বিশ্বাস করুন আপনাকে এটা বলছি.. আপনি ইহলোক এবং পরলোকে সুখী হয়ে যাবেন, যদি নাম জপ করেন। করে দেখুন । দেখবেন পরে যখন সত্যতা বুঝতে পারবেন, তখন নিজেই আমি যা বলছি সেটা প্রচার করতে থাকবেন। 

47) আপনি যতই মালা জপ করুন, যদি চরিত্র খারাপ হয়, কোন লাভ দেবে না। যেমন.. যে কলসিতে তলায় ছিদ্র আছে, তাতে যতই জল ভরুন, পূর্ণ হবে না। ছিদ্র বন্ধ করে দিন। আর এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে জল ঢালুন, তবু একদিন কলসি ভরবে। কম ভজন হোক, তবু যদি আপনার চরিত্র ভালো, ব্যবহার ভালো এবং প্রায়ই ভগবানের নাম জপ করেছেন, তাহলে ভগবান আপনার প্রতি প্রসন্ন হবেন।

48) তাঁর সর্বনাশ করে দিই তাঁর, যিনি আমার শরণাগত কে স্বপ্নেও দুঃখ দেওয়ার কথা ভাবেন। আমি তার ভাই হয়ে যাই, আমি তার বন্ধু হয়ে যাই, আমি তার মা হয়ে যাই, সব সম্বন্ধের পোষণ আমি করি। স্বয়ং যে আমার প্রেমে আকুল হয়ে দিবা  নিশি যিনি আমাকে স্মরণে রাখেন।

49) ভগবান শঙ্কর, আর ভগবান শ্রী হরি, এঁদের  পরস্পর বলা হয় দুজন। কিন্তু বাস্তবে এক, যিনি শিব, তিনিই হরি। যিনি হরি তিনিই শিব। মহাদেবের উপাসক যদি হরির নিন্দা করেন, অথবা হরির উপাসক যদি মহাদেবের নিন্দা করেন, তাহলে তাঁর পতন নিশ্চিত। মহাদেবকে যদি জিজ্ঞাসা করেন আপনার গুরু কে? বলবেন শ্রী হরি। আর হরি কে যদি জিজ্ঞাসা করেন আপনার গুরু কে? তো তিনি বলবেন মহাদেব। দুজনের মধ্যে কোন ভেদ নেই। এটা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করুন। ঈশ্বর সব সময় আপনাকে দেখছেন। কোন ক্ষণ নেই যখন আপনি তার দৃষ্টিতে নেই। যখন নাম জপ করেছেন, ভালো ব্যবহার করছেন, তখন ভগবানের কৃপায় দুঃখ থেকে পার পেয়ে যাবেন।একদিন এমন ঈশ্বর কৃপা হবে, আপনি সর্বদিক দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাবেন। এটা বাস্তব সত্য জেনে রাখুন।

মহারাজ জি ব্যবহারিক জীবনে ব্রহ্মচর্যের নিয়ম কি? সন্তান প্রাপ্তির জন্য ছাড়া সম্ভোগ করা কি পাপ? কিন্তু যদি ধর্ম পালনে সঙ্গী সাথ না দেন, তাহলে কি হবে?

 বালক সময় এমনি আসছে যে..ধর্মগ্রন্থে যা লেখা আছে, তার থেকে কেবল... যেমন মহাভারতে মহাত্মা বিদুর বলেছেন.. যখন মাসিক ধর্ম পবিত্র হয়ে যায়, তখন পুরুষ সন্তান প্রাপ্তির ভাবনায় সম্ভোগ করতে পারেন। কিন্তু মনে করুন, সন্তান উৎপত্তির এখন পরিকল্পনা নাই, কিন্তু মনে মনে সম্ভোগের ইচ্ছা জাগছে, তাহলে এক্ষেত্রে অন্য জায়গায় যাওয়ার দরকার নেই। আপনারা স্বামী - স্ত্রী যেহেতু ধর্ম-পূর্বক একে অপরকে  স্বীকার করেছেন,তাই দুজনের মধ্যে সম্ভোগে পাপ নেই। বাইরে কোথাও গেলে পাপ হবে, বুদ্ধি ভ্রষ্ট হবে। এবং যদি দুজনে মিলে এটা জেনে যান যে.. সম্ভোগ  এর মধ্যে আসল সুখ নেই, তাহলে মিলনের অন্তরায় বাড়াতে থাকুন। দুজনেই মহান আত্মা হয়ে যাবেন।

50) মহারাজ জি সুখে বসবাসের জন্য ভালো সম্বন্ধ প্রয়োজন। সেটা হয়ে ওঠে না...

দেখুন ভালো সম্বন্ধ বলতে একমাত্র ভগবানের সঙ্গে সম্পর্কই সম্ভব, অন্য কোথাও সম্পর্ক খুব ভালো হওয়া কঠিন। কারণ যেখানে সম্পর্ক ভালো হওয়া টা চাওয়া হয়, সেখানে সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর যেখানে সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষা থাকে, সে সম্পর্ক আপন থেকেই ভালো নয়। যদি আমরা নিজের কর্তব্যের নজর দিই এবং নিজের কর্তব্য ভালো রাখি, তাহলে সব সম্পর্কই ভালো হবে। আমি জানি তিনি আমার পত্নী। তাহলে তার প্রতি আমার যে কর্তব্য সেটা সঠিকভাবে করব। আমরা বেশি ভাবি..তার কর্তব্য আমার প্রতি কি হওয়া উচিত সেটা নিয়ে। তুমি স্বামী, তোমার কর্তব্য কি? মাতাপিতা র প্রতি আমাদের কর্তব্য কি? যদি তুমি নিজের কর্তব্যের নজর দাও, তাহলে সব সম্পর্ক ভালো থাকবে। আর যখন তুমি অন্যের কর্তব্য কে দেখবে, তখন তার অর্থ তুমি নিজের ভোগের জন্য তার কাছ থেকে কিছু চাইছো। এমন ভাবলে সম্পর্ক তিক্ত হবে, এটাই বাস্তব। 

