কর্ম কি?মানুষের জীবনে কর্ম এর প্রভাব, জীবন থেকে, জন্ম জন্মান্তর থেকে মুক্তির পথ(Karma,Effect of karma in life and Liberation.)

 কর্ম চার ধরনের ।এক হলো সঞ্চিত কর্ম।এত জন্ম জন্মান্তরের পর আপনার যে মোট কর্ম  সঞ্চিত হয়ে আছে তা হলো সঞ্চিত কর্ম।এটা হলো আপনার সমস্ত কর্মের গুদাম ঘর।এই টোটাল সঞ্চিত কর্মের মধ্যে কিছু অংশ কর্ম যা এই বর্তমান জন্মের জন্য বন্টিত হয়েছে তা হলো alloted কর্ম বা প্রারব্ধ কর্ম।……

আমাদের এই যে জীবন, এই জীবন রূপী গাড়িকে কে চালায়? সেটা চলেই বা কিভাবে? এই দেহ রূপী যন্ত্র কিভাবে কাজ করে? 

কেমন করে এর দিক এবং গতি নিয়ন্ত্রণ হয়? কে একে চালায়? কর্ম কি? কর্ম ফল কি?,কর্ম কিভাবে কাজ করে? জীবের উপর কর্মের প্রভাবই বা কি? কর্ম সম্বন্ধে আজ সবকিছু জানবো এই আলোচনায়।

আমরা দেখেছি..অনেকেই মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা, ন্যায় পথে চলা এবং স্বাধীনতার কথা বললেন, কিন্তু নিজের জীবনেই নিয়ন্ত্রণ নেই,বা খুব সামান্য নিয়ন্ত্রণ আছে।এই যে জীবনের যাত্রা এতে দেখবেন বেশির ভাগ লোক দাবার নিষ্ক্রিয় গুটির মত।তাঁর নিয়তি তার অজান্তেই নির্মিত হয়। 

এই জন্য কর্মকে জানা দরকার। কর্ম হলো একটি মাত্রা যা আপনাকে চক্রাকারে এখানেই নিয়ে আসে। আপনাকে যেখানে সর্বদা থাকা দরকার, তা হলো শরীর রুপী গাড়ির ড্রাইভারের সিটে,যাত্রীর সিটে নয়।

কর্ম শব্দের অর্থ কি? এর অর্থ হলো কাজ করা। এর অর্থ কোন বস্তু নয়, এর অর্থ এমন কিছু নয় যা এই পৃথিবীর বাইরে থেকে করতে হয়। সেটা পাপকর্ম হোক বা পুন্যকর্ম সব এখানেই করতে হয়। এই পৃথিবীতেই করতে হয়। কর্ম হল তিন স্তরের ক্রিয়া। শরীর, মন এবং শক্তি স্তরে এই তিন স্তর দিয়েই কর্ম করা হয়।

আপনি এই তিন স্তরে যেখানেই কাজ করুন, এর 

কিছু না কিছু প্রভাব আপনার উপর পড়ে।

আপনার পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয় সর্বদা বাইরে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। আপনি সবসময় বাইরে থেকে উত্তেজনাময় বস্তু দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকেন এবং সময় সময় এই প্রভাব এতটাই হয় যে সেটা আপনার মধ্যে আলাদা ছাপ ফেলে। এবং সেই ছাপ ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয়। সেটা বেশিদিন চলতে থাকলে ওই ছাপ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে যায় এবং সেটা আপনার চরিত্র হয়ে যায়।

যদি এটা উল্টো ভাবে বলি আপনার মন পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে যে সকল অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে সেটা তার মত করে মনের ভেতর আকার নেয়। এবং সেটাই কর্ম হয়ে যায়। জীবনের একটি ধরন তৈরি হয় এবং সেটি আপনি নিজেই করেন। এই ধরনটাও অজ্ঞাতে তৈরি হয় এবং এই প্রবণতা কি করে তৈরি হয়, সেটা বোঝা যায় না।

সময় চলতে চলতে সেটার অজ্ঞাতে যে অভ্যাস, যে আধার, যে প্রবণতা, আপনি জোগাড় করেন সেটাই এই কর্ম।

আপনি যেভাবে শারীরিক মানসিক এবং শক্তি দিয়ে কাজ করেন সেভাবেই চরিত্র গঠন হয়। যাকে সফটওয়্যার বলা চলে, এক ধরনের অভ্যাস।

একবার সেই অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে, সেই সফটওয়্যার তৈরি হয়ে গেলে, আপনার সব পদ্ধতি ওই সফটওয়্যারের হিসেব মেনে চলতে শুরু করে। যতই সময় পার হয়, আপনি আপনার সঞ্চিত অতীতের হাতের পুতুল হয়ে যাবেন।


কেউ যদি সচেতনতা সঙ্গে ওই কার্মিক স্বভাবকে অর্থাৎ ওই সফটওয়্যারকে আবার নতুন ভাবে লেখার শুরু না করেন, তাহলে এমন মনে হয় যে ওই নমুনা তাঁকে আপনা থেকেই কর্ম করাচ্ছে। তিনি নিজে থেকে কিছু করতে পারেন না, অভ্যাসের দ্বারা চালিত হন।

এই সফটওয়্যার কিন্তু ভাগ্য নয়, এমন নয় যে ভাগ্য তাকে চালিত করে এবং আপনি যদি চান এই সফটওয়্যার কে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

এই সফটওয়্যার কে আবার পুনরায় লেখা যায়। পুরনো সফটওয়্যার ছেড়ে নতুন অভ্যাস রুপি সফটওয়্যার তৈরি করা যায়। সেটা কিভাবে তৈরি করা যায়, তা এই বইয়ের সার বস্তুতে আমরা শিখব।

আমরা বাইরে থেকে যে জিনিসই শুনি, অনুভব করি, এই সবকিছুই শরীরে ছাপ ফেলে যায়। সেটা একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা শরীরের মধ্যে ঘটে। যখন আপনি পাহাড় দেখেন শরীরে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়, অন্যরকম রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে। আবার যখন আপনি একটি সিংহকে দেখলেন তখন এক অন্য অনুভূতি আসবে এবং অন্যরকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটবে। এমন ভাবে সকল মানসিক উতার-চড়াও শরীরের অন্য অন্য ভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এবং তার অনুভূতি ও আলাদা আলাদা হয়।

এসব ব্যাপার আমাদের জানা নেই, এ সব অনুভব ছাপ তৈরি করে আমাদের অবচেতন মনে বসে যায়, সেজন্য শ্বাস নেওয়া টাও একটা কার্মিক পদ্ধতি, যেটা আমরা বুঝতেই পারি না। এজন্য সচেতন মন হল কার্মিক স্মৃতির মিলিত রূপ।

এইজন্যই কর্মের বোধ বাইরের জিনিস নয়, এটা কোন দোষ বা শাস্তিরও হিসাব নয়। এটি আপনার মধ্যে তৈরি হওয়া অপরাধ এবং শাস্তির চক্র।

আপনার কাছে চাকুরী থাকতে পারে, নতুন ঘর থাকতে পারে, নতুন জীবন সাথী, নতুন সন্তান, সব হতে পারে। আপনি নতুন দেশে যেতে পারেন কিন্তু ভেতর থেকে সেই চক্রই অনুভব করবেন।

ভেতরের সেই উতার চড়াও, সেই ব্যবহার, সেই মানসিক প্রতিক্রিয়া, সেই প্রবণতা যেভাবে আপনার কার্মিক সফটওয়্যার তৈরি আছে।


কেউ যদি দুর্ঘটনায় মারা যান, তাহলে তাঁর কর্মের সম্পূর্ণ বিনাশ হয় না। তাঁর মাথা ফেটে চুর হতে পারে, কিন্তু কর্ম চলতে থাকবে। এমনই ভাবে কার্মিক পদ্ধতি চলতে থাকে।

এই যে ভৌতিক শরীর আছে, যৌগিক পদ্ধতিতে একে বলা হয় "অন্নময় কোষ"। আবার যে মানসিক শরীর তাকে বলা হয় "মনোময় কোষ" এবং এনার্জি বডিকে বলা হয় "প্রাণময় কোষ"। এর ভেতরেও একটা শরীর আছে যাকে বলা হয় "সূক্ষ্ম শরীর"। এবং সূক্ষ্ম শ্রেণীর ভেতরে যে শরীর তাকে বলা হয় "আনন্দময় কোষ"।

কর্মের সংগ্রহ প্রথম তিন স্তরের শরীরে হয়, ভৌতিক, মানসিক এবং শক্তিমান শরীর বা এনার্জি বডি। এইজন্য আপনার শরীর যদি ভেঙ্গেও যায় আপনার মন,এবং জীবনী শক্তি এতে কর্মের ছাপ কম্পিউটারে থাকা হার্ড ডিস্ক এর মত বেঁচে থাকে। কম্পিউটার খারাপ হলেও যেমন হার্ডডিস্ক এ তার ডাটা কালেক্টেড থাকে, তেমনি শরীর মরে গেলেও মন এবং জীবনী শক্তির মধ্যে কর্মের ছাপ সঞ্চিত থাকে।

এই ব্যাকআপ সিস্টেম এতটাই শক্তিশালী যে আপনার শরীর যদি চলেও যায় আপনার মনোময় কোষ কর্মকে মনে রাখে। আপনার যতই সঞ্চিত কর্ম আপনার পাশে আছে, আপনি যখন সূক্ষ্ম শরীর এবং আনন্দময় কোষ এর দিকে আসেন তখন সেই কর্ম আপনাকে ছুঁতে পারেনা।


কর্ম এবং কারণ বা ফল শুধুমাত্র ভৌতিক, মানসিক এবং প্রাণময় স্তরে থাকে, তার পরে সূক্ষ্ম শরীর এবং আনন্দময় শরীরে কর্মের কোনো প্রভাব নেই।

যখনই আপনি পরম দিব্য এর স্বাদ পান, তখন আর আপনার উপর কর্মের প্রভাব থাকে না।

দেখা গেছে আপনি শরীর মন বা আত্মশক্তি দিয়ে যাই করেন, সেটাই একটা আপনার মধ্যে ছাপ ছেড়ে যায়। ওই ছাপ জুড়ে প্রবণতা তৈরি হয়। এই প্রবনতাকেই পুরনো পদ্ধতিকে 'বাসনা' বলা হয়। যে বাসনা শারীরিক মানসিক এবং মনোভাব এর মিলিত ছাপ থেকে উৎপন্ন হয়।

আপনার বাসনা আপনার কাছে যে কার্মিক স্মৃতি এবং কার্মিক বস্তু আছে তার উপর নির্ভর করে।

কিন্তু সব ব্যক্তির জন্যই সম্ভব যে তারা অনেকটা সীমা পর্যন্ত নিজের বাসনার শিকার না হয়ে বাসনাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। তবে সেটা নির্ভর করে ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা কতটুকু আছে তার উপর। অল্পটুকু সচেতনতা এক ব্যক্তিকে এর স্বভাবকে নিজের পছন্দে এবং শত ইচ্ছা কে সচেতনায় ইচ্ছানুসারে বদল করতে পারেন।

মনে করুন যদি আপনার মনে অনুভব হয় যে সে হয়তো আমার জন্যই তৈরি হয়েছে। এই অনুভবের অর্থ আপনি তাকে অসচেতনভাবে নিজের করতে চাইছেন। আপনার সফটওয়্যার যেহেতু আপনি নিজে লিখেছেন এবং আপনি ওই সফটওয়্যার এর হিসাবে চালিত হয়ে আপনি ভাবছেন। এবং ওই সফটওয়্যার এর প্রভাবেই ওই অনুভূতিও আপনি অনুভব করছেন এবং সেই ভাবেই আপনি তার প্রতি পদক্ষেপও নিচ্ছেন। মনে হচ্ছে যেন আপনি ঐ বস্তু বা ব্যক্তিকে আকর্ষণ করছেন।


কিছু লোক সব সময় আনন্দের অবস্থাকে আকর্ষণ করেন এবং কিছু লোক সব সময় দুঃখকে আকর্ষণ করেন এবং এই যে ঘটনা ঘটে সেটা নির্ভর করে আপনি কেমন ধরনের কার্মিক সংস্কার নিজের মধ্যে যোগ করেছেন তার উপর।


যদি আপনি সামাজিক কল্যাণ বাড়ানোর কাজ করছেন, তাহলে তো সম্মিলিত শক্তি তৈরি হয়। কিন্তু আপনি যদি শুধু নিজের লাভের জন্যেই ভাবেন, সমাজের জন্য নয়, তাহলে সেটা বন্ধন তৈরি করে। এমনিভাবে মানুষ বাসনা অনুযায়ী নিজের অজান্তেই মুক্তির পথ পছন্দ করে, অথবা দাসত্বকে স্বীকার করে।


কর্মের ভিত:-

আপনি কি রকম কর্মসংগ্রহ করবেন তা নির্ভর করে আপনার মনোবৃত্তির উপর, কর্মের প্রভাবের উপর নয় অথবা অন্য কারো প্রভাবে নয়।

আপনার মনোবৃত্তি টাই পার্থক্য গড়ে তোলে, কেউ যদি কাউকে ভালোবেসে সম্মান করেন অথবা কাউকে খারাপ ব্যবহার করে, দুটোই হয় দুজনের কর্মের হিসাবে। যদি আপনি  নিজের লাভের জন্য অন্যকে প্রভাবিত করেন তাহলে সেটা ভুল কর্ম হয়। এবং এর ফলটাও খারাপ করে।


নিয়ম ভাঙার বীজ:-

একদিন সন্ধ্যাকালের ঘটনা। দুই বন্ধু একসঙ্গে চলছিল তারা প্রতি সপ্তাহে বেশ্যার কাছে যেত। একদিন যখন দুজনেই বেশ্যার ঘরের দিকে যাচ্ছিল তখনই রাস্তায় ভগবত গীতার প্রবচন শুনতে পায়। তাদের মধ্যে একজনের মনে হলো আমি যা করছি ভুল করছি। তাই সে বেশ্যার কাছে না গিয়ে ভাগবত পাঠ শুনতে সিদ্ধান্ত নিল।

অন্যজন তাকে ছেড়ে একলাই বেশ্যার কাছে গেল।

যে ব্যক্তি ভাগবত পাঠের কাছে বসে ছিল, সে মনে মনে ভাবছে যে তার বন্ধু বেশ্যার কাছে গিয়েছে, আমিও গেলে ভালোই করতাম। সে এখন কত আনন্দ নিচ্ছে। তার মনে হল ভাগবত পাঠ না শুনে বেশ্যার কাছে যাওয়াটাই ভালো ছিল।

অন্যদিকে দ্বিতীয় ব্যক্তি যে বেশ্যার কাছে গেছিল তার মন পুরোটাই তার বন্ধুর কাছে ছিল। যে বন্ধু তার ভাগবত পাঠ শুনছিল। সে তার প্রবন্ধুর প্রশংসায়  ভরে গেল। ভাবল সেও ভাগবত পাঠ শুনতে গেলে ভালো করত। তার বন্ধু কাম প্রবৃদ্ধি ছেড়ে মুক্তির পথ গ্রহণ করেছে। আর সে এখন বেশ্যার কাছে এসে ভুল করছে। এই গল্পটি প্রায়ই রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব তাঁর শিষ্যদের শোনাতেন।

এই ঘটনার কর্মফলের বিশ্লেষণে দেখি.. যে ব্যক্তি প্রবচনে ছিল সে বেশি দুষ্কর্ম সংগ্রহ করে কারণ সে সর্বদা বেশ্যাকে নিয়ে ভেবেছে। এবং যে ব্যক্তি বেশ্যার কাছে গিয়েছিল তার খারাপ কর্ম তুলনামূলক ভাবে কম হলো। কারণ সে বেশিরভাগ সময় টাই ভাগবত প্রবচন নিয়ে ভেবেছে।

যেহেতু কর্মের অর্থ শরীর মন এবং আত্মশক্তি তিনটি দিয়ে হয় সেই জন্যই এই ফলটি হয়েছে।


যে ব্যক্তি বেশ্যার পাশে গেল সে বেশ্যা নিয়ে বেশি ভাবেনি, তাই তার কর্ম কম। কিন্তু যে ব্যক্তি বেশ্যার কাছে যাওয়ার ছিল কিন্তু বেশ্যার পাশে যায়নি, প্রবচনের পাশে ছিল, কিন্তু সে বেশি হিসেব করছিল বেশ্যাকে নিয়ে, তাই তার কর্ম বেশি।

এই কাহিনী শিক্ষা দিয়েছে যে খারাপ চিন্তন করলেও কর্ম তৈরি হয়।

এমনিভাবে আপনি যদি মনে মনে কারো খারাপ ভাবেন, বা কোন দুষ্কর্ম ভাবেন, তাহলে সেটাও কর্ম তৈরি করে।

অন্যদিকে আপনি কারো ক্ষতি বা ভুল করেও পরে অনুতাপ যদি হয় এবং মনে মনে তার ভাল চান তাহলে কর্ম কমে যায়।

এই কাহিনী থেকে বোঝা যায় কর্ম বলতে শুধু বাহিরের ক্রিয়া নয় মানসিক ক্রিয়া ও বটে। 

কেউ ভাবেন দান, দক্ষিণা এসব ভালো কর্ম বুঝায়। কিন্তু কর্মের বিচার তা থেকেও সূক্ষ । এই জন্যই সব ধর্ম প্রেমের কথা বলে। যদি নিজেকে ভালোবাসতে জানেন, তাহলে অপরকেও ভালবাসতে জানবেন।

যখন আপনি সবকিছু প্রেম দিয়ে দেখেন তখন সবকিছু আপনার সঙ্গে আপনা আপনি সম্মিলিত হয়। এবং আপনার প্রবণতা তে পার্থক্য গড়ে। যদি আপনি কাউকে প্রেমের সহিত কিছু বলেন এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি সুখী হন, তাহলে তাঁর কর্ম হলো, আপনার নয়। কিন্তু যদি আপনি কাউকে ঘৃণা ভাবে কিছু বললেন এবং উনার আপনার প্রতি সন্তাপ নেই, বা দুঃখ নেই। তাহলে তখন সেটা উনার জন্য ভালো কর্ম, আপনার জন্য খারাপ। তখন আপনি ন-কারাত্মক কর্ম পাবেন।


অর্থাৎ আপনি যদি সুখ দুঃখ, জয়-পরাজয়, শান্তি অশান্তি সবেতেই অবিচলিত থাকতে পারেন তাহলে আপনার অনেক কর্ম ক্ষয় হবে, আপনি মুক্তির পথে এগিয়ে যাবেন।

এবং আপনি যদি কোন কর্ম সম্মিলিতভাবে করেন অর্থাৎ আপনি এমন কর্ম করেন যে কর্মের ফল সার্বিক কল্যাণ করবে, সমাজের কল্যাণ করবে তাহলে আপনার কর্ম ক্ষয় হবে এবং আপনি মুক্তির পথে এগিয়ে যাবেন।


একটি ঘটনাকে ধরা যাক:-

1)ধরুন আপনি ছুরি দিয়ে খেলা করছেন এবং ঘটনা বশত অজান্তে ছুরি দিয়ে কাউকে আঘাত লেগে গেল এবং তিনি মারাও গেলেন। এটা একরকম কর্ম।

2) দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনার কারো সাথে ঝগড়া হলো, যেখানে আপনি সবজি কাটছিলেন মাথা গরম হয়ে আপনি তাকে ছুরি আঘাত করলেন, এবং তিনি মারা গেলেন।

3) তৃতীয় ক্ষেত্রে আপনি পরিকল্পনা করলেন কিভাবে তাকে মারবেন। আপনি তাকে অনুসরণ করে সুযোগ পেতেই তাকে ছুরি আঘাত করলেন এবং তিনি মারা গেলেন।

4) চতুর্থ ক্ষেত্রে আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব করলেন। তাকে বন্ধুর মতো রাত্রিকালীন আহারের জন্য নিমন্ত্রণ করলেন, তার পাশে বসলেন এবং তার পিছন থেকে হঠাৎ ছুরি দিয়ে আঘাত করে তার গলা কেটে দিলেন। এটাও কর্ম।

5) পঞ্চম ক্ষেত্রে আপনি তার কাছে বন্ধুত্ব শেষ করে দূরে বসে আছেন কিন্তু তার খারাপ করার জন্য সুযোগ খুঁজছেন।

এইসব ক্ষেত্রেই কর্ম একটাই, শত্রুর মৃত্যু। কিন্তু মৃত্যু কিভাবে হল তার উপর কর্মের প্রভাব আলাদা। সবচেয়ে খারাপ হলো পঞ্চম ক্ষেত্র। কারণ আপনার খারাপ প্রবণতা সারা জীবন থাকবে। সব সময় আপনি খারাপ ভাবতে থাকবেন এবং ওই ব্যক্তির খারাপ করতে থাকবেন। মানসিকভাবে আপনি অশান্তি পেতে থাকবেন। আপনার জেল বা শাস্তি হবে না, কিন্তু সারা জীবন মনে মনে নিজেকে জেলে ভরে রাখবেন।

যদি মানসিক রুপে নেগেটিভ ভাবেন, তাহলে আপনার বাইরের ঘটনা দেখা যাবে না কিন্তু ভেতর থেকে কষ্ট সারাটা জীবন ভুগতে হবে।


তাহলে কর্ম কি?

