প্রেমানন্দ মহারাজের বাণী -1 (Teachings of Premananda Maharaj-1)

 প্রেমানন্দ মহারাজের বাণী:-

বর্তমান ভারতে সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক গুরুদের মধ্যে অন্যতম এবং বহু ভারতীয়দের হৃদয়ের মনি হলেন পরম পুরুষ, যুগ পুরুষ, সদগুরু, শ্রী প্রেমানন্দ মহারাজ। অতীতে সন্যাস মার্গ থেকে পরে ভক্তি মার্গ এর যাত্রা, কাশী তে ভগবান শিব এর উপাসনা থেকে শুরু করে বৃন্দাবনে রাধারানী জীর উপাসনা, সবে মিলে জ্ঞান ও ভক্তি মার্গের এক অনন্য মিলন। তাঁর দেওয়া আধ্যাত্মিক শিক্ষার মূল্যবান বাণী আজ শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা বিশ্বে প্রচারিত। তিনি এমন ভাবে সনাতন ধর্মের সহজ এবং সরল পথ দেখিয়েছেন যে ..এই পথ অনুসরণ করে যে কোনো ব্যক্তি নিজের জীবন কে আধ্যাত্মিক পথে চালিত করে নিজে সৎ, সুন্দর, আনন্দময় এবং উন্নত জীবন তৈরি করে, পরম কল্যাণ  তথা ভগবৎ প্রাপ্তির পথ প্রশস্ত করতে পারেন।

তিনি আধ্যাত্মিক যাত্রায়, ভগবৎ প্রাপ্তির যাত্রায় সব থেকে বেশি যেটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন সেটা হলো.. ঈশ্বরের নাম জপ। তিনি বলেন শিব, দুর্গা, কালী, রাধা ,কৃষ্ণ,গণেশ, ইত্যাদি সব দৈবিক নাম গুলি সব একই ঈশ্বরের নাম। যিনিই কৃষ্ণ, তিনিই রাম, তিনিই শিব, তিনিই দুর্গা, তিনিই রাধা, তত্বত ঈশ্বর এক, এর মধ্যে কোনো ভেদ নেই। তাই তিনি, বলেন..গুরু প্রদত্ত ঈশ্বরের  নাম হোক, বা নিজের পছন্দে চয়ন করা ঈশ্বরের যেকোনো নাম হোক, ঈশ্বর কে এক নামে জপ এবং ভজন করুন। তিনি বলেন ঈশ্বরের নাম জপ এর অসীম মহিমা। এই নাম জপ থেকেই, আধ্যাত্মিক সিদ্ধি, ভৌতিক সিদ্ধি, ভগবৎ প্রাপ্তি , সবকিছুই সম্ভব।

এখানে তাঁর দেওয়া উপদেশ ও বাণীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা  তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।...অবশ্যই পড়ুন জীবন ধন্য হয়ে যাবে।...

1)আপনি যতই নাম জপ করবেন, ততই মন পবিত্র হবে, বুদ্ধি পবিত্র হবে, শরীর পবিত্র হবে। আপনি জপ করে তো দেখুন। নাম জপ না করলে সব বেকার। আপনাকে বলে দিই ..যতই প্রবচন শুনুন, বা যতই প্রবচন করুন। মায়া আপনার উপর এমনই প্রভাব ফেলবে, যে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। মায়া থেকে মুক্ত হতে গেলে ঈশ্বরের নাম জপ অতি প্রয়োজন। 

2)গুরুদেব ! যেমন আপনি বলেন.. যে প্রিয়ালাল মায়ার পর্দা ঢেকে রাখেন। মহারাজ জী ওই মায়া রুপী পর্দা কি করে সরবে? 

এই সংসারে তিনটি গুণ আছে, এটাই পর্দা। ক) সত্ব গুণ, খ) রজোগুণ গ) তম গুন। যতক্ষণ এই ত্রিগুনাতীত হওয়া যায় না, ততক্ষণ ভগবৎ সাক্ষাৎকার হয় না। এবং এটা নিরন্তর ভজন করে সম্ভব। প্রথমে ভজনের জন্য সত্বগুণের প্রয়োজন। যেমন কাঁটা দিয়ে কাঁটা  বের করা হয়, তেমনি সত্বগুণ দিয়ে দুই গুণ রজোগুণ ও তমগুনকে পরাজিত করতে হবে। রজো গুনে ভোগের ইচ্ছা, নানা প্রকার পদ প্রতিষ্ঠা, শরীর ভোগের ইচ্ছা এবং  মান সম্মান পাবার ইচ্ছা এসব গুন থাকে। আবার নিদ্রা, আলস্য, প্রমাদ, হিংসা, ক্রোধ বৃত্তি এসব হলো তম গুন। 