51) আমি গৃহস্থি দের প্রার্থনা করছি, কোথাও যদি কিছু বিলি  হচ্ছে, দান দক্ষিণা হচ্ছে, বা ভান্ডারা দেওয়া হচ্ছে, নেবেন না। এতে পুণ্য ক্ষয় হবে। যেমন তীর্থ পরিক্রমা হচ্ছে, সেখানে খাবার বিলি হচ্ছে, নেবেন না। বাড়ি গিয়ে খাবেন। উপবাস এ থেকে পরিক্রমা করুন। কেউ দুধ দিচ্ছেন, কেউ চা খেতে দিচ্ছেন, আপনি তো সন্ন্যাসী নন, বিরক্ত সন্ত নন, তাই সেসব দান বস্তু নেবেন না। আপনিও রোজগার করে এইভাবে কোনদিন খাবার বিলি করতে পারবেন। যদি কোন আশ্রমে যান, কোন ভোজনালয়ে যান, ফ্রিতে খাবেন না, কিছু মূল্য দিয়ে খাবেন, না হলে পুণ্য ক্ষয় হবে। পূণ্য করতে এসে ও পুণ্য হ্রাস হয়ে যাবে। 

52) ভজন কোন দিন ব্যর্থ যায় না । হোক ১০০ বার সংখ্যাই বা তারও কম।  ভজন এমন তেমন সাধারণ কিছু নয়। ভজন হল অবিনাশী। "ভক্তি বীজ পাল্টে নাহি জো যুগ যায়ে অনন্ত, উঁচু নিচ কুল উপজে হো সন্তু কে সন্ত।" একটুও ভজন যদি থাকে, তাহলে সেটা আপনাকে নীচু হতে দেবে না। 

53) নিঃস্বার্থভাবে সেবা করলে পূণ্যফল বেশি পাওয়া যায়। ধরুন আপনি কোন বড় ধনী ব্যক্তির গৃহে কাজ করতে গেলেন, আট ঘন্টায় ৫০০ টাকা আপনার মজুরি। আপনি তার কাজ করে দিলেন। তিনি যখন আপনাকে মজুরি দিতে চাইলেন, তখন আপনি বললেন আমি নেব না স্যার,আমি শুধু আপনার সেবা করতে এসেছি। জানেন? এমন বললে ধনী ব্যক্তি কি ভাববেন আপনার নিয়ে? এই লোকটি খুব ভালো। তখন তিনি অবশ্যই কিছু মজুরির বদলে দিতে চাইবেন। তার ইচ্ছে হবে টাকা যখন নিচ্ছেন না তখন অন্য কিছু এনাকে দিই। হয়ত তিনি বললেন..তাহলে আমার কোটটা নিন। তার মানে তিনি খুশি হয়ে 500 টাকার পরিবর্তে ৫০০০ টাকার কোটটা আপনাকে দিতে প্রস্তুত। ৫০০ টাকার বদলে পাঁচ হাজার টাকার কোট, এটা একটা উদাহরণ।    আমার কথা শুনুন। যদি আপনি নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা  করেন, সন্তজনের সেবা করেন, জীবের সেবা করেন, তাহলে আপনাকেও এমনিভাবে ভগবান শুধু কাজের মূল্য নয়, আপনাকে কাজের মূল্যের থেকেও বহুগুণ বাড়িয়ে উপহার দেবেন। এজন্য সেবার পরিবর্তে কিছু  চাওয়ার আশা না করাই উচিত এবং সর্বদা ভগবানের সমর্পিত থাকা উচিত। 


54) সৃষ্টির সবকিছুর নিয়ন্তা ঈশ্বর।

আপনার ভেবে কি হবে? আপনি কিছু সামলাতে পারবেন? আপনি একটি চুলও সামলাতে পারবেন না। যদি চুল ঝরে যাওয়ার সময় হয়েছে, তাহলে সেটা ঝরে যাবে। আপনি তাকে পুনরায় প্রতিস্থাপন করতে পারবেন? এটা তো ছোট্ট কথা। আপনি আপনার শরীরের একটি চুলের ও সুরক্ষা দিতে পারেন না। তাহলে পরিবারের কি সুরক্ষা করবেন? অন্যজনের কি সুরক্ষা করবেন? এর অর্থ আপনি এসবে অসমর্থ্। তাই বলি সর্বদা ওই সর্বসমর্থ্ প্রভুর ভরসায় চলে যান। তিনি আপনাকে দিয়ে কাজটি করাতে পারবেন। আপনার বাহুতে বসে আপনার হাত দিয়ে তিনি এমন কাজ করাতে পারেন যে আপনি নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন। আরে এ তো আমার দ্বারা হওয়া সম্ভবই ছিল না, তাহলে কি করে সম্ভব হল? নিশ্চয়ই এটা তাঁর হাত দিয়ে হয়েছে। সে যাই হোক না কেন,  সে বস্তু হোক বা কোন সম্পর্ক, তা সে সম্পত্তির বিষয় হোক বা শরীরের বিষয়।  

ভগবানকে সমর্পণ ভাবনা নিয়ে করুন। হে ভগবান সকল সম্পদ আপনারই। আমি তো আপনার সেবক পুত্র মাত্র। হে প্রভু। আপনি জানেন, অতএব এই কাজের সমাধান আপনি দেখুন, আপনি পথ প্রশস্ত করুন। 