কিছু ভালো, কিছু খারাপ কিন্তু নিজের প্রবণতার হিসেবে নিজের জীবনকে নিয়ে খেলাটাই হলো কর্ম। কর্ম কোন শাস্তি বা পুরস্কার নয়, এটা একটা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে পূর্ণ করতে চান।

এক ধরনের লঙ্ঘন হলো তা হলো এনার্জি লেভেলের প্রথম লঙ্ঘন। নেগেটিভ চিন্তাভাবনা থেকে কর্মের উৎপন্ন হয়। নেগেটিভ চিন্তা যখন নেগেটিভ ইমোশন এর সঙ্গে জুড়ে কারন করে থাকে তাহলে সেটা অনেক বড় কর্ম হয়। 

যখন নেগেটিভ চিন্তা নেগেটিভ ইমোশন এবং নেগেটিভ বাইরের কর্ম একসঙ্গে জুড়ে যায় তাহলেও ওতে গভীর কর্ম হয়।

যখন নেগেটিভ চিন্তা নেগেটিভ মনোভাবনা যখন বারবার ভাবার মতো নেগেটিভ এক্সেন এর সঙ্গে জুড়ে যায় তখন আরো বেশি কর্ম হয়ে যায়।


এর থেকেও বেশি কর্ম হয় যেটা তে শক্তিস্তর থেকে উৎপন্ন কর্ম দিয়ে প্রতিপক্ষকে বা প্রতিদ্বন্দ্বীকে বা কোন লোককে সরানো বা হত্যার ক্রিয়া করতে হয়। যেমন occult science এর ক্রিয়ার মাধ্যমে কারো ক্ষতি করার চেষ্টা। এতে কারো শক্তিকে অন্যের ক্ষতি পৌছানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

যখন আপনি এনার্জীর মাধ্যমে কাউকে নিজের লাভের জন্য ইনফ্লুয়েন্স করেন, তখন তাতে সব থেকে খারাপ বা দুষ্কর্ম হয়। এনার্জি based কর্ম থেকে তৈরি কর্ম যেকোনো কর্ম থেকে গভীর হয়ে থাকে।

সাধারণত নীতিভঙ্গ বলতে আমরা যা বুঝি তাহলে সমাজের নীতি ভঙ্গ। যেমন এক সমাজের ভেতর অন্য প্রবণতা, কালচার ইত্যাদির নীতি তৈরি হয়েছে। যখন কেউ সেই নীতি কে ভেঙ্গে দেয় তখন তাকে নীতি ভঙ্গ বলা হয়। যেমন কোন সমাজে মিনি স্কার্ট পরাটা নীতিভঙ্গের নিয়ম। তো আবার কোথাও মহিলাকে নিয়ে বোরখা না পরাটা নীতি ভঙ্গ হয়। এরকম অনেক ধরনের থাকে।


তাহলে আসল উলঙ্ঘন কি?:-

কিছু লোক সবাইকে একসাথে নিয়ে চলার কথা বলেন। আবার কিছু লোক নিজের লাভের জন্য অন্যদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন।

বিষয়টিকে একটু তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে দেখুন, সামনে থেকে দেখুন, দেখবেন নীতিভঙ্গ তখন হয় যখন আপনি বিশ্বাস করেন যে আপনি আলাদা, আপনি একক ব্যক্তি। যখনই আপনি অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যান, তখনই আপনি নীতি ভঙ্গ করেন।

যদি আপনি নিজেকে সমাজ থেকে বা অন্যদের থেকে আলাদা না ভাবেন, তাহলে কর্ম সংগ্রহ হয় না। যখনই আপনি সব কে মিলিয়ে এক হন, তখন কর্ম শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ সার্বিকভাবে করা সামাজিক কল্যানকারী কোন কর্ম অ-কর্ম হয়ে যায়।

দুর্ভাগ্যবশত মানুষের সংকীর্ণতা এমন মরচে যা বিশ্বে 'সিলেক্টিভ' হয়ে যান, '' থাকতে পারেন না।

লাগাতার প্রচন্ড অপছন্দের মধ্যে দ্বিধা, আকর্ষণ ও বিকর্ষণ এইসব তাঁর অনুভবকে আলাদা করে দেয়। দিনের পর দিন পছন্দ এবং অপছন্দ নিজেকে অন্য থেকে আলাদা পরিচয় দেওয়া, এই সব থেকে কর্ম তৈরি হয়। এতে ব্যক্তি স্বতন্ত্র খাঁচায় বন্দী হয়ে যায়।


এই বিষয়ে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা যা বলে:-


তিনি বলেন যে অন্তরের প্রয়োজনীয়তার প্রতি বেশি নজর দেওয়া দরকার। তাই অন্তরের পূর্তির ব্যবস্থা করুন। এটা যদি একবার হয়ে যায়, তাহলে জীবনটা একটা আশীর্বাদ হয়ে যাবে। তখন আপনি আর ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে থাকবেন না। এটা একবার হয়ে গেলে আপনি আর নিজের ইচ্ছার বশ বর্তি হয়ে না থেকে বরং অবস্থার প্রয়োজনীয়তার হিসাবে আপনি কর্ম করবেন। এরকম হয়ে গেলে আপনি আর ইচ্ছার বশবর্তি নন। আপনি ইচ্ছাকে বশে নিয়ে আনতে পারবেন। এবার এই ইচ্ছা আপনার জন্য থাকবে না। আপনার কর্মের বন্ধন ও ভেঙ্গে যাবে।

ব্যক্তিত্ব কথাটি একটি কল্পনা, এটি একটি বিচার, এর বাস্তবিক কোন অস্তিত্ব নেই।


যখন আপনি মৌলিক বুদ্ধিমত্তার সাথে জুড়ে যান বা সারা সৃষ্টিকে উপযুক্ত রেখাঙ্কন করেন, তখন আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি অন্য কোন বস্তু থেকে আলাদা নন। আপনি সারা মহাবিশ্বকে একসাথে শিকড়ের মধ্যে জুড়ে দিয়েছেন। আপনার শরীর বুঝে গেছে যে আপনি এই মহাবিশ্বের পারমাণবিক নিত্তেরই একটি অংশ।

এই শরীর জানে যে..বায়ু, জল, সূর্যালোক, পৃথিবী ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। এ জন্য নিজেকে আলাদা হবার নিয়মকে ভেঙে দেওয়া দরকার। মৌলিক রচনার বিরুদ্ধে সীমিত চিন্তার প্রবণতা থেকে করা যেকোনো কর্মকে কর্ম বলা হয়।

মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছেন, এদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে এবং তা হল চরম স্বাধীনতা। বাকি সব জন্তুর মধ্যে বাঁধাধরা স্বভাব আছে। তাদের কিছু পুরনো স্বভাব আছে। তারা শুধু কিছু স্বাভাবিক প্রবৃত্তি দ্বারা চালিত হয়। এইজন্য জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে সীমিত কর্ম তৈরি হয়। কিন্তু মানুষ অবিশ্বনীয় সম্ভাবনার সঙ্গে এই পৃথিবীতে আসে এবং এই প্রবৃত্তিকে বদল করা সম্ভব, ভালোও করা সম্ভব।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বেশিরভাগ লোকই সেই প্রয়োজনীয় স্থায়িত্বের মধ্যে নেই, যাতে তাঁরা নিজের জন্মক্রম থেকে সরে কর্ম করতে পারেন।

তাঁরা ব্যক্তিগত কর্মসূচি ছাড়া কর্ম করতে পারেন না। এখানেই নিজেকে নিজের মধ্যে তাঁরা গভীর সীমাবদ্ধতায় লাগিয়ে রেখেছেন।


যখন কর্ম আপনি নিজের জন্য করেন না। আপনি শুধু নিজেকে অবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে হিসেব করে কাজ করেন। সমাজের প্রয়োজনীয়তা বিচার করে সম্মিলিত কল্যাণের জন্য কর্ম করেন, তখন আপনার কর্ম অকর্ম হয়ে যায়। তখন আপনার মুক্তি নিশ্চিত হয়ে যায়।


যাঁরা জীবনকে পছন্দ অপছন্দের হিসাবে চয়নাত্মক বানান,তাঁরা 'কারন বন্ধন' এ ফেঁসে যেতে থাকেন। গ্রহণ এবং পরিত্যাগ কে নিয়ে, নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করে, নিজে স্বার্থ কর্মে ফেঁসে যান। ফলে তাঁর কর্ম গুণিতক হারে বাড়তে থাকে।


আপনি জীবনকে যেমন চাইবেন তেমনি হবে। জীবন কে আশীর্বাদ হিসেবে চাইলে আশীর্বাদ হবে। আবার অভিশাপ হিসেবে চাইলে অভিশাপ হবে। এর নিজস্ব কোন গুণ নেই, আপনার ইচ্ছা অনুসারে সেটা হয়। ইচ্ছাশক্তি আপনার হাতে আছে।


আদি যোগী প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পৃথিবীতে আধ্যাত্ম আবর্তনে মানুষের মধ্যে মহান সম্ভবনা দেখতে পেয়েছেন। মানুষের মধ্যে পুরো সচেতন আত্মা হিসেবে জীবন নিয়ে বাঁচার সম্ভবনা আছে। মানুষ বাধ্যবাধকতার জীবনকে চাইলে ছাড়তে পারে। আমরা কি হতে চাই সিংহ না হরিণ? দেব না দৈত্য? সব আমাদের ইচ্ছার মধ্যে আছে। এটা আমাদের পছন্দের ব্যাপার। আমরা কোন নির্দিষ্ট সম্ভাবনা নই।

বেশিরভাগ লোক জন্তু-জানোয়ারের মতো জীবন যাপন করেন, মানুষের মতো নয়। আমরা নিজেই নিজের স্বাধীনতাকে ভয়ে দূর করে রেখেছি। একে অল্প মূল্যের বদলে অন্যকে বেচে দিয়েছি।

পিতা-মাতা, ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি এসব কে বেচে দিয়েছি। আমরা সচেতনতা এবং স্বাধীনতাকে ছেড়ে দিয়েছি। এবং এমন কথা বলি যে "মানুষের সীমা সীমিত এবং মানুষ পাপে পরিপূর্ণ।"

এইজন্য পৃথিবীর সব থেকে ভালো সৃষ্টি জীব হয়েও আমরা অধম হয়ে রয়েছি। আমরা পরমানন্দ কে হত্যা করেছি। ভালবাসাকে হত্যা করেছি, পরিচয় তৈরি করতে গিয়ে ঘৃণাকে নিজের করেছি এবং আনন্দকে হত্যা করেছি। মূলত আমাদের ইচ্ছাশক্তি, আমাদের স্বাধীনতা, অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

আমরা স্বাভাবিক প্রবৃত্তির থেকে বুদ্ধিমত্তার দিকে এবং বাধ্যতা থেকে সচেতনতা দিকে না গিয়ে, তার বদলে আমরা ফিরে গেছি জীবজন্তুর চরিত্রে।


আমরা এই 'অসীম জন্মসিদ্ধ অধিকার থেকে জীবনের আসল মালিক হওয়া' এই কাজ থেকে সরে গিয়ে এক অচেতন যাত্রা এবং আত্মবিলাসের সঙ্গে সমঝোতা করেছি।


অবহেলা করলে কর্মের সংগ্রহ আরো বেড়ে যায়:-

সত্যি কথা এই যে আপনি কর্মকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করবেন, আপনার কর্ম ততই বড় হতে থাকবে। যে কাজ জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলবে সে কাজ করা উচিত নয়। যে কাজ আপনার মনে লাগে না, সেই কর্মকে ত্যাগ করা উচিত। যে কর্মে মন লাগে সেই কর্মকে করা উচিত।

অন্যদিকে যদি আপনি যেটা করতে চাইছেন সেটা যদি করতে না পারেন, তবে সে কর্মকে দমন করা যাবে না। দমন করার অর্থ আপনি কিছু অপূর্ণ অনুভব করছেন। যা আপনার কর্ম বৃদ্ধি করাবে।


ভালোভাবে জীবনকে উপভোগ করার জন্য তন মন সবকিছু দিয়ে জীবনকে অনুভব করুন। যখন আপনি ক্ষিদেকে পুরোপুরি অনুভব করবেন তখন খাবার খেলে খাবার এর স্বাদই আলাদা পাবেন।

যদি আপনি খাবার খাচ্ছেন এবং খাবারের স্বাদ অনুভব না করলেন, তাহলে সেটা অপূর্ণই থেকে গেল।

যদি আপনি দুঃখ বা সুখ আনন্দ বা ব্যথা একে অনুভব করতে না পারেন, তাহলে কর্ম বেড়ে যায়। এই জন্যই মহাভারতে কৃষ্ণ বলেছেন মানসিক দ্বিধা অপরাধের থেকেও খারাপ।


জীবনকে পুরোপুরি খুলে অনুভব করুন। প্রাণ খুলে বাঁচতে না পারলে আরো কর্ম তৈরি হয়।

আজকাল বেশি শিক্ষিত লোক পুরোপুরি নিজের অনুভবকে ভালো করে অনুভব করতে পারেন না। না পুরোপুরি হাসতে পারেন, না পুরোপুরি কাঁদতে পারেন। জোরে জোরে হাঁটতেও পারেন না। এমনিতেই উনাকে হতাশায় ঘিরে ফেলে এবং জীবনের খুশি কমে যায়। এতে কর্ম অনেক বেড়ে যায়।

যাঁরা মন ভরে হাসতে পারেন, মন খুলে কাঁদতে পারেন, তারা অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি অনুভব করতে পারেন। পুরোপুরি অনুভব করার অর্থ ভালো অবস্থা অনুভব করা নয়, জীবনের দুঃখ সুখ যাই আসুক, পুরোপুরি অনুভব করা।

যদি আপনি জীবনের মুহূর্তকে পুরোপুরি অনুভব করতে পারেন, তাহলে আপনার অনেক কর্ম গলে যায়।


কেন কিছু লোক অন্যের তুলনায় বেশি কষ্ট ভোগেন? কেন এই মহাবিশ্বে সবার সমান যায় না? কেন কেউ গরীব হন? আবার কেউ ধনী। কেন কেউ স্বাস্থ্যবান হন? আবার কেউ রোগী। যদি ভগবান আছেন তাহলে কেন তিনি সব কে সমান করলেন না? সত্যিই সবার সমান সফটওয়্যার নেই কেন? সবাই গঠনমূলক কর্ম কেন করেন না? এইসব অসামান্যতার কারণ কি?

দেখবেন কেউ যদি জীবনে দুঃখ ভোগ করছেন, বা দারিদ্রতা ভোগ করছেন তাহলে এর কারণ তিনি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করছেন।


চলুন ব্যথা এবং কষ্টকে আলাদা করে রাখি। ব্যথা হলো শারীরিক কোথাও চোট বা ক্ষত হলে তাতে ব্যথা হয়। ব্যাথা শরীরকে সজাগ বানায়। জানিয়ে দেয় যে কিছু ত্রুটি হচ্ছে, তার সেবা করো। যত্ন নাও। কিন্তু দুঃখ হলো আলাদা। মনে এবং হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করাকে দুঃখ হোক বলা হয়। কষ্ট আপনি নিজেই সৃষ্টি করেন।

আপনার ব্যথা ভোগের জন্য নিয়ন্ত্রণ আছে। কষ্ট ভোগেরও নিয়ন্ত্রণ আছে। আপনি চান তো কষ্ট পাবেন, না চান তো কষ্ট পাবেন না।

যেমন পুরনো দিনের ঘটনার প্রভাব হয়তো এখন নেই, কিন্তু সেই ঘটনাকে মনে করে এখনো কষ্ট পাওয়া সম্ভব।


কেউ ছুটি কাটাতে গেল, দ্বিতীয় ব্যক্তি ছুটি কাটাতে না যেতে পারলে তাঁর কষ্ট হয়। এই কষ্ট পাওয়াটা আপনার ভাবনার উপর নির্ভরশীল। আপনি চাইলে কষ্ট অনুভব করবেন, না চাইলে কষ্ট অনুভব করবেন না। এজন্য এটা ভৌতিক পীড়া নয়। এটা আপনার মানসিক পীড়া এবং এই পীড়া আপনি ঘটনাকে কেমন প্রতিক্রিয়া দেবেন তার উপর নির্ভরশীল। আপনার উপর যা ঘটেছে সেটা আপনার কর্ম নয়, আপনার উপর যা ঘটেছে সেটার প্রতিক্রিয়ায় আপনি যা করছেন সেটাই আপনার কর্ম। মানুষ যে কোন জিনিস থেকে দুঃখ পেতে পারে। কেউ কলেজে যেতে পারেনি তাই দুঃখ করতে পারে। কেউ কলেজে গেলেও কিন্তু পাস করে বেরোতে পারিনি তাই দুঃখ করে। কেউ বিয়ে করেনি তাই দুঃখ, কেউ বিয়ে করেছে তাই দুঃখ, কারো ছেলেপুলে নেই তাই দুঃখ, কারো ছেলেপুলে আছে তাই দুঃখ।


এজন্য যে ঘটনা ঘটছে সেটা দুঃখের কারণ নয়। আপনি ঘটনার প্রতি কিভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন সেটা দুঃখের কারণ হয়। এজন্য বলা হয় আপনার জীবন আপনার কর্ম। আপনি কতটা সচেতন তার উপর নির্ভর করছে আপনি কতটা কর্ম নিতে পারছেন। 

যদি আপনি আপনার ভৌতিক শরীরের ব্যাপারে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাহলে জীবনের কুড়ি শতাংশ পরিণাম আপনার হাতে থাকবে।


যদি আপনি আপনার মানসিক পদ্ধতির ব্যাপারে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাহলে জীবনের ৬০ শতাংশ পরিণাম আপনার হাতে থাকবে।