55) ঈশ্বরের নাম জপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দান করতে পারেন, তীর্থ ভ্রমণ করতে পারেন, মনোরঞ্জন করতে পারেন, কিন্তু সবথেকে মহত্মপূর্ণ হলো নাম জপ। একান্তে বসে ১০ মিনিট নিরন্তর ভগবানের নাম জপ, ১০ মিনিট নিরন্তর রাধারানীর নাম জপ। শুধু ১০ মিনিট রোজ করুন। একটু একটু করে মনকে অভ্যাস করান। দেখবেন ধীরে ধীরে এমন হবে যে আপনা আপনি নাম চলতে শুরু করবে। নাম জপ করাটা তখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর যদি নাম জপ শুরু হলো, তাহলে সবকিছু হয়ে গেল। ভাগ্য খুলে গেল। আধ্যাত্মিক পথে চলার উৎসাহ শুরু হয়ে গেল। অভিমানীরা বলেন বর্তমানের বিষয়বস্তু ভোগ করুন। কিন্তু সেই ব্যক্তি খুব ভাগ্যবান যিনি এই বিষয় ভোগে চাহিদা থেকে নিজেকে সীমিত  মাত্রায় বেঁধে দিতে পারলেন। আর ভুল হতে দেবেন না।  পরমার্থের পথে চলুন। ভেবে ঠিক করুন যে সুখ হোক অথবা দুখ, যখন প্রভুতে প্রেম লেগেছে, আর প্রভুর পদ থেকে পিছপা হবো না। আধ্যাত্মিক মার্গের পথিকের মধ্যে এতটা মানসিক শক্তি হওয়া দরকার আছে।  কষ্ট আছে, বাধা আছে, তবু সামনে পা ফেলতে হবে। পা ফেলতে থাকুন ওই ধারায়,  দেখবেন ওই  'শুল' টাই 'ফুল' হয়ে যাবে। এতটাই ঈশ্বর ভক্তিতে সামর্থ্য থাকে।


56) সব থেকে প্রথম ভগবান হলেন মাতা পিতা। অন্যের পূজার আগে মাতা পিতার কথা ভাবুন। মন্দিরে যদিও নাই বা গেলেন, কিন্তু বৃদ্ধ মাতা পিতার সেবা করাটা জরুরী। তাঁর কাপড় ধোওয়া, তাঁকে খাবার দেওয়া, তাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করা, এসব। আবার বৃদ্ধ বয়সে যদিও তাঁর স্বভাব পরিবর্তন হয়েছে, যদিও তিনি কুকথা বলেন, আপনি তাঁকে ভালোবেসে কথা বলুন। যদি মাতা পিতা আপনার ব্যবহারে দুঃখ পান, তাহলে ভেবে নেবেন কপালে কষ্ট আছে। পিতা মাতাকে কষ্ট দিলে যে পাপ হয়, তা কোন তীর্থে যান, তার কোন পরিত্রাণ পাবেন না।


57)জয়ী হওয়ার লালসা থেকেই দুঃখ উৎপন্ন হয়। সুখের লালসাই আমাদের দুঃখ দেয়। জয়ী হওয়ার আশা থেকেই মৃত্যু ভয়ে আসে। কথাটা বুঝতে হবে। এটা সংগ্রাম। এই সংগ্রাম থেকে যিনি মুক্ত তিনি মুক্তি পেলেন। তিনিই মানুষ হলেন। তিনি মানব জীবনের আসল লাভ পেলেন, অন্যথা নয়। যদি আপনার লক্ষ্য হয় অন্যকে সেবা, তাহলে আপনি সুখী থাকবেন। অন্যকে দুঃখ দেওয়ার চেষ্টা হলে আপনি কোনদিন সুখী হবেন না। আমরা দুঃখ তখন পাই যখন আমরা ভাবি আমি আপনার জন্য এত কিছু করলাম, পরিবর্তে আপনি এতোটুকুও আমার জন্য করতে পারলেন না? কারণটা হলো অন্যের কাছ থেকে সুখ পাওয়ার লালসাই আমাদের দুঃখ দেয়। না হলে দুঃখ বলে কোনো বস্তু নেই।

58)আপনার কর্মই আপনাকে ফল দেবে। ফল দিয়েই ছাড়বে। কর্মকে কারো সহযোগিতার দরকার পড়ে না। আর যদি আপনি সৎকর্ম করছেন, অধর্মিকে দন্ড দেন এবং ঈশ্বরের নাম জপ করেন, তাহলে আপনাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে এমন কেউ জন্মায়নি । আপনার কর্মই আপনাকে দন্ড দেয়। অন্য কেউ নয়। দেখুন অনেক জায়গায় ক্রমশ দেখা গেছে যে.. অন্য কেউ তাঁকে মারেনি। তিনি নিজেই নিজেকে মেরে ফেলেছেন। ফাঁসি নিয়েছেন, অথবা বিষ পান করেছেন। এটা কে করায়? তার কর্মই তাকে বুদ্ধিতে বসে এটা করায়। ধর্ম এবং অধর্ম যুক্ত কর্ম থেকেই যথাক্রমে সুখ এবং  দুঃখ আসে। ভালো কর্ম, নাম জপ, ভগবানের সমর্পণ, এইসব আপনাকে সুখ প্রদান করবে, এটা বুঝে রাখুন। 


59) তন দিয়ে পরিবার সেবা, ধন দিয়ে ধর্মসেবা এবং মন দিয়ে ভগবত চিন্তন করুন। ভগবানের অংশ তো আপনিও। দেখবেন ভগবান আপনাআপনি আপনার হৃদয়ে প্রকাশিত হবেন। তার জন্য অন্য কিছু প্রয়োগ করার দরকার নেই।

60) দুঃখ তিনিই পান যিনি নিজের সুখের জন্য অন্যকে দুঃখ দেন। যিনি অন্যের সুখের নাশ করেন, মালিক তার সুখ নাশ করেন।  এই কথা প্রায়শই লোকে জানেন যে, কাউকে দুঃখ দিয়ে আপনি সুখ পেতে পারেন না, কিন্তু অবসর এলে কেউ এটা করতে ছাড়েন না। অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখ ভোগের চেষ্টা করেন। এবং সেই জন্যই তিনি দুঃখী থাকেন। ভুল করবেন না। এমন যেন না ভাবেন যে.. কেউ আপনাকে দেখছে না। যিনি দণ্ড বিধান করেন, যিনি আপনাকে দন্ড দেবেন, তিনি তো সাক্ষী রূপে আপনার ভেতরেই বসে আছেন এবং আপনাকে দেখছেন।