আর আপনি যদি শারীরিক পদ্ধতি, মানসিক পদ্ধতি এবং জীবনীশক্তি তিনটির উপরই দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাহলে ১০০ শতাংশ পরিণাম আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

লোক যাকে ভাগ্য বলেন তা হলো সঠিক জায়গায় সঠিক সময়ে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা। আপনার অনেক ক্ষমতা এখনো অচেতন আছে। এইজন্য আপনি যেরকম পরিস্থিতিকে আকর্ষণ করছেন,

 তাতে সব ছবিতেই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আবশ্যক নয়। কিছু জিনিস আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, আপনার উপর যা হয় তাতে আপনি প্রতিক্রিয়া দেন।

ধরুন আপনি লটারি জিতে গেলেন কিন্তু তবু আপনি কতটা সুখী হবেন সেটা আপনার পছন্দের উপর নির্ভরশীল।

একজন গরিবের জন্য মিলিয়ন ডলার অনেক টাকা, কিন্তু একজন ধনী লোকের জন্য সেটা অতটা মহত্ত্বপূর্ণ নয়, এজন্য বলা হয় যে ভাগ্যও আপনার খুশি নির্ণয় করে না।

অনেকেই বলেন কর্ম এমন একটি জিনিস যে খারাপ করলে খারাপ হবে এবং ভালো করলে ভালো হবে। কিন্তু কর্ম যেটা হয় তা ভালো কর্ম বা খারাপকর্ম এর হিসেব হয় না। এটা হলো কারণ এবং তার প্রভাব।

যদি এক ব্যক্তি আপনাকে জানায় যে তার হার্ট ব্লকেজ আছে। তার কারণ কি তিনি আগের জন্মে খারাপ কর্ম করেছিল? এমন কিছু নয়। হতে পারে তিনি শরীরে সঠিক ব্যায়াম করেননি, খান পান ঠিকমতো করেননি, শরীরে যত্ন নেননি এই কারণেই অসুখ হয়েছে।

কোন কাজ কে অবহেলা করলেই কর্ম বাড়ে, action নেওয়া ও কাজ। আবার কর্ম না করা থেকেও কর্ম হয়।

আপনাকে বুঝতে হবে যদি গরিব তার কর্মফলের জন্য গরিব হয়, তাহলে কর্ম করে সে গরীবি হটাতেও পারে।

কর্মের অর্থ হলো, আপনি আপনার নিজের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারেন। এমন নয় যে আপনি এতে বহে যাবেন।

সবার মধ্যে কিছু আশ্চর্যজনক ক্ষমতাও আছে। যে কোন পরিস্থিতিতে আনন্দ নিতে পারেন এমন লোক গরিব হলেও দুঃখী হয় না।

দুঃখ পাওয়া এবং নিজেকে কমজোর ভাবা আপনার পছন্দের ব্যাপার। শরীরের ব্যথাকে সামলানোর অবশ্যই এক বিশেষ পদ্ধতি আছে।কিন্তু মন যে কষ্ট অনুভূতি পায়, যদি আপনি মন থেকে দুঃখী হন তবে এই অর্থ এই যে দুঃখ আপনি নিজেই তৈরি করেছেন। আপনার ক্রোধ, দুঃখ এসবের নির্মাতা আপনি নিজে।

এইজন্য ভাবো ভৌতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আপনি আপনার মতে পীড়া সৃষ্টি করতে করবেন না।

হতে পারে আপনার সবকিছু হারিয়ে গেছে কিন্তু তবু মনে ব্যথা অনুভব করার দায়ী আপনি নিজে।

আপনার সহায়তা ছাড়া, আপনার কর্ম দুঃখ দায়ী হতে পারে না। এটা যেদিন বুঝতে পারবেন সেদিন আপনার দুঃখ চলে যাবে। 

কর্ম একটি বীজ এর সঙ্গে আপনি কি করবেন তা আপনার উপর নির্ভর করছে। ধরুন কিছু বীজ ক্ষেতে লাগানো হলো। জল দেওয়া হল কিন্তু তা থেকে শুধু চারাগার জন্মালো না। সঙ্গে ঘাসও জন্মালো। বাস্তবে দেখবেন চারা গাছের থেকেও বেশি ঘাসজন্মেছে। এবার যদি ঘাসকে তুলে বের করে দেন, তাহলে দেখবেন ফসল ফলেছে। আর যদি ঘাস না বের করেন, বসে থাকেন, তাহলে দেখবেন ঘাস বড় হয়েছে, চারা গাছকে দুর্বল করে ফেলেছে।

 আমাদের জীবনেও এমনি বীজ আপনার কর্ম। কিন্তু বীজ লাগানোর পর ঘাস তুলতে হবে। যদি আপনি ঘাস তোলার কাজ না করেন, তাহলে জীবনে ঘাসের জঙ্গল পাবেন কিন্তু যদি আপনি কর্মকে বেছে বেছে করবেন, তাহলে আপনি ভালো ফল পাবেন।


কুল বেদনা:-

পিতার কর্ম পুত্রের উপর প্রভাব ফেলে, কোন কিছু বড় পরিবার বা জাতি বা সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের থেকে বেশি সমস্যায় ভোগে। এর কারণ হলো কুল বেদনা। একটি বড় পরিবার বা কমিউনিটির সম্মিলিত বেদনা অর্থাৎ যে কষ্ট মাত্র আপনার অতীত থেকেই নয় বরং আপনার পূর্বজদের কাছ থেকে আসে এবং সেটা আপনার পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও চলে। এক সমাজে একরকম প্রথা আছে যা আমাদের পূর্বজরা তৈরি করে গেছেন। যা আজও চলছে এর ফলে পুরো সমাজ আনন্দ বা দুঃখ ভোগ করে এমনটাই হলো কুল বেদনা। বর্ণপ্রথার দরুন শূদ্রদের মধ্যে বিদ্যা চর্চা হয় নি, ফলস্বরূপ আজও আদিবাসী পিছিয়ে আছে।

স্মৃতি হিসাবে কর্ম:-

একবার সংকরন পিল্লাই বউ এর কাছ থেকে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিছুটা ঘোরা ফেরার পর তিনি রাতে এক রেস্টুরেন্টে নাস্তা করার জন্য ঢুকলেন। যখন খাবার টেবিলে খাবার দেওয়ার লোকটি এলো, তিনি বললেন আমাকে হালকা বাটি বেশি নুন দিয়ে সম্বর এবং কঠিন ইডলি দাও। সেবক থতমত খেয়ে বললেন কিন্তু স্যার আমি আপনাকে গরম গরম স্বাদিস্ট সম্বর এবং নরম নরম ইডলি দিতে পারি। তিনি বললেন "বোকা কোথাকার আমি তোমাকে কি মনে হয় আমি এখানে খাবার এনজয় করতে এসেছি? আমি বাড়িতে ঝগড়া করে বের হয়েছি।" এমনিভাবে যতই কিছু হোক না কেন, যদি আপনি কারো কাছ থেকে একবার অখুশি হন আপনি এটা ত্যাগ করতে পারবেন না। এই ব্যাপারে ভাবুন। আপনি যে পরিচয় অন্যের নিকটে দেন সেটা আপনার পুরনো স্মৃতির ফল। আপনার বর্তমান আপনার অতীত থেকে তৈরি। যা কিছু আপনার কাছে পৌঁছায়, যেটাই শোনেন, যেটাই দেখেন যেটাই গন্ধ পান, সব আপনার মেমোরিতে ঢুকে যায়, এটা আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। আপনি ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় যাই মেমোরিতে সংগ্রহ করেছেন, তা মেমোরিতে ফিক্স হয়ে গেছে। শরীরের প্রত্যেকটি কোষ প্রত্যেকটি মুহূর্তকে মনে রাখে এবং জীবন আপনাকে কর্ম সম্বন্ধে সবসময় বলে দেয়।

সমস্যা হল আপনি নিজের শুনেন না, প্রতিবেশীর শুনেন। যদি আপনি জীবনের ধারাকে বুঝেন তাহলে আপনাকে কোন শিক্ষা এবং কোন বইয়ের প্রয়োজনীয়তার দরকার পড়বে না।

কর্ম একটি বড় শব্দ যদি আপনি না শুনতে পান, এর কারণ এবার আপনি নিজে শুনতে শুরু করুন। যাতে আপনার কর্মের আওয়াজ জোরে শুনতে পান। এর আওয়াজ এত জোরে হয় যে আপনি মিস করতে পারবেন না।

আপনি যা খান সেটা থেকে আপনার শরীর তৈরি হয়। আপনি দিনের পর দিন শরীরকে দিয়েছেন সেটা থেকেই এই শরীর হয়েছে। আপনার মন হল আপনার ভাবনা এবং আইডিয়ার স্তুপ যা আপনি সময় সময় দিয়েছেন। সেই জন্য আপনার মন বা শরীর দিয়ে যাই পরিচিতি হোক না কেন যদি আপনি আপনার চরিত্র বলেন সেটাও আপনার স্মৃতির সঞ্চয়। নিজের ব্যক্তিত্ব হিসাবে যাই বলেন সব আপনার কর্ম থেকেই সঞ্চিত। অতীতের সঞ্চিত স্মৃতি আপনার মধ্যে আছে। আপনি হয়তো অনেক কিছু ভুলে গেছেন, সেটা কিন্তু আপনার শরীর ভুলেনি। হয়তো আপনি আপনার দাদু কে ভুলে গেছেন। কিন্তু তার নাক হয়তো এখনো আপনার মুখমন্ডলে আছে। আপনি এটাকে জন্মগত ফল বলেন যা অতীতের আপনার পূর্বপুরুষের কাছে থেকে পেয়েছেন। 


লোক ভাবেন স্মৃতি বলতে শুধু মনের স্মৃতি বোঝায়, সেটা বাস্তব নয়। আপনার শরীর আপনার মনের থেকে বেশি স্মৃতি বহন করে। কোন অবস্থা অনুযায়ী আমরা যে প্রতিক্রিয়া দিই, সেখান থেকেই বোঝা যায় আমাদের কার্মিক চক্র কতটা বড় হবে। যে অচেতন প্রক্রিয়ায় আমরা কোন ঘটনার সময় প্রতিক্রিয়া দিই, সেটা আমাদের ব্যক্তিত্বে গেথে যায়। এবং ওই প্রতিক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়ার ধরন বেশি দিন চলতে থাকলে সেই প্রতিক্রিয়া দৃঢ় হয়ে যায়। জমে যায়। পরে সেটা চরিত্রের একটা অংশ হয়ে যায়। তখন আমরা অনুভব করি যে আমি এমনই, এটাই আমার ব্যক্তিত্ব। পরে আবার যদি কেউ আপনাকে এর থেকেও জীবনকে পরিচালনায় ভালো পথ দেখান, তখন আপনি কুঁকড়ে যান এবং আপনি বলেন আমি তো এমনই।

 আপনার জীবনে হয়তো কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আপনি ভেবেছেন এবার আমি জীবনে পরিবর্তন আনব, তিন চার দিন তার জন্য চেষ্টা করেছেন, নতুন কর্মপদ্ধতি শুরু করেছেন, কিন্তু দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ দিন যাবার পর আবার সব বন্ধ করে পুরনো জীবন পদ্ধতিতে ফিরে গেছেন। আপনি আলাদা কিছু করতে চাইছেন কিন্তু আপনার পুরনো ব্যক্তিত্ব, পুরনো ধরন, আপনাকে আবার পূর্বের চরিত্রে টেনে নিয়ে আসছে।

 যখন আপনার বয়স ১৮-১৯ বছর হয়। তখন মনে হয় আপনি জীবনকে অনেক কিছু ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। পরে যতই আপনার বয়স বাড়তে থাকে তখন মনে হয় যে বিকল্প পদ্ধতি গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শেষে মেশে মনে হয় একটাই পথ আছে।

 এর কারণ দিনের পর দিন বাইরের কারণে পদ্ধতিতে সংগ্রহ হওয়া কর্ম বাড়তে থাকে এবং সেই হিসাবে নতুন প্যাটার্ন তৈরি হতে থাকে যেটা পড়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। সেই অভ্যাস আপনাকে সংকীর্ণ মনের তৈরি করে দিতে পারে। এটা তখনই হবে যদি আপনার বেশিরভাগ প্যাটার্নকেই নেগেটিভ হয়। এই কার্মিক ধরনকে ভেঙ্গে দেওয়া যেতে পারে এবং এই প্যাটার্ন কে ভাঙ্গার জন্য লজিক্যালি সেই কার্মিক বস্তুকে ভাঙতে হবে। আপনার সচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তা যতই ভালো হবে, ধনাত্মক হবে, ততই তাড়াতাড়ি এই প্যাটার্ন কে বদলাতে পারবেন।

মানুষ হল কর্মের থলি।

 আট ধরনের মাত্রা আছে যেগুলি কার্মিক স্মৃতি সৃষ্টি করে:-

 এগুলি হল

 1) প্রাকৃতিক শক্তি সংক্রান্ত,2)পারমাণবিক স্মৃতি 3)বিবর্তনিক স্মৃতি 4) বংশগত স্মৃতি 5) কার্মিক স্মৃতি 6)অনুভব গত স্মৃতি 7)গ্রন্থিবদ্ধ স্মৃতি 8)জটিল স্মৃতি

1) প্রাকৃতিক শক্তি সংক্রান্ত স্মৃতি:-এগুলি হল ভূমি, জল,বায়ু, আকাশ এবং অগ্নি, এইসব দিয়ে আপনি তৈরি। সৃষ্টির শুরু থেকেই এই মেমোরি আছে।

2) পারমাণবিক স্মৃতি:-পারমাণবিক পরিবর্তনশীল গঠন যা আপনার শরীরকে তৈরি করে এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

3) বিবর্তনিক স্মৃতি:-আপনার শরীরে থেকে মানুষ বিবর্তনী স্মৃতির পরিচয় দেয়। এই মানব শরীরে মেমোরি এমন যে যদি আপনি শুকর ও খান, মুরগিও খান। তবুও আপনি মানুষই থাকেন। শুকর বা মুরগি হয়ে যান না।

4) বংশগত স্মৃতি:-এটা হল বংশ ক্রমে আপনার পূর্বজতের কাছ থেকে আপনার শরীরে আশা স্মৃতি।

5) কার্মিক স্মৃতি:- মানুষের সঞ্চিত কর্ম দিয়ে যে স্মৃতি তৈরি হয়।

6) অনুভবগত স্মৃতি:- তৎক্ষণাৎ দৈহিক এবং শারীরিক,সংস্কারগত পরিবেশগত থেকে যে প্রভাব আমাদের মধ্যে পড়ে। পরিবেশ ঘটিত তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া থেকে যে মেমোরি তৈরি হয় তাকে বলা হয় অনুভব্য তো বা সেন্সরি মেমোরি।

7) গ্রন্থিবদ্ধ স্মৃতি:-যত সচেতন তথ্য আপনার কাছে আসি তা থেকে যে স্মৃতি তৈরি হয় তা হল গ্রন্থিবদ্ধ স্মৃতি।

8) জটিল স্মৃতি:-আমাদের অজান্তেই পাঁচ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে স্মৃতি  সংগৃহীত হয় তাকে বলা হয় জটিল স্মৃতি।


যখন মৃত ব্যক্তি আপনার মাধ্যমে জীবিত হয়:-

আমাদের শরীর আমাদের মনের তুলনায় লাখ গুণ বেশি স্মৃতি রাখে। এই বংশগত মেমোরি পূর্বজদের থেকে আপনার কাছে বংশ পরম্পরায় আসে। যদি কেউ ভালো গান গায় তো লোকে বলে যে এটি তার সংস্কার পূর্বজদের কাছ থেকে এসেছে। পূর্বে বংশে কেও গায়ক ছিল, সেখান থেকে তার এই গুণটি এসেছে।

এই বংশগত মেমোরি না ধনাত্মক হয় না ঋণাত্বক হয়। আমরা তাকে ধনাত্মক হিসেবে না ঋণাত্বক হিসাবে ব্যবহার করব সেটা আমাদের উপর নির্ভর করে।

আমরা পূর্বস্থলীদের গুণগত জিন বহন করি। তবে সে মেমোরি আপনার জন্য সহায়ক হবে? না বাধা হবে? সেটা আপনি সেই মেমোরি কে কেমন ব্যবহার করতে পারেন তার উপর নির্ভরশীল।

মৃত ব্যক্তি তার স্মৃতি বংশধরদের মাধ্যমে ছেড়ে যেতে চায়।

কোন ব্যক্তি এজন্য মরণের আগে বংশ ছেড়ে যেতে চায়, যাতে মরনের পরেও তার গুণ জীবিত থাকে। আপনার পূর্বজ আপনাকে দিয়ে জীবিত থাকতে চান।

কিন্তু যদি আপনি পরিবর্তন চান, আপনি অলৌকিক সত্তা হতে চান, পরম দিব্য হতে চান, তাহলে পূরনো স্মৃতিকে আলাদা করে বাঁচতে শিখতে হবে। যিনি সঞ্চিত কর্ম দিয়ে বাঁচেন, তিনি অলৌকিক সত্তা হতে পারেন না।

তাঁকে পুরো সচেতনতার সঙ্গে বাঁচতে হবে। যিনি enlightened হতে চান তাঁকে সচেতন ভাবে বাঁচতে হবে।

যিনি পুরনো স্মৃতি দ্বারা চালিত হয়ে বাঁচেন, তিনি হলেন শরীরওয়ালা ভূত। তিনি অতীতের মেমোরি দ্বারা চালিত হন।

যে ব্যক্তি নিজে সচেতন ভাবে বাঁচতে পারেন না পুরনো সংস্কার দ্বারা চালিত হন তিনি একজন কয়েদির মত যার নিজের স্বাধীনতা নেই। খাওয়া, দাওয়া ঘুমোনো সব হয়। কিন্তু স্বাধীনতা নেই।

কিন্তু তার যে আলাদা দায়িত্ব আছে সেটা করেন না। তিনি একজন ভালো পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি করেন না।

পরবর্তী প্রজন্মকে ভালো করতে হলে সেটা তখনই সম্ভব যদি আজ যেটা আছে সেটা কে যত্ন করি। কারণ মেমোরি সব সময় সব দিক দিয়ে আপনাকে প্রভাবিত করে।

যদি আপনি একটি বইয়ের মেমোরি দিয়ে বাঁচেন তাহলে আপনি ধর্মীয় হলেন।

 যদি আপনি অনেকগুলি বইয়ের মেমোরি দিয়ে বাঁচেন তাহলে আপনি বুদ্ধিমান।

 যদি আপনি অনেকগুলি জেনারেশনের মেমোরি এর সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে ভেবেচিন্তে বাঁচেন তাহলে আপনি সহানুভূতিশীল হন।

 কিন্তু যদি আপনি স্মৃতিকে ছেড়ে সচেতন ভাবে বাঁচেন তাহলে আপনি অতীন্দ্রিয় আপনি নিগূ়ঢ়।


বিজ্ঞান এবং যোগ আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে আপনার উপর বংশগত মেমোরি প্রভাব পড়ে না। এতে আপনি এমন ভাবে তৈরি হন যে নিজের দৃষ্টিকোণ দিয়ে আপনি চলেন। আপনার সংস্কার, শ্রেণী, জাতি, কোনটাই সীমিত থাকে না। আপনি এমন তৈরি হন যে আপনি যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারেন। আপনি একজন বিশ্ব নাগরিক হয়ে যান। সব গুণ সবার জন্য।