61) প্রতিদিনের সব কর্ম ভগবান কে অর্পণ করুন, এক মিনিটও যেন বাদ না যায়। রাতে ঘুমোনোর আগে পুরো দিনের কাজ ভগবানকে অর্পণ করুন,সমর্পণ করুন। যখন জেগে উঠলেন তখন উঠেই পুরো রাতটা সমর্পণ করুন। এক এক মিনিট সমর্পণ করুন। তাহলে দেখবেন যেমন অর্জুনের রথ এ ঈশ্বর বসেছিলেন, তেমনি ভাবে ঈশ্বর আপনার বুদ্ধিতে অধিষ্ঠান করবেন। এবং আপনাকে চলার পথ দেখাবেন। নিরন্তর ঈশ্বরের নাম জপ করুন। ছোট ছোট কোথায় দুঃখ অভিমান করবেন না। যখন কেউ এমন কথা ভাবেন যে.. আপনার দ্বারা আর সম্ভব নয়। অথবা আর কারো পরামর্শে কাজ হবে না মনে হয়, তাহলে সবকিছু ভগবানের উপর  ছেড়ে দিন, আর চলতে থাকুন। দেখবেন তিনি আপনাআপনি আপনাকে সামলে নেবেন। উনিই আপনাকে রাস্তা দেখাবেন.. কোন দিকে যেতে হবে। আপনি  ভাববেন আমি তো যাচ্ছিলাম অন্য জায়গায়, আর পৌছালাম অন্য জায়গায়। দেখবেন ঈশ্বর আপনাকে পথ দেখাবেন। হয়তো কোন ধর্মগ্রন্থ দেখিয়ে দেবেন, যাতে প্রশ্নের উত্তর আপনি পাবেন। না হয় কোন শিক্ষিত বা মহন্ত কে আপনার কাছে সাক্ষাৎ করাবেন, যেখান থেকে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পাবেন। ছোটো ছোটো কাজের জন্য আপনাকে ভগবান বুদ্ধি দিয়েছেন, তার মাধ্যমে নির্ণয় করে নিন। কি করবেন? যদি আপনি ধন হারান কিছু যায়নি। স্বাস্থ্য হারালে কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু যদি চরিত্র নষ্ট হয়, তাহলে সব গেল আর কিছুই থাকলো না।

62) কষ্ট সহ্য করার অভ্যাস করুন এবং ভগবানের নাম জপ করুন। কোন সম্মানকে ভোগ করবেন না। কেউ অপমান করলে মুচকি হাসুন। ভগবত প্রাপ্তির অনেক বড় আনন্দ আছে।  সেই আনন্দকে ভোগ করার মতো সামর্থ্য থাকা দরকার। এই জন্য কিছু অপমান, কিছু সম্মান, এসবের মধ্যে হয়ত পর হাতে হবে। এক আয়নার সাধারণ কাচকে এরকম ধাক্কা মারুন দেখবেন ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু সেই কাচকেই গরম ঠান্ডা, গরম ঠান্ডা, গরম ঠান্ডা, করে যা তৈরি হয় তা বুলেটপ্রুফ কাচ এ পরিনত হয়ে যায়। গুলি করলেও সেই কাচ আর ভাঙ্গে না। বলুন তাকে এমনি বানিয়ে দেওয়া হল, যে সেটা বুলেট প্রুফ হয়ে গেল। আপনাকে কেউ গালি দেন, নিন্দা করুন, বোকা বলুন কোন পার্থক্য পড়ে না। এমনটা হলে তবেই আমরা পরমার্থের পথিক হব। আসল লড়াইয়ের জন্য আমাদের বুলেটপ্রুফ হতে হবে। হৃদয় এখনও আমাদের কাঁচা। কাঁচা কাচ আছে যেটা মারলে ভেঙ্গে যায়। আমাদের বুলেট প্রুফ হতে হবে। 

63) আমার কথা স্বীকার করুন, ঈশ্বরের নাম জপ করলে সকল তীর্থ  আপনার কাছেই থাকবে। আমার কথা শুনুন, রাম রাম, রাধা রাধা, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, যে কোন এক নাম ধারণ করুন। এবং ঈশ্বরের ওই নাম জপ করুন। পাক্কা বলছি, আপনি উদ্ধার পেয়ে যাবেন। আগে গিয়ে আর জন্ম হবে না। 

64) আর কোন টেনশন নেবেন না। পাপ কর্ম করবেন না। আর যদি ধন চান ঈশ্বর এতই দেবেন, যে ধন চাওয়া থেকে আপনি এমনি সরে যাবেন। আপনি কেবল ঈশ্বরের নাম ভজন করুন। 


65) মহারাজ জি কি কর্ম করলে সেটাও প্রাপ্ত করা যায় যেটা ভাগ্যে লেখা নেই?

 ঈশ্বর ভজন থেকে প্রাপ্ত হবে, কর্ম থেকে নয়। যদি ভাগ্যে না থাকে, তাহলে আপনি খুব পরিশ্রম করবেন তবু আপনাকে ভাগ্য লাথি মেরে নীচে ফেলে দেবে। লক্ষ প্রয়াস করলেও আপনাকে উঠতে দেবে না। আর যদি ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে প্রয়াস না করলেও আপনি পেয়ে যাবেন। ভাগ্যকে কেটে নতুন ভাগ্য গড়া, এটা কর্ম করে সম্ভব হয় না।  সাধারণ কর্মে এত সামর্থ্য নেই যে ভাগ্য পরিবর্তন করবে। এই সামর্থ্য অসাধারণ আধ্যাত্মিক কর্মের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব। ভগবানের নাম চিন্তন, ভগবানের ভজন, পরহিত কর্ম করা, এসব কর্ম  কষ্টপূর্ণ জীবনকে কেটে নতুন ভাগ্য রচনা করতে পারে। এমন ঘটনা দেখা যায় যে যিনি ভজন করেন না, পাপাচরন করেন, তিনি অনেক চেষ্টা করেন এবং সফল হয়ে যান। উনি মেহনত থেকে সফল হচ্ছেন না। তাঁর পূর্ব কর্মের পুণ্য আছে, সেটা ফলছে। আর যেদিন সেই পূর্বপুন্য শেষ হয়ে যাবে,তাঁর একদম হঠাৎ পতন হবে, হ্যালোজেন এর মতো ফিউজ হয়ে যাবে। কারণ বর্তমানে পাপাচরণ উনি করছেন আর পূর্বের পুন্য যখন  শেষ হয়ে, যাবে তখন এবার পূর্বের পাপ এবং বর্তমানের পাপ মিলে তার পতন ঘটাবে। সবকিছু ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। এক ব্যক্তি অনেক চেষ্টা করেন কিন্তু তার সফলতা আসে না, তার এটা এখনকার প্রয়াস এবং পূর্বের পাপ, সেই পাপ প্রভাব ফেলছে। আর যেদিন বর্তমান প্রয়াস এবং পূর্বের পুন্য মিলে যাবে, সেদিন তার উন্নতি হতে থাকবে।

                                        


66) একটাই শ্লোক, কেবল একটাই শ্লোক পাঠ করুন.. "কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরামাত্মনে, প্রণত: ক্লেশ নাশায় গোবিন্দায় নামো নম:।" এই শ্লোক পাঠ বড় থেকে বড় সংকটকে যদি এমন ফুতকারে উড়িয়ে না দেয়, তাহলে আমাকে বলবেন। আপনি এর জপ করুন, এর কীর্তন করুন, মালায় জপ করুন, অনুষ্ঠান করুন, আর যদি পরিণাম দেখা না যায় তখন বলবেন। রোগ আর সংকট নিভৃতের কথা তো ছাড়ুন, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ আপনার অধীন হয়ে যাবেন।

67) পরিশ্রম করে অর্থ রোজগার করুন। যদি একশ টাকাও এভাবে রোজগার করেন, তাহলে সেটা খুব বড় বিষয়। আর অধর্ম করে লক্ষ টাকাও রোজগার করুন, তার ফল খুব খারাপ হবে। বুঝতেই পারবেন না, আর অধর্মের ধন আপনাকে সর্বনাশ করবে। পরিশ্রম করে রোজগার করা অর্থ আপনাকে শান্তি দেবে। ভগবত দর্শনের ফল এটাই যে এতে বুদ্ধি সুদ্ধ হয়ে যায়।

68) আপনি সুখ-শান্তি লাভ করবেন না, যদি আপনি পাপাচরণ করতে থাকেন। 

69) দেখুন মানুষের ভাবনা কেমন? তাঁরা ঈশ্বরকে বলেন ১০০০ টাকার ভোগ লাগাবো, যদি এই কাজটা হয়ে যায়। বন্ধু আপনি ভেবেছেন কি? ভগবান কে ভেবেছেন কি? আরে.. মহান মাতা লক্ষ্মী যার চরণ পদতলে বসে তাঁর পায়ে সেবা করেন, আপনি তাকে এক হাজার টাকা দেখাচ্ছেন? উনি তো কতজনকে কোটি কোটি টাকার ধন দিয়েছেন, তিনি জগতের মালিক। দেখুন আর আমরা কত বাচ্চার মত বুদ্ধি করি, ভগবানকে বলি.. আমার এই কাজটা হয়ে যাক আমি এটা দান করব, ওটা দান করব।

70) কতবার ঈশ্বরের নাম জপ করেন? গুরুজীর কতক্ষণ কীর্তন করেন? ভগবানের নাম কত জপ করেন? ঈশ্বরের ধ্যান কতক্ষণ করেন? আমি ঈশ্বরের নামের কথা বলছি।  "নানক নাম জাহাজ হে, চড়ে সো উতরে পার।" কতক্ষণ নাম জপ করেন? যতক্ষণ নাম জপ হবে না, মন পবিত্র হবে না। খেয়াল আসছে তো? মন মরেনি এখনো? এখনো সেই অবস্থা আসেনি তাই তো? 

নানক জী বলেছেন.. 

 "মন মরিয়া তন বসমে কিনা, হুয়া ভরম সব দূর। 

বাহর সে কছু দেখত নাহি, অন্দর চমকে নূর।

আপু ত্যাগ জগৎ মে বৈঠে, নহি কিসিসে আন,

উম্মে তো কছু অন্তর নাহি, সন্ত কহো চাহে রাম।"

71) গুরুদেব যদি কেউ কোন মাতা বোনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, বা কোন প্রকার হিংসুক আচরণ করছেন, এমতাবস্থায় আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছি, আমাকে কি করা উচিত?

যদি প্রাণের বাজি লাগাতে হয়, করুন, কিন্তু মা বোনকে রক্ষা করুন। নারীর রক্ষা করতে গিয়ে কেউ যদি আপনাকে মেরেও দেন, আপনার ভগবত প্রাপ্তি হবে। মাতা, বোন, এঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার আমাকে একদমই পছন্দ নয়। প্রাণ দিয়ে রক্ষা করুন। এই সেবার সুযোগ সবাই পায়না। যে সুযোগ রাজা দশরথ পাননি, সেই সুযোগ জটায়ু পেয়েছেন। দশরথ জি পিতা হয়েও ভগবানের কোলে প্রাণ ত্যাগের সুযোগ পাননি। তিনি পুত্র বিরহে প্রাণ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু জটায়ু রামের কোলে প্রাণ ছেড়েছেন, কারণ.. তিনি সীতাকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের প্রাণের বাজি লাগিয়েছিলেন। সীতাকে রাবণ হরণ করতে দেখে জটায়ু সর্বশক্তি দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। তিনি জানতেন যে তিনি রাবণকে পরাজিত করতে পারবেন না। তবুও প্রাণপণ দিয়ে রাবন কে আটকানোর চেষ্টা করেছেন, করতে গিয়ে আহত হয়ে শেষে রামের কোলে প্রান ত্যাগ করেন। 

72) সাধু সন্তের পদতলে মাথা ঠেকানোর অর্থ হলো, হে সন্ত মহারাজ, আমি আপনার আদেশে রাজি। হে মহন্ত আমি আপনার আজ্ঞা পালন করব। যদি সাধুর বচনে বিশ্বাস থাকে তাহলে আর তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার কি প্রয়োজন? জীবের সেবায় লেগে থাকুন। যে কাজ আপনাকে দেওয়া হয়েছে, তাকে ভগবানের সেবা ভেবে কাজ করুন। এবং ভগবানের নাম জপ করুন। তাহলে দেখবেন কোনদিনও অমঙ্গল হবে না। আর কোন দুঃখ আপনাকে পরাজিত করতে পারবে না। 