রুনানুবন্ধন:- সংস্কৃতে শারীরিক বন্ধনকে বলা হয় রুনানুবন্ধন। যে স্মৃতি আপনি শরীরে বহন করেন সেটাই হলো রুনানুবন্ধন। এগুলি যেমন রক্তের সম্পর্ক, সেক্সুয়াল সম্পর্ক, এসব হলো যা ফিজিক্যাল মেমোরি তৈরি করে। এরকম সম্পর্ক যখন শারীরিক প্রবণতা আসে প্রধানত সেক্সুয়াল সম্পর্কে তখন দুই শরীরের মধ্যে এ গভীর স্মৃতি তৈরি হয়। এই জন্য সমাজ বিয়ে করে এর সম্বন্ধের প্রতিশ্রুতি তৈরি করে। কারণ দুটো শরীরের শারীরিক এবং অন্তর আত্মার অন্তরঙ্গতার কারণে দুজনের মধ্যে শারীরিক স্মৃতির লেনদেন হয় এবং দুজনের মধ্যে সম্বন্ধ তৈরি হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি বেশ্যা হন, তিনি একের বেশি লোকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তার শরীরে অনেক শরীরের অন্তরঙ্গতা মিলে থাকে ফলে তাকে দ্বিধা বিভক্ত করে ফেলে। যার কারণে তার জীবনকে স্থায়ী করা মুশকিল হয়ে যায়। রুনানুবন্ধন ভুল কিছু নয়। দুইটি জীবনের নিজেদের মধ্যে রুনানুবন্ধন ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্ভব নয়। এছাড়া মা এবং পুত্রের মধ্যেও রুনানুবন্ধন সম্ভব হতো না।

এই বন্ধনের একটা উদ্দেশ্য আছে তা হলো দুজনের মধ্যে সহায়ক হওয়া। এটা একটা বোঝা নয়। সেক্সুয়াল অ্যাক্ট শরীরের মধ্যে সবথেকে বেশি রুনানুবন্ধন তৈরি করে। এই অদলাবদলিতে মহিলার শরীর বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। যখন এক মহিলা গর্ভবতী হন, তখন তিনি বাইরের থেকে বেশি উদাসীন থাকেন। এমনকি স্বামী থেকেও বেশি বন্ধন গর্ভের পুত্রের প্রতি হয়। যখন নারী প্রেগনেন্ট হন তখন সে পিতা-মাতা বা অন্যদের থেকে উদাসীন হয় এবং বেশি বন্ধন সন্তানের কাছে থাকে। এটা শারীরিক মেমোরির কারণে হয়। যখন নিজের কেউ মারা যায় তখন বেশি দুঃখ অনুভব হয়। 

এই জন্য যে লোক আধ্যাত্মিক হতে চান, যেহেতু আধ্যাত্মিকতার সময় ব্যক্তি অন্যের সঙ্গে কোন শক্ত রুনানুবন্ধন রাখতে চান না, তাই তাঁরা সেক্সুয়ালিটি কে বন্ধ করে শাকাাহারি হয়ে যান। তামাক, অ্যালকোহল বা সেক্সুয়ালিটি স্মৃতি, এদের আলাদা আলাদা ধরনের স্মৃতি আছে।


মহান কর্মের গুদামঘর:-

চার ধরনের আবশ্যক কর্ম হলো:-

সঞ্চিত কর্ম:- সঞ্চিত কর্ম বা টোটাল একুমুলেটেড মেমোরি কে বলা হয় সঞ্চিত কর্ম। যে বড় গুদামঘর সেখানেই যেখানে সকল সঞ্চিত কর্ম থাকে আট ধরনের মেমোরি থেকে সঞ্চিত কর্ম যেমন..মৌলিক,পারমাণবিক,বিবর্তন,বংশগত, ব্যক্তিগত মেমোরি, সংবেদনশীল মেমোরি এবং অব্যক্ত মেমোরি।

এখন সঞ্চিত কর্মের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো allotted কর্ম বা বরাদ্দ কর্ম। এর দুটো ভাগ আবন্টিত কর্ম এবং ভবিষ্যতের জন্য আবন্টিত কর্ম।

Allotted কর্ম বা বরাদ্দ কর্ম:-সঞ্চিত কর্মের ভিতর এক অংশ যা পেকে যায়, যা তৎক্ষণাৎ আগ্রহ চায়, একে বলা হয় এ্যালোটেড কর্ম। প্রত্যেক মানুষের জন্য বরাদ্দ কর্ম যাকে বলা হয় প্রারব্ধ কর্ম। এই কর্মকে এক্ষুনি হ্যান্ডেল করতে হবে। বাকি কর্ম সিলেক্টেড থাকে কিন্তু অপরিপক্ক থাকে। এজন্য আপনাকে  বর্তমান জীবনে কিছু বরাদ্দ কর্ম আছে যা নিজেই খেলছে। এই ধরনের থেকে আলাদা প্রত্যেক মানুষের জীবনী শক্তি আলাদা ভাবে কাজ করে।

প্রত্যেক মানুষের শারীরিক ক্রিয়ান্বতা বা পার্সেন্টেজ আলাদা হয়। প্রত্যেক মানুষের জন্য লাইফ এনার্জি আলাদাভাবে কাজ করে।

মানুষের এলটেড কর্মের গতিবিধি ছোটবেলা থেকেই চোখে পড়ে। পিতা-মাতার দুই সন্তানের মধ্যে স্পষ্ট ভাবে পার্থক্য দেখা যায় একজনের শারীরিক গতি বৃদ্ধিতে কিছু সহজ প্রবৃত্তি দেখা যায় এবং অন্যটিতে জাতক কে চাপে থাকতে দেখা যায়।

এই হাবভাব কখনো কখনো নবজাতক শিশুর মধ্যে হাসপাতালেই দেখা যায়। পরে অবশ্য  শিশু যেমন পরিবেশের সঙ্গে থাকতে থাকতে বড় হয়, যেমন খাবার খায় তেমন চরিত্র গঠন হয়। এর উপর নির্ভর করে শিশুর পরিবর্তন আসে কিন্তু শৈশবে সেই আলাদা গুণ থেকে শিশুর allotted কর্ম বোঝা যায়। সব আধ্যাত্মিক পথের উদ্দেশ্য হল স্টোর হাউসের এলটেড কর্ম কে খুঁড়ে বের করা।

আধ্যাত্মিক পদ্ধতি অবলম্বনকারীরা তাড়াতাড়ি করেন তাদের উদ্দেশ্য হলো যত কম সময়ে সম্ভব কর্মকে শেষ করা। কর্ম নিজের সময় অনুসারে পরিণত হয় কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা রাখে না এজন্য আধ্যাত্মিক যাত্রা হল ধ্বংস সম্বন্ধীয় আধ্যাত্মিক সাধক একই জন্মের দশ জন্মের কর্মকে শেষ করতে চান। আধ্যাত্মিক সফর এমন ভাবে চালিত হয় যাতে নতুন কর্ম আর না জন্মায় এবং সঞ্চিত কর্মকে সীমা বেধে দেয়, এইভাবে কর্মের আয়তন কে খুব দ্রুত শেষ করানো যায়।

যখন কেউ আবন্তিত কর্মকে শেষ করে তখন তার কেমন অনুভূতি হয়? তার জীবন আরামে চলে, কম প্রতিক্রিয়াশীল কম বাধ্যকারী তাছাড়া পছন্দ এবং অপছন্দ লোকের সম্বন্ধে জায়গা সম্বন্ধে খাদ্য সম্বন্ধে কাজ সম্বন্ধে রাজনীতি সম্বন্ধে দুর্বল হতে থাকে। তারা আরাম করে বসে যেতে চাই না শুরুতে সে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এবং শান্ত জীবন যাপন করে আবার কিছুক্ষণ পর মহাবিশ্বের সঙ্গে জুড়ে যেতে চায়। এবার বিশ্বের সচেতনতার সঙ্গে জুড়ে যায়, এবার আপনার জীবন আপনার পছন্দ অনুসারে করবেন।

এবার এলোটেট কর্মীর অন্য দিকটাতে আছি। একে বলা হয় ক্রিয়ামন কর্ম। যে কর্ম কাজ করার জন্য বাধ্য করে আমরা ক্ষমতাকে আটকাতে পারি না জীবনে আবেগ এবং প্রবণতা অনেক হয়। কিন্তু তার মধ্যে সবগুলো বাহ্যিক কর্মে পরিণত হয় না কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে কিছু কর্ম আছে যেটা করতেই হবে। বাকিটাকে ভেতর থেকে সামলে নেওয়া যায়।

আপনি আপনার কর্মকে কেমন ভাবে সামলাবেন সেটাই বিশেষ জিনিস। কারণ সেখান থেকেই ফল বাহির হয়।

যখন কেউ কর্মের জন্য বাধ্য করে, তখন কত সচেতনতার মাধ্যমে সেই কর্মকে করেন সেটা মহত্ব পূর্ণ।

যদি আপনি অচেতন ভাবে কর্মকে করেন তাহলে সেই কর্ম আরো কর্মকে জন্ম দেয়, এমনই ভাবে কর্ম চিরায়ু হয়ে যায়।

জনতা কি উদাহরণ দিয়ে বোঝো। যখন দুই ব্যক্তি কাজ করেন তখন কিছু ফল হয়ই হয়। যখন একজন পুরুষ এবং একজন নারী মিলন হয়, তখন এক বাচ্চার জন্ম দেয়। সেই সরল শারীরিক ঘটনা কেমন ভাবে কর্ম সফল হয়। কিন্তু এই ফল অনেক স্তর হতে পারে, যেমন চিন্তা আবেগ বিচার মতবাদ, কর্ম।

এখানে ভালো কর্মের বিচার মহত্ত্বপূর্ণ আপনি ভালোভাবে কর্ম করে ভবিষ্যৎকে বদলাতে পারবেন।

আপনি নিজের ভবিষ্যৎ কে বিনা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াতেই সেই সচেতনতার সিঁড়ি ছাড়া ভবিষ্যতকে বদলাতে পারেন। যদি বর্তমানে ভালো কর্ম করেন তাহলে ভবিষ্যৎ ভালো হবে নিশ্চিত।

তবে আপনি যদি ধ্যান তৎপর হন তাহলে আরেক বন্ধন আগে বেরোন। সব আধ্যাত্ম্য প্রথা সেজন্য সব ব্যক্তিকে ধ্যান করতে বলেন। যখন আপনি ধ্যান করেন তখন সকারাত্মক কর্ম তৈরি হয়। আপনার নতুন কর্ম তৈরি হওয়া বন্ধ হয়। প্রত্যেক আধ্যাত্ম্য প্রথমে আপনি তপস্বী হন অর্থাৎ আপনার নতুন কর্ম তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।


আরেক উদাহরণ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি-

গুরু হয়ে যখন আমি আধ্যাত্মিক কার্যক্রম করি তখন আমি এক নির্দিষ্ট প্রণালীতে থাকি। যদি আমি সবাইকে আমার দিকে আনন্দ এবং সমগ্রতার সঙ্গে আলিঙ্গন করাi তাহলে তাতে কোন কর্ম উৎপন্ন হবে না। কিন্তু যদি আমি ওই জিনিস এক ব্যক্তিকে করাi যাকে আমি ভালোভাবে চিনি, তাহলে কর্ম উৎপন্ন হবে। যেহেতু সম্মিলিত আলিঙ্গনে কোন কর্ম নেই। এটা পুরোপুরি সচেতন কর্ম। সদগুরু বলেন "এইজন্য আমি কার্যক্রমে কোনো মুখকে নির্দিষ্ট ভাবে তাকাই না। আমি জানি। আমি সব সময় অজ্ঞাতকেই তাকাই। যখন আপনি কাউকে জানেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন তিনিই আপনাকে ফাঁসাচ্ছেন। এটা আপনার জন্য এবং সব অবস্থার জন্য ফল বাহির করবে। যখন আমি কোন প্রজেক্ট এর কথা বলি তখন অবশ্যই পরিচিত লোকের সঙ্গেই কথা বলি, কিন্তু আমি জানি এতে তার জন্য কোন ফল বের হবে না। কারণ এই প্রজেক্ট যে কাজের জন্য জোড়া আছে তা আমার জন্য নয়। সেটি একটি বড় উদ্দেশ্যে হচ্ছে। সার্বিক কাজ করা হচ্ছে। সেই জন্য এটা কোন জাল নয়, কারণ এতে সবার সম্মিলন আছে।"

এমনিভাবে আপনার কর্ম যদি স্মৃতি থেকে আসে তা সেটা অবশ্যই কর্ম দেবে।

সকল ব্যক্তি দু ধরনের কর্ম করতে পারে..

1) এক হল অকর্ম যা কর্মকে নাশ করে।

2) দ্বিতীয় কর্ম যা কর্মের জন্ম দেয়।

এইজন্য আপনি আপনার actionable কর্ম কেমন ভাবে প্রেজেন্ট করেন সেটা খুব মহত্তপূর্ণ।

যদি আপনি সচেতন নন, তাহলে আপনি ভাবতে পারেন যে আপনি আধ্যাত্মিক তবুও আপনি কর্মকে জন্ম দেবেন।

আজকের দিনে অচেত মনকে সঞ্চিত কর্মের দিকে দেখতে পারেন। অবচেতন মন প্রারব্ধ কর্ম এবং সচেতন মন ক্রিয়া মান কর্ম। এটা সত্যি সত্যি নয়, কিন্তু মোটামুটি বোঝার জন্য মানা যেতে পারে।

এবার আমরা আসি অবন্টিত কর্মের দিকে, যেটা হলো ভবিষ্যতে আসবে এমন ক্রিয়ামান কর্ম। আপনার অচেতন কর্ম আগে গিয়ে ফল বার করবে, যা আপনার কাল বা কয়েক বছর পর বা কয়েক জন্মের পর আপনাকে কর্মের জন্য বাধ্য করবে।

এটা বলার অর্থ এই যে আপনি অচেতন ভাবে যাই করুন, এটা আপনাকে এক এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যেখানে আরো কর্ম করতে হবে।

যদি আপনি ব্যাংক থেকে লোন নিলেন বা মর্গেজ নিলেন তাহলে আপনার কর্ম কালকের কর্মকে নির্দেশ করলো।

সেইরকম ভাবে যদি আপনার এক বাচ্চা হল তাহলে কুড়ি বছরের কর্ম তৈরি হলো বাচ্চাকে খাওয়াও স্কুলে পাঠাও কলেজ পাঠাও তাকে স্বনির্ভর হওয়ার ব্যবস্থা কর এইসব। 

এইভাবে একটি ছোট্ট কর্ম বড় কর্মের ফল দিল।

এটা একটা actionable কর্ম যা আবেগ যুক্ত হয়ে কাজ করে মানুষের চক্রের তৈরি করে, যা দিয়ে জন্ম মৃত্যুর মানবিক প্রথা তৈরি হয়।

আসল যোগীর জন্য একটাই জীবন আছে।


ক্রিয়ামান কর্ম কে সঠিকভাবে করতে পারলে কোন আবেগ যুক্ত কর্মের জন্ম হবে না। স্মৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার এটাই পদ্ধতি।

আমি বলি ব্যাংক লোন নেওয়া ভুল নয় মর্গেজ নেওয়া ভুল নয়। না পরিবার তৈরি করা ভুল। যতই কার্মিক মেমোরির জটিল হবে ততই জীবন ইন্টারেস্টিং হবে। কিন্তু লক্ষ্য হল জীবনের পদ্ধতিকে এনজয় করতে হবে এমন যেন মনে না হয় যে আপনি এতে ফেঁসে গেলেন তাহলে সব এগুলো অচেতন কর্ম হবে না।

আপনি এমন কর্ম চান না যা আপনার ভবিষ্যতে কর্ম করতে বাধ্য করে।

কর্মের ফাঁদে পড়াটা সর্বদা পছন্দের ব্যাপার মানুষের মধ্যে এই স্বাধীনতা আছে কিন্তু বেশিরভাগ লোক এমনই কর্ম গ্রহণ করেন যা আরো কর্মের জন্ম দেয় বেশিরভাগ লোক পছন্দ-অপছন্দ এর হিসাবে জীবনকে পছন্দ করেন।

কিন্তু যখন আপনি পরম ভাবে জড়িত হন, এটা সবার জন্যই স্থায়ী রূপে মিলে যায়।তাহলে আপনার পুরনো স্মৃতির কোন কর্ম হবে না অর্থাৎ ওতে কোন অনিবার্যতা নেই বা ওতে কোন ফল নেই। ওতে না পছন্দ আছে, না ঝামেলা আছে, না বন্ধুত্ব আছে, না শত্রুতা আছে। যখন আপনি এমন ক্রিয়ামন কর্ম করেন তখন যাই হোক না কেন ভবিষ্যতে কোন ক্রিয়ামান কর্মীর জন্ম দেয় না।

কিন্তু অন্যদিকে যদি আপনি নিজের চেনা অতীতের স্মৃতি হিসেবে বাস করেন তাহলে আপনি আরও স্মৃতিকে জন্ম দেবেন। চাহে সেটা শারীরিক হয় আবেগপূর্ণ হয় বা বুদ্ধিমত্তা পূর্ণ হয়। আপনি এমন কর্ম করবেন যা ভবিষ্যতে আরও কর্মের জন্ম দেবেন। এবং ভবিষ্যতে আরো কর্ম করতে হবে।

একবার যদি জানতে পারলেন কেমন করে কর্মের ধারা চলে, জড়িত হওয়া এবং উলঙ্গনের পার্থক্য কি ? বেশিরভাগ লোক জানেন না যে বিষয়কে বিনা ও লঙ্ঘন করে পুরোপুরি জড়িত হওয়া সম্ভব বটে।

হওয়া -থেকে করা -থেকে পাওয়া-

প্রত্যেক মানুষের জন্য allotted কর্ম নিজের স্তর মতো জটিলতা তৈরি করে একে বলা হয় ভৌতিক কর্ম। বাকি অংশ হল চিন্তা,ভাবনা এবং ধ্যান।

আধুনিক জীবনে সমস্যা হল যে বেশিরভাগ লোক ভৌতিক জীবন এবং ভাবনাত্মক জীবনকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেন না। আজকাল বেশিরভাগ লোক অব্যক্ত ভাবনাতেই বাঁচেন।এই জন্য তাঁর ভাবনাত্মক শক্তি ভেতরে থেকেই গুমরে গুমরে মরে,তার স্বাস্থ্য এবং উন্নতির হানি পৌঁছায়। এর কারণেই হতাশা এবং মানসিক রোগ হয়।

 আমেরিকার কুড়ি শতাংশ লোক মানসিক রোগের শিকার। পৃথিবীর ৯০% লোক তাদের ভাবনার পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেন না। তাঁরা প্রেম থেকে ভয় পান, আনন্দ থেকে ভয় পান, দোষ থেকে ভয় পান, সবকিছু থেকে ভয় পান, জোরে হাসার সমস্যা, জোরে কাঁদা সমস্যা। আসলে এখন আমরা এক restrictive কালচার বানিয়ে ফেলেছি।

এই এলটেড কর্ম এর বড় অংশ ফিজিক্যাল একটিভিটির জন্য রাখা আছে। আজও পরিচিতির একটা বড় অংশ হলো শরীর। এলোটেড কর্মের নব্বই শতাংশ কর্ম বাহ্যিক কর্মের মাধ্যমে ঘটে। কিন্তু আজকের জমানায় শরীরের কার্যকারিতা কমে গেছে, কারণ বেশিরভাগ লোক শরীরকে বেশি পরিশ্রমের জন্য ব্যবহার করেন না। এজন্য শরীরের শক্তি বদ্ধ হয়ে থাকছে। যার কারণে শরীরে রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যক্তি  উদ্বিগ্নতা এবং অলসতায় ভোগেন এর কারণ আজকাল ফিজিক্যাল এনার্জি বদ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু দেখবেন যদি আপনি পুরোপুরি জড়িত থেকে কিছু কর্ম প্রত্যেক লেভেলে করতে থাকলে তা আপনাকে শক্তি দান করে, ক্লান্তি দেয় না।

যখন শারীরিক ক্রিয়ার জন্য এলোটেট কর্ম ব্যবহার হয় না, তখন আপনি মেডিটেশনও করতে পারেন না। কারণ ওই বদ্ধ এনার্জি আপনাকে বিরামহীন করবে এবং আপনাকে অসুস্থ করবে।

রোগের কিছু অন্য কারনও আছে.. পরিবেশ, কর্মিক কারণ, বংশগতি ইত্যাদি থেকে নিজের কর্ম পর্যন্ত যাতে এনার্জি নির্দিষ্ট পথে চালিত হয়ে রোগ হয়।

 তবুও অনেক লোক অসুস্থ হন তার কারণ এলোটেড কর্ম সঠিকভাবে সামলাতে পারেন না। যখন এলটেড কর্ম শেষ হতে শুরু করে দেখবেন বৃদ্ধ বয়সে লোকের ঘুমের পরিমাণ কমে যায়। এবং যখন ব্যাক্তি ঘুমান তখন গভীর ঘুমে ঘুমান। এটা একটা সংকেত যে এলোটেড কর্ম শেষ হতে চলেছে। যে ব্যাক্তি আধ্যাত্মিক পথে যান তার জন্য এলটেড কর্ম হল দুধের উপর বসা সরের মত। যদি আপনি ভালোভাবে দুধকে গরম করেছেন তবে বেশি সর পড়বে। এজন্য আধ্যাত্মিকতার পদ্ধতি হলো আপনাকে নিজে থেকে নিজেকে গরম করার পদ্ধতি। যা  কার্মিক গুদামঘর কে বেশি সে বেশি খালি করে এবং এটা হয় সচেতনতার সঙ্গে। প্রত্যেক মুক্তি চাওয়া ব্যক্তির সেটাই কাজ। কর্মকে এটেন্ড করে  কর্মকে শেষ করা। এটা অপেক্ষা করার দরকার নেই যে কর্ম আপনার জন্য কর্ম দেবে।


কর্ম কেন? কি করেই বা কর্ম আরম্ভ হল? এই কর্মের শুরুই বা কোথায়? কেমন করে এই নাটক শুরু হলো? 

এটা একটা বড় প্রশ্ন।

বলা যায় এইসব শুরু হল অসীম শূন্য থেকে। সেই ডাইমেনশন সেখানে কোন স্মৃতি ছিল না। পুরোটাই শুদ্ধ বুদ্ধিমত্তা ছিল। যার না কোন আকার ছিল না। কোন গঠন না, কোন রং না,বলা যায় কিছুই ছিল না তবু ও সেটা ছিল। যাকে বলা হয় শিবা অর্থাৎ পরম শূন্য যার আকার নাই। সেটাই সৃষ্টির প্রারম্ভ। এই সৃষ্টি শুরু হলো সেটা শুধু একটি তরঙ্গ। প্রয়োজনীয় স্মৃতি যা কিছুতেই ডুবে নেই। আপনি আপনার পিতা থেকে সৃষ্টি হলেন অর্থাৎ আপনি তৈরি হয়েছেন। এর অর্থ কর্মের স্মৃতি হল প্রথম তৈরি করা আকার। কিন্তু প্রথম আকার এলো কিভাবে? সেটা প্রকৃত বিষয় হল কিভাবে? এটা হল শিব অর্থাৎ যা নেই। দিব্য পরমাত্মা, যে সব সৃষ্টির আধার এবং সেখান থেকেই সৃষ্টি শুরু। শিব সৃষ্টির ঈশ্বর, সাকার রূপ নাম। কর্মহীন, তারপর গতিপ্রকৃতি সৃষ্টি হল যা হল শক্তি, শূন্যতার সক্রিয় রূপ। শক্তি শিবের পাশে গেলেন দুজনেই ক্রীড়া আরম্ভ করলেন। এখানে প্রথমে কর্ম মানে মিলন কে বুঝায় এবং সেখান থেকেই সৃষ্টির উৎপত্তি। শিব লিঙ্গ হল শিব শক্তির মিলিত রূপ। শিব এবং শক্তির মিলন থেকে সৃষ্টি গতিরূপ হল সৃষ্টি, পালন এবং ধ্বংস। এবং এমনিভাবে সৃষ্টির ধারা চালু হলো সময় স্থান, সময় এবং আকার জন্ম এবং মৃত্যু।

ধীরে ধীরে আকার থেকে আরও আকার সৃষ্টি হল। স্মৃতি থেকে আরও স্মৃতি তৈরি হতে থাকলো। কার্মিক চক্র গতিশীল হলো। পদার্থবিদেরা যাকে বিজ্ঞানে বলেন বিগ ব্যাং থিওরি। যদি আপনি অটোমোবাইল এর সাইলেন্সার খুলে ইঞ্জিনকে চালু করেন তাহলে যে আওয়াজ আরম্ভ হয় কিন্তু একে throttle করা হলে ইঞ্জিন গর্জন করে। অর্থাৎ একসঙ্গে কয়েকটি bang মিলে এক গর্জন তৈরি হয়। এমনিভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের বিগ বাং ও গর্জন করে। পদার্থবিদ আরো বলেন সৃষ্টির প্রথম আকার ellipsoidal  ছিল। যার আকার শিব লিঙ্গের আকারের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আশ্চর্য কথা হলো যদি আপনি চেম্বারের বাইরের শক্তির ধরনকে দেখেন তাহলে তার আবাসে প্রোটোন, নিউট্রন এসবই বাহির হবে। অর্থাৎ এর অর্থ সহজে তা দিয়ে দেখা যায় যে কিছু নয় থেকে কিছুর সৃষ্টি হয়েছে। এখন আকারের জন্য যেমন স্মৃতি প্রথম থেকেই তৈরি আছে। মন্ত্র আণবিক পারমাণবিক এবং আবর্তনকারী স্মৃতি হল যা এক সাপকে গাছ থেকে আলাদা দেখায়।

এইজন্য প্রথম আকার তৈরি করার জন্য বুদ্ধিমত্তায় প্রথম বানানো বানালো এরও তো প্রথম সৃষ্টির কর্ম কর্ম তৈরি কে বলা হয়।


আশ্চর্য নয় শিব দেবতা হিসাবে, যার কোন পিতা-মাতা নাই, বংশাবলি নাই, কোন আদি নাই, তাকে বলা হয় স্বয়ম্ভু। যিনি নিজেই নিজেকে বানিয়েছেন। এখানে সৃষ্টির আধার এবং বাকি সৃষ্টির আধারের মধ্যে পার্থক্য আছে।

সৃষ্টির উৎস হলো এক শুদ্ধ বুদ্ধিমত্তা যে নিজেই নিজেকে স্মৃতি তৈরি করে। এবং বাকি সৃষ্টির স্মৃতি কে বুদ্ধি বলা হয়।

যখন চক্রাকার সময় জন্ম নিল তখন স্মৃতি মহত্ত্ পূর্ণ হয়ে গেল। যেমন প্রোটন নিউট্রন এবং ইলেকট্রন যে  হাইড্রোজেন আটম এ থাকে তেমনি অক্সিজেন এটম এই থাকে কিন্তু হুবহু অনুরূপ ভাবে ব্যবহার করে না। কারণ পারমাণবিক স্মৃতি অনেক জটিলতা থেকে সৃষ্টি হয়।এই স্মৃতির জটিলতার স্তর থেকে গঠনের স্তরের এবং আকারের পার্থক্য ঘটে।

কনা থেকে পরমাণু, অনু, অ্যামিবা, মাছ, থেকে মানুষের অনেক পার্থক্য হয়, পরে শুধু পদ্ধতিতে স্মৃতিতে জটিলতার মাধ্যমেই পার্থক্য সৃষ্টি হয়।


কর্ম কি একটি খারাপ শব্দ?:-

কি স্মৃতি একটি বোঝা? কর্ম কি একটি বাধা? সংসার কি একটি অভিশাপ? জীবন কি সব থেকে বড় দুঃখ? কিছু ধর্ম আছে যা দেখানো শুরু করেছে মানুষ জন্ম একটি শাপ এবং পাপ যুক্ত।তারা মানুষ জন্মকে সাপ রূপে দেখায় আশীর্বাদ হিসাবে দেখায় না, আমাদের এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সব সময় স্মৃতি আপনার সিস্টেমকে পাঁচ ইন্দ্রের মাধ্যমে স্নান করাতে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে কোন ভুল নেই। এই জন্ম হয়েছে তো জন্ম আপনার কাজের জন্য হয়েছে। যদি আপনি স্মৃতিকে হটিয়ে দেন, তাহলে জীবনকে একটুখানি জন্যও সামাল দিতে পারবেন না। আপনাকে এই শরীর ছেড়ে সরে যেতে হবে। কর্মই হলো যে মন এবং শরীরকে একসাথে ধরে রাখে। যদি আপনি আপনার সব কর্ম বাহির করে দেন, তাহলে আপনার আত্মা এবং মন শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যাবে।

 আপনার সফটওয়্যারের সমস্যা নেই এই সমস্যা তখন তৈরি হয়  যখন এটা আপনার জীবনের উপর শাসন করে। কর্ম শুধু আপনার স্মৃতি এটা না ভালো না খারাপ। আপনার এটা অনুভব হয় কারণ আপনি একে এমন নজরে দেখছেন সেটা হল আশ্চর্যজনক এবং ভয়ংকর হিসাবে। কর্ম স্মৃতির সমস্যা হলো যে এটা আপনার সাথে লেগে আছে।

যা কিছুই ঘটে তা এই আয়নায় আটকে যায়। তখন সেটি আর আয়না থাকে না, এই জন্য তখন এই আয়না বাস্তব জীবনকে দেখতে পারে না। এই জন্য তখন আপনার অনুমান ধুঁধলা হয়, সঠিক হয় না।

কোন কর্ম আপনাকে সীমার মধ্যে বাঁধতে পারেনা। দুঃখের বিষয় এই যে আপনি নিজেই নিজে নির্মাণ দিয়ে বন্দী হয়ে আছেন। জেলবন্দী হয়ে আছেন । এই দেওয়াল আপনি অচেতনতা থেকে সৃষ্টি করেছেন, যা আপনাকে বের হতে দেয় না। আপনি এর নির্মাতা এবং নিজেই নিজেকে জেলবন্দি রেখেছেন আপনি নিজেই এক চতুসীমা বানিয়েছেন যা থেকে নিজেই বের হতে পারছেন না।

এর থেকে বেরোনোর উপায় হলো কর্মযোগ।


কর্মযোগ:-একবার এক ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতার পিপাসা জন্মালো। সে সময় আধ্যাত্মিকতার অভ্যাসের জন্য লোক বনে গিয়ে তপস্যা করত। তিনি ও নিকটতম বনে গিয়ে এক গাছের নিচে বসে পদ্মাসনে ওম মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। তিনি ওম মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। যোগ করতেন আবার খিদে লাগলে পাশের শহরে যেতেন, খাবার খেয়ে ফিরে এসে আবার গাছের নিচে বসে জপ করতেন। একদিন যখন খাবার খেয়ে গাছের নিচে এলেন তখন এক বিকলাঙ্গ হৃষ্টপৃষ্ট শিয়ালকে দেখতে পেলেন। তার আগের পা ভাঙ্গা ছিল। তাঁর আশ্চর্য লাগলো, জঙ্গলে তো সবল জন্তু দুর্বল জন্তুদের মেরে ফেলে। তাহলে এই শৃগাল হৃষ্টপুষ্ট কি করে আছে? তাকে এই ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগল। তিনি আবার সেই তপস্যায় লীন হয়ে গেলেন। সন্ধ্যায় যখন তিনি তপস্যা করছিলেন তখন সিংহের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি ধ্যান ছেড়ে তাড়াতাড়ি গাছে উঠে বসলেন। গাছ থেকে দেখতে পেলেন এক সিংহ বড় মাংসের টুকরো নিয়ে এসে সৃগালকে খেতেদিল এবং সিংহ চলে গেল। সৃগাল খাবার খেতে লাগলো। এটা ব্যক্তি কি আশ্চর্য করল।  তিনি রোজ ধ্যান করতে লাগলেন কিন্তু এই শেয়ালের ঘটনা তাঁর হজম হলো না। একজন সিংহ শেয়াল কে খাবার খাওয়াচ্ছে, এটা আশ্চর্যের বিষয়। অবশ্যই এটা ঈশ্বরের আদেশ হবে। তাহলে ঈশ্বর কি বলতে চান? এই প্রশ্ন তার মনে চলতে থাকলো। তিনি কয়েকবার ভাবনায় পড়ে গেলেন শেষমেষ এই সিদ্ধান্তে এলেন যে যদি এক সিংহ এক শৃগাল কে খাবার খেতে দিচ্ছে, তাহলে আমি কেন শহরে গিয়ে খাবার খাব? ঈশ্বর মনে হয় আমাকে বিশ্বাস দিচ্ছেন যে আমিও ধ্যানে মনোযোগ করি। আমিও খাবার পেয়ে যাব।

সেই জন্য ব্যক্তি পরের দিন থেকে অম জব চালু রাখলেন এবং জব স্থান থেকে সরলেন না ভাবলেন তার খাবারও আপনা আপনি এখানে চলে আসবে। দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ দিন পার হয়ে গেল কোন খাবার এলো না। শরীর দুর্বল হয়ে গেল সাত দিন হয়ে গেল প্রাণ প্রায় জায়গায় যখন যোগী প্রায় মরতে চলেছে তখন এই ব্যক্তি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সে যোগীর ওই অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করল," কি হলো বাবাজি? আপনি এমন কেন পড়ে আছেন?" যোগী বললেন "এটা ঈশ্বরের ইচ্ছে এবং আমি সেটা অনুসরণ করছি।"

বলল "কি আদেশ?" যোগী জঙ্গলে শেয়ালের কাহিনী শোনালেন।

ব্যক্তিবললেন ,"তাহলে এতে কি বার্তা আছে? যোগী বললেন ইশারা আছে যে,"তুমি জপ করো কর, খাবার পেয়ে যাবে।"

তখন পথিক বললেন ,"অবশ্যই এতে ঈশ্বরের বার্তা আছে কিন্তু কেন আপনি খোঁড়া শেয়াল এর ভূমিকা নিচ্ছেন? কেননা উদার সিংহের ভূমিকা গ্রহণ করুন।"

আমাদের জীবনেও এমনি হয়। আমাদের দুটি বিকল্প আছে ..সবার জন্য কাজ করো অথবা খোঁড়া থেকে ইচ্ছা শক্তিকে খোঁড়া করো।

তবে কেন মানুষ এই বুদ্ধিমত্তার সঠিক দিশা পাওয়া সত্ত্বেও দুঃখজনক ভাগ্যকে স্বীকার করে নেয়? এটা কি ঠিক? কেননা আমরা প্রথমটাকে স্বীকার করি এবং দায়িত্ব গ্রহণ করি?

যখন আমরা বলি আমাদের জীবন আমাদের কর্ম। নিজের জীবন নিজের দ্বারাই নির্মিত। কতই না স্বাধীনতা আছে। তবু আমরা কত কুটিলাতার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে চাই। যার ফলে আমাদের জীবন উদার সিংহের মতো হওয়ার বদলে ল্যাংড়া শেয়ালের মতো হয়ে যায়।


বিশ্বের বেশিরভাগ সংস্কৃতি এটাই বলেছে ঈশ্বর আমাদের জীবনের পথ তৈরি করেন। এই জন্য আমাদের ঈশ্বরের দিকে দেখা উচিত। কিন্তু প্রথম থেকেই আমরা জানি উপরের দিকে তাকিয়ে কিছু হবে না। কারণ এই ঘুরন্ত পৃথিবী বলতে পারে না কোনটা উপর? আপনার কর্ম আপনার থেকেই তৈরি হয়। তা সে জেনেই হোক বা অজান্তেই হোক, জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে আপনি নিজেই কর্ম তৈরি করেন। এই জন্য কর্মের জন্য নিজের দিকে তাকাতে হবে, উপরে নয়।


একবার যদি এটা আপনি বুঝতে পারলেন, তাহলে আপনাকে আপনার জীবনের দায়িত্ব জ্ঞাত হয়ে যাবে এবং আপনি সচেতন হবে বাঁচতে চালু করে দেবেন, অসচেতনতা ভাবে নয়।

অচেতন জীবন সহজ মনে হয়, কারণ তাতে আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি নিজের নমুনা এবং বাধ্যতা দিয়ে চলতে থাকবেন। কিন্তু এ অচেতন জীবন আপনাকে মুক্ত করতে পারবে না। যেমনটা আপনি করতে চান। এটা আপনার এক বাধ্যতা এবং হঠাৎ ভাবে চাওয়া এবং দয়া দিয়ে তৈরি জীবন হবে।

অন্যদিকে এক সচেতন জীবন আপনাকে সব থেকে বড় সম্ভাবনা কে ফলিভূত করবে আপনাকে মুক্ত করবে।

বেশিরভাগ লোকের জীবন ভেতরের ঘাটের ইস্তিত্বে আছে কারণ তারা বিশ্বাস করেন উপরে ঈশ্বর আছেন এবং তার চার-পাঁচ হল তাকে ঈশ্বর জীবন দিয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু যখনই আপনি দেখছেন যে আমার প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা সীমাহীন। তখন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

এখন আপনি নির্মাণের উৎস কে স্বর্গ থেকে এনে নিজে নিয়ে নিয়েছেন। এখন আপনাকে কোন পার্থক্য পড়ে না যে স্বর্গের জন্য নিশ্চিত টিকিট আপনার আছে কিনা?

এবার আপনি বুঝতে পেরেছেন যে জীবন আপনার মধ্যেই আছে তাই আর টিকিটের দরকার আপনার নেই।

কর্মের সিদ্ধান্ত এটাই যে আপনার কোন পরিচয় বিশ্বাস থেকে, আদর্শ থেকে, ধর্ম থেকে, নস্যাî নিয়ম থেকে তৈরি পরিচয় শুদ্ধ নয়।

একজন মানুষ দ্বিতীয় জনের প্রতি যতই দোষ করে, সেটা এই ভেবে হয় যে জীবনে এখানে ভালো নেই, ওখানে ভালো আছে। কর্মের অর্থ আপনি নিজেকে সব থেকে ভালো স্বরূপে পেতে পারেন এবং এর জন্য সবথেকে ভালো করতে হবে। এটাই জীবন। আপনি নিজেই নিজেকে দিব্যকে গ্রহণ করে ভালো করতে পারেন। স্বর্গও যেতে পারেন। এবার আপনি বলতে পারেন কর্মের অর্থ কি সম্পূর্ণ দায়িত্ব? তাহলে আবার আশীর্বাদ কি? আমাদের জীবনে ঈশ্বরের ভূমিকাযই বা কি? ঈশ্বর কি কর্ম করেন না?

না করেন না। একটু ভেবে দেখুন। যখন আমরা "দিব্য" শব্দটি বলি তখন আমরা কি বোঝাতে চাই? বৃত্তের অর্থ সৃষ্টির উৎস। কিন্তু এই উৎস কোথায়? আপনার মধ্যেই আছে। তাহলে প্রশ্ন হল আপনি কি চান? হাড় মাংস চামড়া থেকে তৈরি মাত্র এই শরীরকে জানাই কি উদ্দেশ্য? না আপনার মধ্যে সৃষ্টির নির্মাণকে জানার দরকার আছে? কোনটা চান?