73) পুরো জীবন রোজগার করলেন, হাতে কিছুই পেলেন না। আপনি যখন চলে যাবেন, সঙ্গে কিছু থাকবে না। এই মৃত্যুলোকের রোজগার এটাই। আপনার পদ, আপনার রোজগার, আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স, জ্ঞান- বিজ্ঞান, সব ফেরত নেওয়া হবে। যখন মৃত্যুর ডাক আসবে সে সময় তাঁর সঙ্গে যা যাবে, তা হলো নিজের সুকর্ম ও কুকর্ম। এছাড়া আর কিছুই যাবে না।

74) ভ্রুণ হত্যা বা গর্ভহত্যা খুব বড় অপরাধ। এর জন্য হৃদয় জ্বলে। কেউ ভ্রূণ হত্যা করছেন, আবার অন্যদিকে যাঁর সন্তান হচ্ছে না তিনি মাথা ঠোকরাচ্ছেন ।বুঝতে পারি না যাঁরা ভ্রূণ হত্যা করেন, তাঁরা কেমন মাতা পিতা ? আমাদের আঙিনায় যখন বাচ্চারা খেলে, কেউ এসে কোন বাচ্চাকে থাপ্পড় মারলে আমাদের সহ্য হয় না। আর তোমার পেট রুপী আঙিনায় যে বাচ্চা কেবলমাত্র তোমার উপর ভরসা করে সুরক্ষিত আছে, তুমি তাহলে কি করে রাজি হলে ওই ভ্রুণকে হত্যা করতে? হোক সে ছেলে বা মেয়ে। কি করে ভ্রূণ হত্যা করো?

 অনেকে বলেন ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন, ডাক্তার বললেন.. গর্ভের বাচ্চাটা কমজোর আছে, সরিয়ে দাও। এইবার সেই ডাক্তার ও ভ্রূণ হত্যার দণ্ড পাবেন, যিনি এই পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। সেটা ভাবা তো তোমার কর্ম না। তার কর্ম। বাচ্চাকে জন্ম নিতে দিন। সৃষ্টিতে আসুক। তার কর্মের নিরাকরণ হয়ে যাবে। সে নিজের কর্ম নিজে ভুগবে, আপনিও তার সাথে জ্বলবেন।  আপনার পাপ নষ্ট হবে। আপনার মুক্তির রাস্তা খুলে যাবে। 

আবার কেউ কি বলেন? এতে জনসংখ্যা বেড়ে যাবে? তার মানে সন্তান যদি পরিকল্পনা আপনার না থাকে, তাহলে ব্রহ্মচর্য পালন করুন। 

ভগবানের প্রাপ্তির জন্য বা মোক্ষ লাভের জন্য না হোক, অন্তত জীবনকে সঠিকভাবে বাঁচানোর পথ জানতে হলে সৎসঙ্গ শুনুন।

75) যিনি আপনার পত্নী হয়েছেন তিনিও আপনার কর্মাধীন হয়ে এসে পত্নী হয়েছেন। তাই তাঁকে সঙ্গ করে জীবন নির্বাহ করুন। আপনি তো ঈশ্বর ভক্ত  সেজন্য বলছি, স্বামীকে মারবেন না, পিটবেন না। তিনি যদি উচিত কথা যদি নাইবা শুনেন, তাহলে  আমাদের শরীরে যেমন রোগ  থাকলে আমরা সহ্য করি, তেমনি মান্য করে প্রতিকূলতাকে সহ্য করার জন্যই ভগবান আপনাকে এমন জীবন সাথী দিয়েছেন, এরকম ভাবলে সেটাও ভজন হবে। আপনার ভাব হবে। আর যদি না মানেন, তাহলে প্রতিদিন এই ঘরে থেকে তার সঙ্গে জ্বালা আর দ্বেষ করুন। ভজন হওয়া সব চলে যাবে, কোন রাস্তা বেরোবে না। 

76) সবকিছুই নাম জপ থেকেই প্রকট হবে। আপনি শুধু নাম জপ করে দেখুন। এই জন্মে এক নিয়ম নিন যে আমি ভগবানের নাম জপ ছাড়বো না, দেখবেন আপনার জীবনে কি পরিবর্তন আসছে। বড় জোর পরিবর্তন আসবে। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। 

77) কোন দেবতা, কোন ভূত, কোনো পিশাচ, কেউ আপনার খারাপ করতে পারবে না। কোন তান্ত্রিক, কোনো সিদ্ধ, কেউ কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না, যদি না আপনার কর্ম খারাপ থাকে। যদি আপনার কর্ম খারাপ না থাকে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কারো হিম্মত নেই যে আপনাকে দন্ড দিতে পারে। কারণ ভগবান হলেন শাসনকর্তা। কেউ যদি তপস্যার প্রভাব আপনার উপর ফেলতে চান, পারবেন না। মাঝে ঈশ্বর এসে দাঁড়াবেন এবং রক্ষা করবেন। ধরুন কেউও একবারও ভজন করেন নি, কিন্তু তিনি নিষ্পাপ। তিনি কোনো অপরাধ করেননি। দেখবেন কোন না কোন রূপে ভগবান এসে দাঁড়িয়ে রক্ষা করে যাবেন। এই জন্যই তাঁর আর এক নাম ঈশ্বর। সম্পূর্ণ জগতের শাসন তাঁর হাতে। উনি সর্বত্র এবং সবার মধ্যে বিরাজমান। আপনার খারাপ কর্মই আপনার খারাপ করতে পারবে। অন্য কেউ পারবেনা। 