শুধু আপনি যদি ভৌতিক অবস্থাকে জানেন, তাহলে বাঁচার পদ্ধতি নির্দিষ্ট।

যদি আপনি মানসিকতা এবং ভাবনাত্মক দিশাকেও জানেন, তাহলে আপনি গভীর জীবন কি জেনেছেন।

কিন্তু যদি আপনি জীবনের গভীরে যান তো আপনি আশীর্বাদের প্রাপ্তি হবেন আপনার সারাজীবন পরম দিব্য হয়ে যাবে।


একাকী চলা:-

আপনি অন্যের সঙ্গে একসাথে বাইরের দুনিয়াতে চলতে পারেন। কিন্তু আন্তরিক দুনিয়ায় চলাটা আপনাকে একা চলতে হবে নিজের কর্ম আপনি অন্যকে দিয়ে করাতে পারেন না।

এক যোগী জঙ্গলে যাচ্ছিলেন হঠাৎ তাকে ডাকাত ধরে নিল এটা ওই দোসুর পেশা ছিল দস্যু যোগীকে মারতে যাচ্ছিল তখন যোগী দস্যুকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি যে এই দুষকর্ম করছ তার কারণ কি? দস্যু বললো আমার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য করি। আমাকে আমার ছেলে, মেয়ে, বৃদ্ধ মাতা পিতা সবার ভরণ পোষণ করতে দস্যু বৃত্তি করি।

যোগী বললেন যদি তুমি এসব তাদের জন্য করছ কিন্তু তারা কি তোমার এই দুষকর্মের পাপের ভাগ নেবে? তুমি বাড়ি যাও এবং জিজ্ঞাসা করে এসো তো। আমাকে এখানে বেঁধে রাখো যাতে আমি পালাতে না পারি এবং বাড়ির সবাইকে জিজ্ঞাসা করে এসো। জেনে এসো তারা তোমার কর্মের ভাগ নেবে কি?

দস্যু সেটাই করলো।যোগিকে বেঁধে রেখে ঘরে গেল। গিয়ে পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞাসা করল যে তারা তার দুষ্কর্মের ভাগী হবে কিনা?

দস্যুর বাবা, মা, স্ত্রী ,সবাই তাকে একই কথা বলল আমাদের ভরণ পোষণ করা তোমার দায়িত্ব, আমাদের দেখভাল করা তোমার দায়িত্ব, তা তুমি কিভাবে করবে? সেটা আমরা কি জানি? আমরা কেন তোমার কর্মের ভাগী হব?"

অর্থাৎ দস্যু জানতে পারল তার কর্মের ভাগী হওয়ার জন্য তার পরিবারের কেউ রাজি নয়।


এমনিভাবে সত্যি সত্যি কর্মের ভাগ কাউকে দেওয়া যায় না। অবশ্য কিছু কর্ম সঞ্চিত কর্ম হয়, কুলবেদনাও হয়, প্রত্যেক ব্যক্তির এলটেড কর্মও হয়। তা সে কর্ম হোক বা প্রেম হোক, সচেতনতা হোক বা আনন্দ, কিছুই পার্থক্য পড়ে না। সবকর্ম নিজের নিজের হয়।


কর্মের ধারা থেকে বেরোনোর রাস্তা:-

আমরা আগেই দেখেছি  যোগ বিজ্ঞান বলে যে প্রত্যেক মানুষ পাঁচ শরীর দিয়ে তৈরি ভৌতিক শরীর, মানসিক শরীর, এনার্জি বডি, etheric বডি, এবং bliss বডি।

কর্ম প্রথম তিন স্তরে অঙ্কিত হয় যদি আমরা প্রথম তিন স্তরকে নিয়ে ক্রিয়া করি তাহলে আমরা কর্মের জাল থেকে মুক্তি পেতে পারি। মানুষ মুক্তির কথা তো বলেন কিন্তু কর্মকে সঠিকভাবে জানা নেই তাই নিজের কর্মের জালে আবার ফেঁসে যান।

কর্মের জাল হল নিজের জাগরুক তাকে হারানো এতে শিকারি নিজেই শিকার হয়ে যায়। নির্মাতা নিজেই নির্মাণ হয়ে যায়। এক মাকড়সা নিজের জালে ফেঁসে যায়।

এক গরম রোদ্দুর দুপুরে শংকরন পিল্লাই মাছ ধরতে গেলেন। যেহেতু গরমের দিন ছিল তাই এক কেস বিয়ারও সঙ্গে নিয়ে গেলেন। যেহেতু মাছ লাগছিল না তাই বিয়ার পান করতে করতে তার নেশা বেশি হয়ে গেল। গরম সূর্য এবং দুপুর তার উপর beer ফলে তার ঘুম ঘুম ভাব লাগছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ এক বড় মাছ টোপ খেয়ে ফেলল। সংকরন পিল্লাই  বড়শিকে টানতে লাগলো। কিন্তু নেশার কারণে সে মাছের টানে নিজেই পিছলে গিয়ে নদীতে পড়ে গেল।

একটি ছেলে তার বাবার সঙ্গে নদীর কিনারা দিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটি সংকরন পিল্লাই কে নদীতে পড়ে যেতে দেখে বাবাকে বলল বাবা দেখো "মানুষ মাছ ধরছে? না মাছ মানুষ ধরছে?"


এমনিভাবে নিজের জীবনেও চলে দেখতে হবে আপনার কর্ম আপনাকে চালাচ্ছে? না আপনি আপনার কর্মকে চালাচ্ছেন। এমনিভাবে আপনার কর্ম আপনাকে টানছে, আর আপনি যদি সচেতন না থাকেন তাহলে আপনাকে আপনার কর্মই টেনে নিয়ে যাবে। আপনি অনেক কিছুই করে নিলেন বাড়ি,ঘর, ব্যবসা, বউ, বাচ্চা, ক্লাব মেম্বারশিপ সবকিছু। কিন্তু পেছনে দেখুন, আপনি মাছ ধরেছেন? না মাছ আপনাকে ধরেছে?

এবার সময় হয়েছে,এসক নাটক বন্ধ করার। মাকড়সার জাল থেকে বেরোনোর, একটাই উপায় আছে এবং তা হল অচেতনতা থেকে সচেতনতার দিকে যাওয়া। বিশ্বের সব যোগীদের জানা আছে। আপনাকে এটা জানার রাস্তা হল যোগীদের রাস্তা। সে রাস্তা হল "কর্মযোগ" এর রাস্তা।

                                        "


কর্মযোগ কি?:-

কর্মযোগ হলো আপনার মুক্তির পথ। আপনি যতই কার্যকারিতায় জুড়ে যান, তাতে হয়তো আপনি ঝামেলায় পড়েন, না হয় মুক্ত হয়ে যান।

যদি আপনি ঝামেলায় পড়েন তাহলে সেটা ''। এবং যদি আপনি মুক্তির পথে হন তাহলে সেটা 'কর্মযোগ'।

 কর্মযোগ এর অর্থ কর্মে ব্যস্ত হওয়া নয়। এর অর্থ এমনই এক কর্মে যুক্ত হওয়া যা আপনাকে মুক্ত করবে এ একপ্রকার কর্ম যা আপনার প্রবৃত্তিকে উচ্চস্থানে নিয়ে যাবে। মোক্ষ লাভের পথে নিয়ে যাবে।

আবার কেউ ভাবেন কর্মযোগের অর্থ হলো সমাজসেবা,সমাজসেবা কর্ম যোগের অংশ হবে যদি সেটা স্বেচ্ছায় করা হয়,বাধ্য করে নয়। কর্মযোগ এটা মূল্য রাখে যে আপনি কাজটি কিভাবে করেছেন।

ভালো কর্ম যদি বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে সেটা কর্ম যোগ হবে না। এতে মুক্তির বদলে সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। এখানেই ভালো কর্ম এবং কর্মযোগ এর মধ্যে পার্থক্য এখানেই ইচ্ছাশক্তি বিষয়টি আছে।

যদি কর্ম করে বন্ধন আসে তাহলে সেটা করব আর কর্ম থেকে যদি মুক্তি আসে তাহলে সেটা কর্মযোগ। যদি আপনি কর্মকে খারাপ ভেবে,অথবা অসন্তুষ্ট হয়ে করলেন, তাহলে সেটা কর্ম, আর যদি কর্মকে আনন্দ ভাবে করলেন, খুশি হয়ে করলেন, তাহলে সেটা কর্মযোগ।


একদিন তিন ব্যক্তি এক্ই ক্ষেত্রে কাজ করছিলেন। এক যাত্রী পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেনতাঁরা কি করছেন সেই বিষয়ে।

তিনি প্রথম ব্যক্তি কে জিজ্ঞাসা করলেন,"আপনি কি করছেন?" 

প্রথম ব্যক্তি উপরের দিকে তাকালেন এবং বললেন দেখতে পাচ্ছ কি? পাথর কাটছি।

এবার যাত্রী দ্বিতীয় ব্যক্তির পাশে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন "আপনি কি করছেন?" 

"আপনার কি মনে হয় আমরা কি করছি?" দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেন "দেখছেন তো? রুজি রুটির ব্যবস্থা করছি। পেট তো ভরতে হবে, নাকি?"

যাত্রী এবার তৃতীয় ব্যক্তির পাশে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি করছেন ওই ব্যক্তি খুশি হবে জবাব দিলেন "একটা বড় মহাপুরুষের সুন্দর মূর্তি তৈরি করছি।"

এখানে কাহিনীতে তিন ব্যক্তি একই কাজ করছিলেন। কিন্তু ওই কাজটি প্রথম ব্যক্তির জন্য হলো পাথরকাটা কাজ। 

দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য হলো রুজি রোজগারের কাজ এবং 

তৃতীয় ব্যক্তির জন্য হলো কিছু সুন্দর তৈরি করার চেষ্টা। যাতে তিনি মন দিয়ে আনন্দ ভাবে কাজটি করছেন।


তাহলে ভেতরের ব্যাপারটা কি? জীবনের প্রত্যেক কর্মই এমন হয়, এটা জীবন বাঁচার বস্তু নয়। এর অর্থ হল একে হৃদয় দিয়ে, মন দিয়ে, কাজটি করতে হবে। বিশ্বকে উন্নত করার এবং আনন্দযুক্ত করার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতে হবে।

আজকের পৃথিবীতে সমস্যা হল যে আমরা ঠিক আর ভুল এর কঠিন বিচার বানিয়েছে। যখন আমাদের মন এত প্রদানুক্রমে ফেঁসে আছি যে সকল কাজকে আনন্দপূর্ণ ভাবে এবং পুরোপুরি যুক্ত হয়ে করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।


আপনি যাই বলুন ছোট হোক বা বড় হোক, সব ব্যবস্থা পছন্দ-অপছন্দ, মোহ এবং ত্যাগ, এসব তো চলতেই থাকবে। কিন্তু আপনি যদি সব জিনিসকে ছেড়ে এক সমতার দৃষ্টিতে দেখেন, তাহলে আপনার জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হবে। তা সে প্রতিষ্ঠান হোক বা আপনার পরিবারের কিছু ম্যানেজ করার ব্যাপার।


যৌগিক নিয়মে কর্তব্য বলে  কারো মাথায় যদি কর্তব্য বলে কিছু থাকে তাহলে সেটাকে যেন মানসিক চাপ হিসাবে না নেয়। তার মাথায় যদি কর্তব্যের বোঝা জিনিসটা লেগে থাকে তাহলে কোন কর্মকে সেই উপভোগ করতে পারবে না। পরিবর্তে যেটাই করবেন তাতে যেন প্রেম ভাব থাকে। আপনি কোন কাজকে যদি প্রেম এবং ভালোবাসা দিয়ে করেন তাহলে সে কাজে মানসিক কষ্ট থাকে না দুঃখ দায়ী কিছু থাকে না।


যদি কর্ম দুঃখ দায়ী হয় তাহলে তাহলে চারদিকে দুঃখই বণ্টন করবেন এবং যদি আপনি আনন্দের সহিত কর্ম করেন তাহলে সে কাজ আপনি 24 ঘন্টা ধরে করতে পারবেন।

কর্তব্যের বিচার নৈতিক এবং কর্তব্য পরানো তার প্রথা থেকে এসেছে, আমরাই একে বানিয়েছি, যাতে যদি মনুষ্যত্ব কাজ না করে তাহলে এটা মাঠে ছেড়ে কাজ করে বেরনোর প্রথা।

কর্মযোগের অর্থ হলো সব কর্মকে কর্তব্যের মধ্যে বাঁধতে নেই বরং এমন থেকে কর্ম করো যাতে সেটা জীবনের প্রসাদ বলে মনে হয়। যখন কর্মকে এমনভাবে করা যাবে তখন জীবন কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।


কর্মযোগের প্রতি দৃষ্টিকোণ (অবগতি এবং ত্যাগ):-

কর্মকে দু ভাবে শেষ করা যেতে পারে। হয় সচেতনতা সঙ্গে কর্ম করে, না হয় সম্পূর্ণ ত্যাগের সঙ্গে কর্ম করে। যদি আপনি দুটি পদ্ধতিতেই করতে পারেন তাহলে আপনার মুক্তি হয়ে যাবে। এই দুটোই হলো কর্মযোগের ক্রিয়া। এবং এই দুটো ছেড়ে যা কর্মই করেন তাতে নতুন কর্ম সৃষ্টি হতে থাকবে। 

ত্যাগ হলো জগতে একটি কঠিন ক্রিয়া এটা পাওয়া খুবই কঠিন।


আপনাদের মধ্যে কতগুলি পরিবার আছে শুনেছেন যে সেই পরিবারের মাতা পিতা রোজ কয়েকবার হেসেছেন? বেশিরভাগ লোক এতটাই গম্ভীর হয়ে  নিজের কর্তব্য বোঝার কারণে ফেঁসে যান, নিজের বাচ্চাকে সঠিক তৈরি করা বাচ্চা বড় করা এসব কাজে ফেঁসে জন যে হাসার সময় বের করতে পারেন না,আনন্দ করার সময় বের করতে পারেন না।

এটা সরল। আপনি কথা বলুন না জুন কাজ করুন খেলুন খাবার রান্না করুন গান গান যাই করুন সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করুন। সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করুন অথবা সম্পূর্ণ ত্যাগ দিয়ে করুন। দুটো রাস্তায় আপনার জন্য খোলা আছে।


কিন্তু যদি আপনি ত্যাগ বা সচেতনতা দিয়ে কর্মকে করতে না পারেন, তাহলে আপনি সৃষ্টিতে জড়িত হয়ে পড়বেন আপনার আরো কর্ম জমা হবে যা পরে সম্পন্ন করতে হবে।

প্রথমে এটা বুঝুন যে মানসিক সচেতনতা এবং জাগরুকতা এক নয়। জাগরুকতা লজিক্যাল মনের সঙ্গে কিছু নেই, জাগরুকতা মানুষের গভীরতা থেকে বাহির হয়, যাকে বলা হয় চিত্ত। অর্থাৎ মুক্ত সচেতনতা। একবার যদি আপনি সেই গভীর স্তরে সম্পর্ক করে নিতে পারলেন, তাহলে আবার জাগরুকতা কষ্টহীন হয়ে যায়। এটা এমন কিছু নয় যা আপনি করেন, এটা কোন কর্ম নয়। এটা হলো মানসিক স্থিতি।

যদি আপনি মানসিক, দৈহিক এবং জীবনী শক্তির তিনটের একসাথে একসারালরেখায় আনতে পারেন, তাহলে তাকে জাগরুকতা বলা হয়। যদি এটা হয়ে যায় তাহলে তাকে একত্রতাও বলা হয়। তখন এই স্থিতি কে  বলা হয় "যোগস্থিতি"।


ত্যাগ কি?:-

এর অর্থ হল আপনার প্রবণতা এতই বেশি যে আপনি নিজেকেও ত্যাগ করতে রাজি আছেন। অনেক লোক ভাবেন ত্যাগ এর অর্থ কিছু বিষয়বস্তু ত্যাগ। কিন্তু এ ত্যাগ হলো নিজেকে ত্যাগ করা। আপনি যা হতে চান তা হওয়ার জন্য যা কিছু ত্যাগ করতে রাজি।

 যখন আপনি কোন কর্মে পুরোপুরি ভাবে ডুবে যান, তখন আপনার পূর্ব-কর্ম আপনার উপর প্রভাব ফেলতে পারেনা। 

কয়েকবার কোন স্পোর্টস পারসন অথবা কোন শিল্পী এই অবস্থা লাভ করেন। কিন্তু এই স্থিতিতে সব সময় স্থায়ী থাকতে পারেন না। কর্মে গভীরভাবে ডুবে থাকা স্থিতি আপনাকে মুক্তির অনুভব করায়, কিন্তু এই স্থিতি সব সময় থাকে না। 

যোগ হল ওই স্থিতিকে স্থির রাখার অনুভূতি। হয়তো আপনি এমন কর্ম করলেন যে কর্ম সার্বিক, আপনার জন্য নয়, তাহলে দেখবেন আপনার কর্ম করার ক্ষমতাও অসীম হয়ে যাবে। আপনি ২৪ ঘন্টা বিনা ক্লান্তিতে সক্রিয় থাকতে পারবেন। এটা কর্মযোগের উল্লেখকারী বস্তু হয়।


আধ্যাত্মিকতার অর্থ গাছের নিচে বসে অর্ধ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা নয়, আধ্যাত্মিকতার অর্থ পঙ্গুতা নয়, এর অর্থ আপনার ক্ষমতা কে সীমিত করা নয়, এর অর্থ আপনার কর্ম ক্ষমতা বাড়ানো। 


একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি খাবার খেতে পারেন, কাপড় ধুতে পারেন, পায়ে চলতে পারেন, কাজ করতে পারেন, ম্যানেজ করতে পারেন, ব্যবসা করতে পারেন, যা চান তাই করতে পারেন, এসব করতে করতে আধ্যাত্মিক হওয়া যায়। 

এক ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসেই আধ্যাত্মিকতা আছে।

 এটা তখনই সম্ভব যদি তার জাগরুকতা এক নিচের স্তর থেকে উপরের স্তরে চলে যায়। একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি তিনিই, যিনি কর্মের মধ্যে অকর্ম দেখেন এবং অকর্মের মধ্যে কর্ম দেখেন। আধ্যাত্মিকতার গতি এবং স্থিতি দুটোই থাকে। এটাই হলো জীবনকে নিয়ে বাঁচার স্বাদ। এর স্বাদ সারা জীবন ধরে পাওয়া যায়।


কর্মের ফল কে ছেড়ো না:-

কর্মযোগের মূল হল পদ্ধতিতে ফলে নয়। যখন আপনি জাগরুকতার সঙ্গে কর্মকে করতে পারেন, অথবা ত্যাগের মাধ্যমে কর্ম কে করতে পারেন নিজেকে এই যাত্রায় এতটাই ডুবিয়ে দিন যাতে কোন পরিণাম নিয়ে মনে উদ্বিগ্নতা যেন না আসে।


দেখবেন যখন কোন কাজ বিনা প্রাপ্তির আশাতে 

করা হয় সেটা যখন কোন কর্ম প্রাপ্তির আশায় করা হয় তার তুলনায় অনেক ভালো হয়।

যদি আপনি খেলাকে উপভোগ করেন তবে খেলার ফল গুরুত্ব পায় না। আপনি যখন ভালো খেলেন তখনই খেলা যেতেন আপনি চাইলেই কিন্তু সে ফল আসে না যদি আপনার কারো প্রতি প্রেম থাকে তাহলে আপনার কর্মের ফল তাকে দেওয়া সহজ হয়।

যিনি ফল বা উপহারের আশা না করেই কর্ম করেন, তাকে আমাদের তৈরি সমাজ পরাজিত ব্যক্তি বলেন। এই সমাজের বিচার হলো আপনি অন্য কারো মত হন। কারো সাথে প্রতিযোগিতা করুন। অন্যদের মত কাজ করুন এবং এই পৃথিবীতে পাগলামি করা পাপ।

কর্মযোগ শেখায় যে কর্ম কোন সমস্যা নয়, কর্মের ফলে আশা করাটাই দুঃখের কারণ। যদি যা করছেন আনন্দের সহিত করেন মন দিয়ে করতে পারেন তাহলে দুঃখ নেই। আপনি যদি আনন্দের সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে আপনার কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

 যদি আপনি আপনার জীবনকে আনন্দের মাধ্যমে নিতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক উঁচুতে চলে যাবেন। আপনি যাই করবেন তাতে পুরো সম্মিলিত হয়ে করতে পারবেন। কর্মঠ হয়ে করতে পারবেন যদি চাওয়া পাওয়ার আশা না রাখেন।

শাসন করবেন না সেবা করবেন?:-

মানুষের কর্ম করাই হলো আসল এর কোন দ্বিতীয় বিকল্প নেই কিন্তু কর্ম করার আগে

 দু ধরনের উদ্দেশ্য আছে :-

1)আপনি কি শাসন করতে চান ?

2) আপনি কি সেবা করতে চান?

সেবা করার অর্থ হলো কর্মে ডুবে যাওয়া। এক উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করা কারো সাথে তুলনা করে জেতার জন্য নয় বিশ্বের প্রত্যেকেই নিজের ছাপ রেখে যেতে চান কিন্তু সে ছাপ আপনি কেমন ভাবে রাখতে চান সেটা হলো মূল বস্তু। আপনি প্রজাপীড়ক ও হতে পারেন।


একজন প্রজাপীড়ক এর পার্থক্য হল যে তার চেহারা ক্ষমতাশালী হতে। হবে তারা এতটাই শক্তিশালী হওয়ার ইচ্ছা রাখেন যে কখনো কখনো তাদের দুনিয়া শাসনের ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায়। কারণ হলো প্রত্যেক মানুষের জন্য এটা আছে যে.. কেউ যদি কোন জিনিসকে পাবার জন্য লাগাতার ফোকাস রাখেন, তাহলে সেটা সত্যি সত্যিই প্রাপ্তি হয়।

কাজ কে করার এক আলাদা পদ্ধতি আছে। আপনাকে কিছুই চাইতে হবে না। কিছু হওয়ার আশা ভাববেন না । এতে শুধু একটাই জিনিস হয় যেমন প্রয়োজন তেমনি হয়, কোন চিন্তা তৈরি করার দরকার নেই। একবার আপনি এই পদ্ধতি গ্রহণ করে দেখেন, তো আপনাকে শুধু একটাই করতে হবে যে পুরো প্রবণতার সাথে এগোতে হবে। কেন্দ্রীভূত হয়ে পুরো মন লাগিয়ে কাজটি করতে হবে। দেখবেন করতে করতে একদিন আপনি এমন জায়গায় পৌঁছবেন যে আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। আপনার সবকিছু থাকবে কিন্তু কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না। কিন্তু কোন ঝামেলা করবেন না। এটা সবার জন্য সম্ভব কিন্তু তার আগে এই স্থিতিতে আসার জন্য কর্ম করতে হবে। 

যে ব্যক্তি জীবনে উদাসীন থেকে অর্ধেক মন লাগিয়ে গম্ভীরভাবে জীবনকে কাটিয়েছেন, তিনি ওই বিন্দুতে পৌঁছাতে পারবেন না, যেখান থেকে বড় পরিবর্তন আসে। 

যিনি কোনদিন তীব্র কর্ম কে চেনেন নি, যিনি কোনদিন অকর্ম পর্যন্ত পৌঁছাননি, তাঁর সেই কাজ উদাসীনতায় ভরে যাবে।

যে ব্যক্তি কর্মে ডুবে থাকতে পারেন তিনি বিশ্রামের অর্থ বুঝতে পারবেন।

যিনি কিছু পেতে চান তবেই কর্ম করেন যখন উনি সিংহাসনে থাকেন তখনই করেন। যখন তিনি ক্ষমতায় থাকেন না, তাঁকে যদি পদ শেষ থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়, তখন তিনি সাধারণ এর মত কাজ করেন।

কিন্তু যে ব্যক্তি সেবা করার জন্য ভেবে নিয়েছেন তিনি কর্মের জন্য আকুল থাকেন তিনি ফল নিয়ে আসক্তি রাখেন না যদি তিনি স্বর্গে থাকেন তবু করবেন এবং যদি তিনি নরকে থাকেন তবুও করবেন।

গৌতম বুদ্ধের নীতি হিসেবে গৌতম বুদ্ধ বলেছেন তিনি বরং স্বর্গে যাওয়ার থেকে নরকে যাওয়া পছন্দ করবেন, কারণ নরকে গিয়ে সেবা করবেন। কারণ তিনি স্বর্গে যান বা নরকে যান যেখানেই যান, তিনি দুঃখী থাকেন না। এটা তাঁর নিজস্ব স্বাধীনতা।

ত্যাগের অর্থ:-

যোগ্য এর অর্থ হলো ত্যাগ। কিছু পাবার জন্য কিছু ত্যাগ করা জরুরী এবং কিছু না পেয়েই ত্যাগ করাটাই হলো যজ্ঞ। 

যখন এক ব্যক্তি যোগী হন, তখন অনেকেই তার কাছ থেকে লাভ পান। একটি সাধারণ আম গাছ শত শত ব্যক্তিকে আম খাওয়ায়, তেমনি যখন আপনার জীবন যজ্ঞ হয়ে যায়, তখন অনেক অনেক লোক লাভ পায়, কত কত যোগী এমন করে করেছেন।

যখন কেউ নিজের জীবনকে ত্যাগে পরিণত করতে পারেন, তখন তিনি আন্তরিক আনন্দ পান এবং পরমানন্দকে অনুভব করেন।


জ্বালানোর জন্য এবং তপ এর জন্য যোগ:-

আমাকে প্রায়ই লোক জিজ্ঞেস করেন কি করে কর্মকে জালানো যায়?

আমি বলি কর্মকে জালানোর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু পর্যন্ত প্রাসঙ্গিকতা আছে। এটা আপনাকে শুদ্ধতা দেয় যাতে আপনি জীবনের ধোঁয়াশা থেকে মুক্ত থাকেন। এটা আপনাকে ভাবনা থেকে, উদ্বিগ্নতা থেকে, দুঃখ থেকে, ভয় থেকে, মুক্তি দেয়। কিন্তু যদি আপনি সব কর্মকে জ্বালিয়ে দেন, তাহলে ভৌতিক শরীর এবং মানসিক শরীর একসঙ্গে থাকতে পারবে না। এই জন্য যোগীর দিব্য শরীরকে ধরে রাখা মুশকিল হয়। বেশিরভাগ আধ্যাত্মিক অভ্যাসের জন্য কিছু কম জ্বালানোর পর, ভালো হয় সাধনা করে কর্ম থেকে দূরে থাকা।

এই কর্মের উপস্থিতিতে অভ্যাস চলতে থাকবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আপনার মন এবং আপনার শরীরের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে অভ্যাস করতে থাকবেন। এই দুনিয়ায় এমন লোকের অনেক দরকার। এই দুনিয়ায় যেটা হওয়া জরুরী সেটা হচ্ছে না। কারণ লোকেদের সেই ক্ষমতা নেই যে কার্মিক উদ্দীপনা থেকে দূরে থাকে। একবার যদি আপনি কর্ম থেকে নির্দিষ্ট দূরে রাখতে পারলেন, তাহলে আপনার কাছে যতই কর্ম থাকুক না কেন, আপনার কাজ বিশ্বে পরিবর্তন আনবে।

ভুলে যাবেন না, ভাবনা অনেক রকম হতে পারে। আপনি দিনভর সিগারেট খান, ড্রিংক করেন, দিন ভ র প্রার্থনা করেন, তবুও সেই কর্ম ভাবনাত্মক হতে পারে। আপনি যাই করুন যদি আনন্দের সঙ্গে এবং ধন্যবাদ এর সঙ্গে করতে পারেন এবং চক্র থেকে মুক্তির দিকে বাড়তে পারেন, তাহলে পার্থক্য হবে। যদি আপনার একটুও আনন্দপূর্ণ ভাব বাড়ছে তাহলে ঠিক আছে।


এইজন্যই অষ্টাঙ্গ যোগ এর বিধান আছে:-

এর মধ্যে প্রথম তিনটি যোগ (যম নিয়ম এবং আসন) অগ্নিভাব এবং এটা শুদ্ধিকরণ করে।

শেষ চার যোগ (প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান এবং সমাধি) এগুলি সব দিশাকে প্রকাশ দেখায় এবং শিক্ষাত্মক বটে।

চতুর্থ অঙ্গ হলো প্রাণায়াম যা মধ্যম সঞ্চালনকারীর ধাপ। যা অগ্নি এবং আলোক কে জুড়ে দেয়।


যম এবং নিয়ম:-

এটা সরল নীতি, আধ্যাত্মিকতার পথে কি করার আছে, কি করার নেই, যেমন অহিংসা, ত্যাগ, সত্য, চুরি না করা, ডাকাতি না করা, সুন্দরতা, পরিছন্নতা, অভ্যাস ইত্যাদি। এটা কারো স্পিরিচুয়াল পরিবর্তনের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করে।

একবার মানুষ শিক্ষিত হয়ে গেলে তাহলে কি করতে হবে কি না করতে হবে এসব কিছু ব্যাপার নয়। যখন আপনাতে কারণ বইছে এবং পবিত্রতা সামনে এসেছে, তখন কোন আইন-কানুন দরকার নেই। এ অবস্থায় মানুষের মনে কি করতে হবে এবং কি নয়, সেটা তার জানা থাকে।


আসন:-অবশ্য অনেক রকম শারীরিক আসন আছে যা, জিজ্ঞাসুকে নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত জাগৃতিতে সহায়তা করে। এঁরা ঐ পথে আছেন যেখানে ভেতরের শক্তিকে manipulate করে এক নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করে, যাতে বড় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়।

যেমনভাবে মাটির পাত্র কতই না ভালো হবে তা নির্ভর করে কেমন করে আপনি মাটিকে থেঁতলে তৈরি করেছেন। তেমনি ভাবে আসন হলো শরীর কে পুরোপুরি আসনের মাধ্যমে ক্রিয়া করে সচেতনতাকে আগে দিকে বাড়িয়ে দেওয়া।এটাই হলো যোগের ভীত।এটা এক ধরনের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে যাত্রা। বাইরের কাজ করতে করতে চিন্তন অনুভব এবং অভিজ্ঞতা এবং উচ্চ আধ্যাত্মিক সম্ভাবনার দিকে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে।

প্রাণায়াম:-

এতে সচেতনতার সঙ্গে প্রাণ এবং জীবনীশক্তি নিয়ে কাজ করা হয়। এটা অগ্নি এবং প্রকাশের মধ্যাবস্থা। কারণ এতে রেচক এবং শিক্ষা প্রদ দুটো ধরনই থাকে।

প্রত্যাহার:-এর অর্থ হলো অন্তর্মুখী হওয়া। এটা যোগের এক মহত্ত্বপূর্ণ ভাব এবং আজকালের দিনে এটা সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং। এখন দুনিয়া বাইরের উত্তেজনায় ভরপুর।  সম্পূর্ণরূপে শরীর এবং মন থেকে আলাদা হওয়ার অভ্যাস হল প্রত্যাহার।

ধারণা:-নিরবিচ্ছিন্ন হবে অন্তর স্থিতির প্রতি ধ্যান রাখাই হলো ধারণা। এই ইলেকট্রনিক যুগ এবং এত লোকের পারিপার্শ্বিক প্রভাবে মধ্যে এই পৃথিবীতে অন্তরিস্থিতির প্রতি স্থির হওয়ার ধ্যান রাখাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।

ধ্যান:-এটা হল ডুবে যাওয়ার স্থিতিতে যোগ। এই স্থিতি, যাতে আপনার মধ্যে এবং অন্তর্মুখী দুনিয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। এখন এই স্থিতিতে আপনি এবং আপনার অন্তর্মুখী দুনিয়া এক হয়ে যায়।

সমাধি:-এটা হল অষ্টাঙ্গ যোগের শেষ ধাপ। এতে সাধক পুরোপুরি ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়। এই স্থিতিতে শূন্যস্থিতি হয়। এতে সাধক নিজের অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে পরম একাগ্রতার মাধ্যমে ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে স্থিত হয়ে যায়। মনের মধ্যে বৈষম্য দূর হয়ে যায়।


যে সকল লোক সমস্যায় আছেন এবং ভাবনাত্মক আছেন, তাদের জন্য শুদ্ধিকরণ এবং কর্মকে পোড়ানো খুব জরুরী। এটা ছাড়া ব্যক্তি জোগ সমাধিতে আসতে পারেন না, যোগী হতে পারেন না। কিন্তু একবার যোগ লেগে গেলে আবার কর্ম চালানোর কথাই নেই বরং আপনাকে মানসিক এবং শারীরিক শরীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এটাই মুক্তির পথ। একবার যদি প্রারব্ধ কর্ম নিয়ন্ত্রণে চলে এলো এবং নির্দিষ্ট আন্তরিক জায়গা খালি হয়ে গেলো, তাহলে আপনাকে এই জীবনকে নির্দিষ্ট স্পষ্টতার সহিত বাঁচার জায়গা পাওয়া যাবে। তখন আপনাকে সব জিনিসের কর্ম করতে হবে না। কারণ আপনাকে সম্পূর্ণ কার্মিক পদ্ধতি দেখা যাবে। একবার আপনার এইসব জিনিস আয়ত্তে এলে কর্মকে শেষ করা সহজ হয়ে যায়। 

কিন্তু সঞ্চিত কর্মের সাথে কাজ করাটা লম্বা পদ্ধতি। কারণ এতে কর্মের পরিমাণ অনেক বেশি। এর জন্য পুরো গুদাম কে দেখার দরকার নাই,সেটা করতে গেলে আপনার কয়েক জন্ম লেগে যাবে। এবং এতে আপনি অনেক জিনিস হারাতে পারেন, যেটা আপনি রাখতে চান। শুধু প্রারব্ধ কর্ম কে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঞ্চিত কর্মকে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা খালি করো। যখনই আপনি গদাম ঘরের বাইরের দিকে থেকে সাপ্লাই আটকে দিলেন, তখন গুদামঘর অর্থহীন হয়ে গেল। এজন্য যখন সময় আসে সারা গোদাম ঘরকে তুলে ফেলে দিন। এতে যতই সঞ্চিত কর্ম আছে সব নষ্ট হয়ে যাবে।


কর্ম এবং শরীরের এক রেখীকরণ:-

এটা আমাকে আনন্দিত করে যে আমার কাছে কিছুই নেই আমি লোকেদের বলি আপনি আমার সাথে পড়াশোনা করছেন না আমার শেখানোর নেশা নেই আমি হয়ে যেতে চাই। আমি আপনাকে সেই সীমাহীন অবহেলায় নিমন্ত্রণ করছি যাকে অতীতের Enlightenment বলে। এবং এটাই একটা রাস্তা যেখানে আপনার কিছু হারিয়ে যেতে পারে আর অন্য কোন পথ নেই।

কার্মিক দেওয়াল হল কাঁচের সিট এর মত। যদি ইটের দেয়ালের মতো হতো, তুমি দেখতে পেতে এবং ভেঙে দিতে পারতে। কিন্তু সমস্যা হল কাঁচের সিট মনে হয় যেন খোলা আছে। কিন্তু যখন তুমি পৌঁছানোর জন্য সামনে যাও তখন তোমাকে দরজা বন্ধ মনে হয়। কিছুদিন পর্যন্ত শেখার পর এটা আপনা আপনি ব্লক হয়ে যায়। এবং আপনি সুবিধা অনুসারে ভাঙাভাঙ্গি করবেন। অনেকেই এমনিভাবে শিক্ষাকে অদলবদল করেছেন।

শুরুতে শিক্ষা আপনার উপর প্রভাব ফেলে কারণ তখন এটা নতুন এবং আপনিও জানেন এটা কেমন করে কাজ করে কিন্তু কিছু সময় পর হয়ে গেলে আপনি নিজের মতো করে অদল বদল করবেন জাতি এটা আপনাকে সাহায্য করে। কিন্তু বাস্তবে এটা আপনাকে সহায়তা করে না বরং ধ্বংস করে।

একবার শিক্ষা যদি সুবিধার উৎস হয়ে গেল, তাহলে সেটা ভালো নয়। এজন্য গুরুর উদ্দেশ্য  আপনাকে কোথাও স্থিত করা নয়। যদি আপনি স্থিত হয়ে গেলেন, তাহলে আপনি তাকে নিজের লাভের মত ব্যবহার করবেন। এজন্য গুরু আপনাকে সর্বদা energy based অভ্যাস দেয়।

প্রত্যেকদিন বাস একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রোজক্রিয়া করলে কর্মিক বাধা কে উজাড় করে দেওয়া যায়। যদি আপনি সম্পূর্ণ শিক্ষা বুঝতে না পারেন তবু সমস্যা নেই। অভ্যাস করতে থাকুন, আপনা আপনি কিছু সময় পর ওই দরজা খুলে যাবে এবং আপনি মুক্তি অনুভব করবেন। এই অভ্যাস কে আপনি ভরসা করে করতে পারেন।


বৃদ্ধ হওয়া এবং মৃত্যু:-

জীবনের শেষের দিকে allotted কর্ম শেষ হয়ে যায়। তখন এনার্জি বডি দুর্বল হতে থাকে। ফলস্বরূপ ভৌতিক শরীর খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হতে থাকে। এবং এনার্জি বডি র ফিজিক্যাল বডিকে ধরে রাখার শক্তি কমতে থাকে।

যেমনি তথ্য বের হতে থাকে, জীব ও ধীরে ধীরে বের হতে থাকে, ভৌতিক শরীরের প্রবণতা হারাতে থাকে। এজন্য দেখা যায় যে শরীর ভৌতিক জীবনকে নিয়ে ভালোভাবে বেঁচেছে সেই শরীর মরণের কিছুদিন আগে শান্ত, পরিণত এবং জ্ঞানীর মত ব্যবহার করে। এমন ব্যক্তি অন্যের সঙ্গে খুব কম মোহ তে থাকেন না।এবং বাইরের অবস্থা থেকে খুব কম বিচলিত হন।

যখন প্রাণময় শরীর কমজোর হয়ে যায়, তখন এই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। একে আমরা বলি বৃদ্ধ অবস্থায় মৃত্যু।

ডাক্তার চেক করে বলেন ..কোন অঙ্গের ব্যর্থতা হয়েছে অথবা এমন কিছু বিষয় আছে যে ব্যক্তি শরীর ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন কারণ Energy body দুর্বল হয়ে গেছে। এটাই হল মরণের ভালো স্থিতি।