78) পাহাড় প্রমাণ তুলো জমা থাকলে সেটাকে আগুন জ্বালাতে পাহাড় প্রমান আগুন লাগে না, একটি ছোট্ট আগুনের টুকরাই যথেষ্ট। জ্বলে পুরোটা ভস্ম হয়ে যাবে। তেমনি পাহাড় প্রমাণ পাপ থাকলেও ভগবান এর এক নামই তাকে জ্বালিয়ে দিতে যথেষ্ট। যেমন দুটি কাঠের টুকরো ঘসলে আগুন তৈরি হয়, যখন রাম নাম চলে,বা রাধা রাধা নাম চলে, তখন সেটা থেকে জ্ঞানাগ্নি  সৃষ্টি হয়। ভক্তির প্রেমাগ্নি সৃষ্টি হয়। সেই অগ্নি হৃদয়ে  সঞ্চিত সকল পাপকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়। যাঁদের ভগবৎ কৃপা হয়েছে, যদি তাঁদের পাপের নথি দেখা হয়, দেখবেন শুধু পাপ কাজের পাহাড় আছে, কিন্তু অন্তিম সময়ে ভুলবশত তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা 'নারায়ন' নাম বলা ব্যক্তি ভবসাগর থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং উল্টা ভাবে 'রাম,' না বলে মরা মরা বলতে থাকা দস্যু রত্নাকর ব্রহ্মর্ষি হয়ে গেছেন। যদি এত বড় পাপীকে ভগবান কৃপা করেছেন, তখন আমরা তো তাঁদের একের চার অংশও নই, আমাদের ভগবান অবশ্যই স্বীকার করে নেবেন। 

79) অন্যকে যদি দুঃখ দেন, তাহলে আপনি যতই সামর্থ্যবান হন না কেন, ওই অন্যকে দেওয়া দুঃখ এত বলবান হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসবে এবং আপনাকে এমন ভাবে পীড়িত করবে যে ..কোন সাহায্য পাবেন না। পাক্কা বলছি,দেখবেন, কেউ তখন সাহায্য করবে না। তাই বলি অন্যকে দুঃখ দেবেন না ।

80) যেদিন মারা যাবেন, সেদিন মারা যাবেন। যেদিন যে ঘটনা ঘটার আছে, সেদিন তা হবে। তার জন্য চিন্তা করবেন না। হরির স্মরন করুন । আমি তো একটাই কথা বুঝি, হে ঈশ্বর আপনি যেটা করতে চান, সেটাই হবে। আর আপনি না চাইলে হবে না। এই জন্য আমি আপনার স্মরণাগত হয়ে নিশ্চিত আছি। 

81) ভগবান বড় মঙ্গলময়। ভগবান বড় কৃপালু। তিনি যা করেন, মঙ্গলই করেন। ভুল আমাদের দ্বারা হয়। সংশোধন ভগবান করেন। পাক্কা পাক্কা বলছি, বিশ্বাস করে নেন। ঈশ্বরের কখনো ভুল হয় না। যিনি বলেন আমি কি খারাপ করেছি? আমার কেনো এমন হলো? আমার ছেলেকে ভগবান মেরে দিলেন? না আসলে এমনটা হয় না। কোনদিন ভগবানে ভুল হতে পারে না। ভুল আপনার হয়েছে। আসলে আপনার সন্তানের জীবন কর্মফল হিসাবে তাঁকে অল্পটুকু সময়ের জন্য এই সংসারে থাকার ছিল। তাই  অল্পায়ু হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। 


একটি ঘটনার কথা বলি, মহাভারতের ঘটনা। এক মহান তপস্বিনী ছিলেন। তাঁর নাম গৌতমী ছিল। তাঁর এক পুত্র ছিল। একদা পুত্র খেলতে গিয়েছিল এবং সেখানে তাকে সাপে দংশন করলো। বিষধর সাপের দংশনে তাঁর পুত্রের মৃত্যু হল। তার মৃত্যু হলে বনের বাসিন্দারা গৌতমীকে খবর দিলেন যে.. তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সাপের দংশনে তিনি মৃত পুত্রকে দেখে খুব দুঃখিত হলেন। তিনি তপস্যা বলে মন্ত্র দ্বারা সাপকে আকর্ষণ করলেন, তো সাপ সামনে চলে এলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তুমি আমার ছেলেকে কামড়ালে কেন? সাপ বলল.. দেখুন আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন, আপনি তপস্বী, কিন্তু আপনার পুত্রকে আমি মারিনি, আমার উপর মৃত্যু ভর করে, মৃত্যু কাজটা করিয়েছেন। গৌতমী বুঝলেন কথাটা ঠিক। তিনি মন্ত্র দ্বারা মৃত্যুকে আকর্ষণ করলেন। মৃত্যু এসে বললেন, না আমার কোন দোষ নেই। আমাকে কাল প্রেরিত করেছেন। সেজন্য আমি সাপকে প্রেরিত করেছি। গৌতমী কাল কে আকর্ষণ করলেন। কাল এসে বললেন.. আমার অপরাধ নেবেন না। আমাকে এই ছেলের কর্ম প্রেরিত করেছে। কর্ম থেকে প্রেরিত হয়েছে কাল, তাহলে হিসাব করলে দেখা গেল.. বালকের কর্মই বালক এর মৃত্যুর কারণ। গৌতমী সব বুঝতে পারলেন এবং শান্ত হলেন।

 কথা হলো আমরা ভগবানকে দোষী করি যে.. তিনি আমার সবকিছু লুটে নিলেন। সব কিছু নিয়ে নিলেন। এগুলো অজ্ঞানতার কথা। ভগবানের দ্বারা কারো প্রতি কোনদিন অহিত হয় না। সূর্যের ক্ষমতা নেই যে অন্ধকার সৃষ্টি করবে, সূর্য যেখানে থাকবেন অন্ধকার হবেই না। যে পুতানা রাক্ষসী বালক কৃষ্ণ কে দুধ পান করানোর নাম করে বিষ পান করাতে গেলেন, তাঁরও পুরো সদগতি হয়েছিল, যে সদগতি যশোদা মা পেয়েছিলেন। যিনি ভগবানের প্রতি বিদ্রোহ করেছেন, তাঁরও যদি উদ্ধার হয়, তাহলে যিনি ভগবানের কাছে শরণাগত, তাঁর উদ্ধার হবে না কেন ?