কারণ আপনি শরীরকে বাধ্য করে প্রাণ ত্যাগ করছেন না। এটা শরীর ছাড়ার ভালো রাস্তা। তবু কত তাড়াতাড়ি আপনি আপনার প্রারব্ধ কর্মকে শেষ করেছেন তার উপর নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি এক জীবন থেকে দ্বিতীয় জীবনে যাবেন। যদি আপনি 80 তে গিয়ে ভাবতে থাকেন যে 18 বছর বয়সে যেমন কাজ করলেন তেমনি করতে পারবেন, তবে আপনি সমস্যায় পড়ে যাবেন। আপনি এক অসাধারণ মৃত্যুকে বরণ করবেন। যদি আপনি 80বছরও বেঁচে নিলেন আপনার শরীর নীচে চলে যাবে, কিন্তু আপনার কর্ম তবুও যাবে না।

যদি আপনার এ্যালটেড কর্ম সম্পন্ন করা গেল না কিন্তু শরীরের কোন কারণে  মৃত্যু হলো,যেমন কার এক্সিডেন্ট বা মদ খেয়ে মৃত্যু হয়ে গেল বা কিছু মারাত্মক রোগী মৃত্যু হল, তাহলে তার কর্ম এখনো বেঁচে আছে। 

এভাবে যায় এখনো বেঁচে আছে, যার অর্থ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং একাগ্রতা এখনো বেঁচে আছে অথচ শরীর নেই, এরকম শরীর হীন সত্তাই হলো ভূত।

তার এনার্জি বডি এবং allotted কর্ম এখনো প্রবল আছে কিন্তু ভৌতিক শরীর নেই যে তাকে সাহায্য করবে।

ভূতকে নিয়ে পৃথিবীতে অনেক ভয় আছে। যেহেতু কর্ম তবু সতেজ আছে কিছুক্ষণ তার উপস্থিতি জোরালো মনে হয়। কিন্তু ভূতের উপস্থিতি ভয়ের কিছু নেই। ভাবো..ভুত এক সাদাসিধা ব্যক্তি, যে আপনাকে পছন্দ করে, সে শরীর ছেড়েছে। আপনিও ভূত তবে আপনার শরীর আছে পার্থক্য এইটুকুই। তবে যে ভূতের শরীর আছে সে বেশি ক্ষতি করতে পারে। আপনি জানেন শরীর ছাড়া ভূতের ক্ষমতা অল্প।


কর্ম এবং স্মৃতি ভ্রংশ:-

আধুনিক ওষুধ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা লোকের শরীর কি সুস্থ করে। কিন্তু এটা কর্মকে নিয়ে কিছু জানে না। এজন্য অনেক বৃদ্ধ লোক মানসিক ফ্যাকাল্টি হারিয়েছেন। হাড়োয়ারকে সশক্ত এবং উন্নত করা হলো কিন্তু সফটওয়্যার যেমন কার তেমনি থাকলো, তখন সেটা বোবা কম্পিউটারের মতো হয়ে যায়

 বেঁচে তো আছে কিন্তু কোন কর্ম করে না। কার্মিক বিষয়ে ছাড়া শরীর হল খালি শরীর। এর হার্ট, কিডনি, কান, থাই, সব রিপ্লেস করেও কিন্তু কর্ম ছাড়া এটা কোন কাজের নয়।

কিন্তু যদি আপনি একুমুলেটেড কর্মকে খুলতে পারেন, তাহলে আপনার পাশে একাধিক সফটওয়্যার থাকবে। ফলে আপনার শরীর হাজার সাল পর্যন্ত বাঁচতে পারে, কারণ তার অনেকগুলি সফটওয়্যার হবে।

যদি আপনি আধ্যাত্মিক জীবনকে ধারণ করতে পারেন, তবে আপনার পাশে বিকল্প থাকবে। আপনার স্বাধীনতা থাকবে আপনি আবার কখন শরীর ছাড়বেন। সেটাও করবেন আপনি নিজেই কর্মকে শেষ করে এবং allotted কর্মকে ব্লক করে শরীর ছাড়তে পারবেন।


সমাধি:-

যোগ যারা করেন তাদের এমনি প্রবণতা বাড়ে উর্জা উপরের দিকে চলতে শুরু করে, শরীরের সাথে সম্পর্ক কম হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট সীমার উপরে চলে গেলে ব্যক্তি সমাধিতে চলে যায়। সম কথার অর্থ ক্ষমতা, ধি কথার অর্থ বুদ্ধিমত্তা

 যখন আপনি পরম বুদ্ধিমত্তাকে ছুঁতে পারেন, যখন আপনি এবং অন্যদের মধ্যে সমতা দেখতে পান, তখন আপনি সমাধি লাভ করলেন।একটি আয়না সবকিছু প্রতিফলিত করতে পারে, কোন কিছুই এতে আটকে থাকে না। কোন কিছুই এতে লেগে থাকে না। এবং এটাও বিচার করে না যে সে কি প্রতিফলিত করছে। এটা আনন্দ এবং দুঃখের মধ্যে পার্থক্য করে না। এটি ভালো এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করে না। যখন আপনার মন এভাবে তৈরি থাকে, তখন তাকে সমাধিস্থ বলা হয়। যখন এসব পার্থক্য শেষ হয়ে যায়, জীবনীশক্তি শরীরকে বিচলিত করে না, এই সময় এটা ভৌতিক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

 যদি আপনি এমতাবস্থায় বেশিক্ষণ থাকতে পারেন, তাহলে আপনি শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। এই জন্য এই স্থিতিতে শরীরকে স্পিরিচুয়াল কমিউনিটি এর মাধ্যমে প্রটেক্টেড রাখা হয়। এই প্রটেকশন জরুরী বটে। না হলে একটু ঝটকা লাগলে ব্যক্তি এই শরীর ছেড়ে দিতে পারে। কিছু লোক এত দূরে চলে যান এবং শরীর থেকে সম্পর্ক এতটাই হালকা হয় যে যে কোন সময় শরীরকে ছেড়ে দিতে পারে। বিষয় হলো এটাই যে আপনার শক্তি খুবই তরল। এই সময় আপনি জীবনকে এক দিশা থেকে দ্বিতীয় দিশায় আনতে পারেন সেটাও বড় সরলতার সঙ্গে। সেটা একটা মাটির পাত্রের মতো। একে জ্বালানোর পর মাটির পাত্র কঠিন হয়ে যায়। কর্মও এমনি। যদি আপনি কর্মের পাত্রকে আবার কাঁচা এবং নরম করতে চান তাহলে আপনাকে কিছু এর এনার্জি নিয়ে কাজ করতে হবে। যখন এই এনার্জি শক্তি নরম হয়, একদম তরলের মত হয়, তখন সেটা কোন নির্দিষ্ট আকারে থাকে না। একে তখন কয়েক ধরনের আকার দেওয়া যায়। যোগের জন্য পরম লক্ষ্য হলো সীমিত পরিচয় এর মহাসমাধি বা পরম বিলয়। এর অর্থ শারীরিক মানসিক এবং প্রাণময় শরীরের সন্ন্যাস এটা জীবন্ত আগ্র নয়। এটা হল সসীম ছেড়ে অসীমের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া এর অর্থ হল কিনারায় বসার বদলে সমুদ্রে মিশে যাওয়া। সীমাযুক্ত আনন্দের বদলে অপরিসীম পরমানন্দ এবং বন্ধন স্থিতিকে পছন্দ করা।

যোগীর সব থেকে বড় প্রাপ্তি তার কার্মিক বোঝা। ব্যাস একটু রেখে বাকি সবকে শেষ করে দেওয়া এবং সেই একটু কার্মিক বোঝাকে ছাড়তে হবে একদম শেষে, শরীরকে ছাড়ার আগে।


অবধুত:-

যোগ এর অর্থ হলো অনেকগুলি অন্তরীক্ষকে খুলে দেওয়া যেটা আপনি নন। শুরুতে যেটা দাগ মনে হয় সেটা আপনি নন। কিন্তু অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে কার্মিক স্তুপ দূর হতে হতে আপনি বিস্তারিত হতে থাকেন এবং একদিন আসে যখন এই অন্তরীক্ষ আপনাকে ভেতরে সব কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। এই সময় বলা যায় যে আপনি পুরো যোগী হয়ে গেছেন। এবার আপনি সমতার সমাধিতে আছেন। দ্বিধার দ্বন্দ্ব আপনাকে আর ছুঁতে পারেনা। আপনি চান তো বাইরের খেলা খেলতে পারেন, না হলে আপনি যেমন আছেন তেমনি আছেন। আপনার মধ্যে আমি এবং তুমির বেশি পার্থক্য থাকে না। যিনি সীমিত পরিচয় আছেন তিনি এতদূর পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন যে বাইরের দুনিয়ার কর্ম করতে পারেন না। এদের সংস্কৃতে অবধুত বলা হয়। এরা এমন রহস্যবাদী হন যে দুনিয়ায় সচেতনতার অনেক কিছু ত্যাগ এঁরা করেছেন এবং বালকের মতো মন এদের হয়ে যায়। কখনো কখনো পাগলের মত বার্তা লাভ করতে থাকেন। তিনি বুদ্ধিমত্তাকে পুরোপুরি ফেলে দেন। যেন তার ঘরই নয় বাইরের দুনিয়ায় কিভাবে বাঁচতে হবে, কেমন যত্ন করতে হবে, এমন লোকেদের বাইরে থেকে সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এদের দেখভালের জন্য বাইরের সহায়তা প্রয়োজন পড়ে। এমন অবদূত ভারতে অনেক আছে। কিছুক্ষণের জন্য এই স্টেটে যাওয়া ভালো। অবধূত এমন এক অবস্থা এতে না কর্ম আছে, না বন্ধন আছে, তিনি সবকিছু ধুয়ে ফেলেছেন। এজন্য যোগী এই অবস্থায় কখনো কখনো থাকেন, কারণ এটাই হলো মুক্তির দ্রুত পথ। কিন্তু শরীর ছাড়ার আগে যোগী এই অবস্থা থেকে বাহির হয়ে আসেন, কারণ শরীর কে ত্যাগের মূল চাবি হল এক স্থিতি, যখন পুরা সচেতনতার সঙ্গে কিছু কর্ম না করে শরীরকে ত্যাগ করতে হবে।


কার্মিক বুলবুলা কে ফাটানোর পর শরীরকে ধরে রাখা:-

কেমন করে একজন দিব্য শিক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তি বাঁচেন? কার্মিক বুলবুলা ফেটে যাওয়ার পর ভৌতিক শরীরের কি হয়? সম্ভবত এটা জানার জন্য কারিগরি দরকার। কারণ দিব্য শিক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তির কোন কার্মিক চিহ্ন নেই। তাই তার জন্য ভৌতিক দেহ ধরে রাখা মুশকিল। কিন্তু যোগীদের এর জন্য কিছু পদ্ধতি আছে। এখন সচেতন কর্ম করো যাতে শরীরকে ধরে রাখো। কিছু যদি এমনটা করেন না হলে শরীরকে ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা প্রবল হয়ে যায়। অনেক যোগী এমন করেছেন। কেউ আবার সরল সচেতন বন্ধন রেখে দেন, সেটা হয়তো আধ্যাত্মিক লক্ষ্যের উপর হয়, অথবা কেউ খাবার দাবারের উপর রাখেন। এটা এমন একটা চাওয়া পাওয়া যাকে যেকোনো সময় ত্যাগ করা যায়।এই একটি সচেতন কর্ম যা শরীরকে ধরে রাখে। বাস্তবত এক জীবন থেকে দ্বিতীয় জীবনের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু ভৌতিক এবং মানসিক রূপের পার্থক্য আছে। কিন্তু দুটোকেই এনার্জি লেভেলে যুক্ত করে আপনার জন্য এক নির্দিষ্ট জীবন তৈরি করতে পারেন। মানুষের শরীরকে অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আগেও এর অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে যোগীরা কয়েকশো বছর বেঁচে ছিলেন। প্রশ্ন হলো যে কিছু বিনা প্রয়োজনে জীবনের আয়ুকে বিস্তার করলে এতে লাইফ এনার্জি সঙ্গে অনেক ভাঙ্গাগ ড়ার প্রয়োজন আছে, যাতে কর্মের অংশকে নিজের উপর নিতে হবে। কোন উদ্দেশ্য বিহীন কোন জরুরি উদ্দেশ্য ছাড়া জীবনের সঙ্গে এই হস্তক্ষেপ ভালো নয়। 


একটি জানা পরিচিত ঘটনা ঘটেছিল। এক যোগী গঙ্গার ঘাটে মেডিটেশনের জন্য বসেছিলেন। একদিন বন্যা আসে এবং সেই বন্যায় যোগী কে বালি দিয়ে ঢেকে দেয়। তিনি বালির ভিতর থেকে যান। ছয় মাস পর চাষা যখন লাঙ্গল চালাতে যায় তখন দুর্ঘটনা বসত লাঙ্গলের ফলা দিয়ে যোগীর মাথায় আঘাত লাগে। তাঁর মাথা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। তাঁরা যোগিকে খুঁড়ে বার করেন। যোগী সেখান থেকে জেগে উঠে চলে যান। যোগী মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় ছিলেন সচেতনতার বদল অবস্থায় ছিলেন। তিনি জীবনকে আরো বাড়াতে চাইছিলেন, তার জানা ছিল ভৌতিক শরীর শেষ হয়ে এসেছে। তিনি শরীরকে ছাড়তে ইচ্ছুক ছিলেন না। এইজন্য তিনি আবার সচেতন অবস্থায় এসে কর্ম শুরু করেন। 


শক্তির সুস্থতার প্রয়োগ:-

আজকাল দুনিয়াতে "এনার্জি হিলিং"  অনেক চলে। অনেক লোকেদের জানা নেই যখন আপনি হিলিং করে দেন আপনি শুধু কর্মের প্রভাবকে তুষ্টিকরণ করছেন। আপনার  কর্মের কারণ কে দূর করার সক্ষমতা নেই। যদি প্রাপ্ত প্রভাবকে দূর করেও দিলেন তাহলে, সেটা আলাদা রূপ নিয়ে আবার ফিরে আসবে।

ভাবুন কারো এজমা হয়েছে। এটা ওনার কর্ম। Healer হিসেবে আপনি তার উপর হাত রাখলেন হতে পারে এনার্জি হিলিং দিয়ে আপনি তার এজমাকে দূর করে দিলেন। এখন অ্যাজমা তার সেরে গেল, কিন্তু অন্য কোন রূপে সেটা আবার ফিরে এলো। হতে পারে এটা একটা এক্সিডেন্ট হিসেবে চলে এল, অথবা কোন হার্ট এটাক হিসেবে চলে এল।

এইজন্য প্রভাবকে দূর করার চেষ্টা করবেন না। প্রভাব হলো সমস্যার এক পরিচিতি। একে মিটিয়ে দিলে তার প্রভাব অন্য জায়গায় দেখা যাবে। আবার অন্য কোন সমস্যা রূপে আবির্ভাব হবে।

যখন শরীরে ব্যথা হয়, তখন ব্যথা থেকে বোঝা যায় কিছু ভুল হয়েছে। ব্যথা এক সুযোগ দেয় বোঝার জন্য যে আপনার মধ্যে কিছু ভুল আছে। কিন্তু আপনি যদি ব্যথার ওষুধ খেতে থাকেন এবং কারণ কে খোঁজার চেষ্টা না করেন, তাহলে প্রধান সমস্যার প্রভাব চলতে থাকবে এবং একদিন সেটা এর থেকেও বড় সমস্যা তৈরি করবে।

এইজন্য আমি বলি কেননা আপনিও যোগ করেন! কেননা কিছু হঠযোগ করেন! যদি আপনি আধ্যাত্মিক যোগ করেন, তাহলে আপনি সমস্যা কি নিজে নিজেই সামলে নিতে পারবেন এবং তার প্রভাবকেও সামলাতে পারবেন।

আপনি এটাও দেখবেন যে, আপনি যদি অন্যদের Heal করার চেষ্টা করবেন তাহলে দেখবেন আপনার ভেতরেও অনেক দুঃখ ভোগ হবে এই দুঃখ ভোগ যে শারীরিক রূপেই আসবে এমন নয়। মানসিক রূপেও আসতে পারে। কিন্তু যদি আপনার মনোভাবের সমত্ব থাকে, যতই আঘাত আসুক আমার কিছু হবে না, তাহলে যাও হিলিং করো।

কিন্তু ভুলবেন না আপনি অন্যজনের জন্যও বারবার বিপদকে নিমন্ত্রণ করছেন।

এইজন্য সব থেকে ভাল কাউকে সহায়তা করতে পারেন তা হল.. তার দুঃখভোগ অতিক্রম করান,অর্থাৎ যা দুঃখ আসছে তাকে অবিচলিত থেকে ভোগ করে পার হন, যা সব যোগী এবং সাধু ব্যক্তিরাও করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন যে দুঃখ ভোগের মাধ্যমেই দুঃখ কে পার করতে হয়।একে আলাদাভাবে দেখাটাই ব্যক্তির পরমপ্রাপ্তি। এটা নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু এটা সবথেকে ভালো উপায় যা অন্যের জন্য বার করতে পারেন। কারণ আপনি তাকে সাময়িক আরাম নয়, তাকে সম্পূর্ণ সমাধান দিচ্ছেন। 


অনেকেরই যারা আধ্যাত্মিক অভ্যাস করেন তাদের যখন ছোট ছোট ক্ষমতা প্রাপ্তি হয়, যেমন কাউকে সুস্থ করা, কারো ভবিষ্যৎ বলা, এগুলি ভৌতিক ফল নয়, আমিও যখন উঁচুস্তরের মেডিটেশন করি তখন কিছু লোকের কিছু অলৌকিক ক্ষমতা বা শক্তি পান। কিন্তু যখনই আমি সেই ক্ষমতা দেখতে পাই আমি তাকে ফিরে পাঠিয়ে দিই। এগুলি ওই ব্যক্তির আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।আমি এসব সমর্থন করি না। আমি অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী নই। এমন ক্ষমতাকে আমি আটকে দিই। কারণ এক ব্যক্তি যদি এই ক্ষমতা প্রাপ্তি হয় তাহলে সে আধ্যাত্মিক পথে যাবে না। তখন সে সার্কাস দেখাবে। কিছু টাকা পয়সা রোজগারের চেষ্টা করবে এবং এর কিছু ব্যবসা করবে। এইজন্য ব্রহ্মাণ্ডের এই শক্তির দালাল হয়ো না এবং কিছু অলৌকিক কর্ম দেখানোর চেষ্টা করো না। লক্ষ্য হলো আপনার জীবনে মুক্তির পথ বের করা, যেটা আপনি চেষ্টা করলে করতে পারবেন। 



এই কর্ম বিষয়ক সারকথা সদগুরু Jaggi Vasudeb এর লেখা Karma নামক বই থেকে সংগৃহীত। 





উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like  এবং Share করুন।


আরো পড়ুন:Ratan Tata, Mukesh Ambani, Azim Premji, Gandhiji, Mandella, Kalam's Quotes

                      Motivational And Inspirational Quotes For Success

                      Dan Lok's Advice  For Success ,   14 Risks you must take for Success

                      চিন্তন করুন এবং সফল হন ,  কেন করবেন ? সেটা জেনে তবেই কাজটি করুন , 

                      জীবনে কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর প্রভাব , বাধার মধ্যে দিয়ে পেরিয়েই সফলতা আসে ,

                      অহংকার হলো চরম শত্রু , আত্মজ্ঞান কি , শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সার ,

                     আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ , 

                সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,

                ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , 

                মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস

                ব্যবসার জন্য মুদ্রা লোন PMMY  Loan ,  Inner Engineering by Sadguru Jaggi Vasudev



For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com



Post a Comment

0 Comments