82) দেখবেন,  যদি দুঃখ পান, কারণ ধর্মের প্রতি চলতে চাইলে পাপ এসে বাধা সৃষ্টি করে। যেকোনো রূপে এসে আপনাকে ধর্ম পথ থেকে আটকানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু যদি আপনি তবুও এগিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে আগে গিয়ে সুখই সুখ আছে। 

83) যতই অপরাধ হোক না কেন, যদি আপনি গুরুর স্মরণে থাকেন, ভগবানের স্মরণে থাকেন এবং প্রভুকে ক্ষমা চেয়ে নেন যে.. প্রভু আমার ভুল হয়েছে, সামনে আর ভুল হবেনা এবং নিয়ম মেনে গুরু প্রদত্ত ঈশ্বরের নাম জপ করতে থাকেন, তাহলে ভগবান সব ভুল ক্ষমা করে দেবেন, আর সেই কুকর্মের ফল.. না এখানে ভুগতে হবে, না সেখানে ভুগতে হবে।

84) আমরা ভাবি দেখুন, ওই ব্যক্তি আমাকে জীবন ভর দুঃখ দিয়েছেন। আসলে আপনার কর্মই আপনাকে সারা জীবন তার মাধ্যমে দুঃখ দিয়েছে। যদি আপনার কর্ম আপনাকে দুঃখ দিয়েছে, তাহলে ওই বেচারীর দোষ কি? আমাদের কর্ম আমাদের সুখ দুঃখের কারণ। তাই সবাইকে প্রার্থনা করে বলি.. দেখুন, আপনি সাধু-সন্তের কাছে যাচ্ছেন, এর অর্থ হলো কিছু না কিছু ঈশ্বরের কৃপা আপনার প্রতি আছে, ভগবানের প্রতি আপনার বিশ্বাস আছে। এই জন্যই বলছি.. প্রভুতে আশ্রয় এবং নাম জপ, এই দুইই হল যা আপনাকে কোনদিন ব্যর্থ হতে দেবে না। যদি আপনি এই দুই কথা স্বীকার না করেন, আপনি যাই করুন না কেন, শেষে আপনাকে অশান্তি, অসন্তুষ্টতা এবং দুঃখ ভোগ করতে হবে। স্থিতি যাই হোক না কেন, ভেঙ্গে পড়বেন না, কোনদিন হার মানবেন না। কারণ কোন সময় সম্পত্তি যোগ হয়, কখনো বিপত্তি যোগ হয়। কখনো জয় হয়, কখনো পরাজয় হয়। এই দুই রকমই ঘটনা জীবনে চলতেই থাকে। তিনি যাই হন না কেন, সবার জীবনে এটা আসবে কিন্তু আমাদের উৎসাহ সম্পন্ন হতে হবে। এর জন্য ঈশ্বরের স্মরনাগতি দরকার। ভেতরে নাম জপ চলছে, সদাচার করছেন, অন্যের প্রতি সেবা ভাব রেখেছেন, তাহলে  দেখবেন ধীরে ধীরে আপনি উন্নতি লাভ করবেন ।

85) এটা পরিষ্কার যে অন্যকে সুখ দেওয়ার ভাবনা সর্বদাই করবেন, দেখবেন তাহলে আপনার পরিবার সুখী থাকবে। এটা আমি ভেতরের কথা বলছি। আমি আপনাকে বলছি আমাদের ভুল কি হয়.. আমরা নিজেকে, নিজের পরিবার কে, সুখী করতে গিয়ে অন্যদের দুঃখ দিই। ব্যাস এই জন্যই আমাদের পতন হয়। এবং সিদ্ধান্ত হলো এই যে.. যিনি অন্যের সুখের কথা চিন্তা করেন, সর্বদা সজাগ থাকেন,যে.. আমার ক্রিয়া দ্বারা কারো যেন দুঃখ না পৌঁছায়, সুখ পৌঁছায়, তাহলে নিশ্চিত তাঁর মঙ্গল হবে। 

86) ভগবৎ নামে অপার সামর্থ্য আছে। যদি এটা ভাবেন যে আমার মন লাগে না, আমার ওর মধ্যে রুচি নেই, তাহলে যে নাম জপ করছেন... তার কি ফল পাওয়া যাবে? 

হ্যাঁ, রুচি না লাগলেও নাম জপ থেকে ততটাই ফল পাওয়া যাবে। মন না লাগলেও কোনো অমঙ্গল হতে পারে না। যাঁর মুখে ভগবানের নাম জপ চলছে, হয়তো মন লাগছে না, হয়তো তিনি তমগুণী স্বভাবের,  তিনি যাই হন, নামের সাথে এর কোন লেনাদেনা নেই। নাম জপ তার প্রভাব দেখাবে। যেমন কেউ যদি ভালোবেসে অমৃত খান, অথবা কাউকে যদি জোরজবস্তি অমৃত খাওয়ানো হয়, বা শ্রদ্ধা দিয়ে অমৃত খান,তিনটিতেই একই ফল হবে। তিনি অমর হবেন।

কেউ ছল করে বিষ পান করান, অথবা জবরদস্তি বিষপান করান, অথবা কেউ ভালোবেসে বিষ পান করেন। বিষের প্রভাব  তাকে মেরে ফেলবে, কারণ বিষের কাজ হল মেরে ফেলা। তেমনি কেউ কাউকে জবরদস্তি নাম জপ করেন, বা ভালোবেসেই ঈশ্বরের নাম জপ করুন, বা কারো প্রেরণায় নাম জপ করুন। সেই নাম তার প্রভাব ফেলবে এবং তাকে উদ্ধার করবে। কোন অবস্থাতেই নাম জপ তার প্রভাব ছাড়ে না। 


                                                         ------------------------------------

উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like  এবং Share করুন।


আরো পড়ুন:Ratan Tata, Mukesh Ambani, Azim Premji, Gandhiji, Mandella, Kalam's Quotes

                      Motivational And Inspirational Quotes For Success

                      Dan Lok's Advice  For Success ,   14 Risks you must take for Success

                      চিন্তন করুন এবং সফল হন ,  কেন করবেন ? সেটা জেনে তবেই কাজটি করুন , 

                      জীবনে কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর প্রভাব , বাধার মধ্যে দিয়ে পেরিয়েই সফলতা আসে ,

                      অহংকার হলো চরম শত্রু , আত্মজ্ঞান কি , শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সার ,

                     আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ , 

                সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,

                ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , 

                মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস , Teachings of Premananda Maharaj-1

                ব্যবসার জন্য মুদ্রা লোন PMMY  Loan ,  Inner Engineering by Sadguru Jaggi Vasudev



For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com


Post a Comment

0 Comments