প্রথমে আমাদের সাত্বিক ভোজন খেতে হবে। আমরা যেন চেষ্টা করি যে.. সত্বগুন যুক্ত ভোজন গ্রহণ করব। পবিত্র, ঘরের খাবার খান এবং ঠাকুরজিকে ভোগ দিন। সাত্ত্বিক পানীয় গ্রহণ করুন। অন্য  রংবেরং এর পানীয় বা অন্য মাদক বস্তু এসব ত্যাগ করুন। এবং সত্ব গুণী লোকের সঙ্গৎ করুন। যেমন.. যিনি ভজন করেন, পবিত্র থাকেন, ভালো আচরণ করেন এবং সৎ পথে চলেন,সবার কল্যাণ এর ইচ্ছা রাখেন।  মোবাইল থেকে সৎসঙ্গ শুনুন, কোন সিরিয়াল দেখলেও ভাগবতিক সিরিয়াল দেখুন,খারাপ চরিত্রের সিরিয়াল দেখবেন না। যখন আমাদের সঙ্গত,দৃশ্য, শ্রবণ, কথন, খাদ্য , পানীয়, বসবাস এবং পরিধান এসব সত্বগুনী হবে, তাহলে তখন আপনার ভিতর সত্বগুণ বাড়বে। এইভাবে তম গুন কে দমন করে, তবে আমরা গুনাতীত হতে পারি। সঙ্গে নিরন্তর ভজন করব। তাহলে সত্বগুণ কেও ত্যাগ করে  গুনাতীত হয়ে যাওয়া যায়, ফলে মায়া রুপি আবরণ সরে যায় এবং প্রেম দৃষ্টি প্রাপ্ত হয়। এই অবস্থা প্রাপ্ত হলে সর্বত্র ভগবান দৃশ্যমান হয়। উপলব্ধি হয় যে.. কোন কণা, কোন বিন্দু বাকী নেই, যেখানে ভগবান নেই। কোন ক্ষন এমন নেই, যখন ভগবান নেই। সর্বত্রই ভগবান আছেন। সব সময় ভগবান আছেন। এই অনুভব যখন হল.. তখন ঐ ব্যক্তি মায়ামুক্ত হয়ে গেল।

3) ভগবানের নাম কীর্তন করুন। নাম স্বয়ং সম্পূর্ণ। মন্ত্রের কীর্তন হয় না। মন্ত্রের জপ হয়। জপ তিন প্রকার। যথা ১)বাচক জপ, ২) উপাংশ জপ এবং ৩)মানসিক জপ ।

বাচক রূপে মন্ত্র জপ করা যায় না, ঈশ্বরের নাম জপ করা যায়।  উপাংশ এবং মানসিক রূপেই মন্ত্রকে জপ করা যায়। এটাই শাস্ত্র সিদ্ধান্ত। 

বাচক জপ হলো.. সশব্দ জপ অর্থাৎ আপনি যা জপ করবেন তা বাইরে থেকে শোনা যাবে।

উপাংশ জপ হলো.. এতে মুখের ঠোঁট নড়বে।  দেখলে মনে হবে ব্যক্তি কিছু উচ্চারণ করছেন, কিন্তু গলার আওয়াজ শোনা যাবে না।

মানসিক জপ হলো.. এমন জপ যাতে আপনি মনে মনে জপ করবেন মুখ নড়বে না, ঠোঁটও নড়বে না, সাধক যে জপ করছেন, তা বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। 

আরেক প্রকার জপ হলো অজপা জপ। যখন আপনি ঈশ্বরের নাম অভ্যাস করতে করতে এমন অবস্থা প্রাপ্ত হবেন যে.. ঈশ্বর নামের অনুভূতি রোমে রোমে, শিরায় শিরায়, প্রতি অঙ্গে এতটাই দ্রবীভূত হবে যে.. আপনার শরীরে আপনার অজান্তেই ঈশ্বরের নাম জপ চলতে থাকবে। এমন অবস্থা প্রাপ্তিতে যে জপ হয় তা হল ও অজপা জপ।

 4) যখন কোন ধর্মাত্মা পুরুষ কোন সংকটের মধ্যে পড়েন, তখন ঈশ্বর তার সমাধান স্বরূপ তাঁকে কোন মহাত্মা পুরুষের সান্নিধ্য করে দেন। যাতে সেখান থেকে তার সংকটের সমাধানের পথ বের হয়। এটা ঈশ্বর কৃপা। এটাই ঘটে যিনি বাস্তবিক ধর্ম মেনে চলেন। তিনি কোন না কোন মহাত্মা সান্নিধ্য লাভ করেন, যাতে তার আধ্যাত্মিক পথ আরো সুগম হয়। 


5) ভগবত প্রাপ্তির সহজ সরল উপায়-

ভগবত প্রাপ্তির সব থেকে সহজ উপায় হল ভগবানের নাম জপ করা। ভগবানের নাম জপ করলেই সকল তপস্যা করা হয়ে যায়। সারা বেদান্ত পড়ুন, সকল তীর্থ ভ্রমণ করুন, কিন্তু তবু নাম জপ করতেই হবে। যাঁর জিহ্বার অগ্রভাগে ভগবানের নাম চলছে, তিনি চন্ডাল হলেও বন্দনীয়। তপস্যা বা জ্ঞান দিয়ে নয়, নাম জপ করেই হরি কে বশে আনা সম্ভব। নাম হলো যেমন ঘুড়ির সুতো, কৃপাময় ভগবান তো সর্বত্র বিরাজমান। ভগবানের নাম জপ করুন, দেখবেন ভগবান হৃদয়ের মধ্যেই প্রকাশিত হবেন। নাম জপ ছাড়া কারো ঈশ্বর প্রাপ্তি সম্ভব নয়। না ইন্দ্রিয় শুদ্ধ, না পরিবেশ শুদ্ধ, এমতাবস্থায় ভগবৎ প্রাপ্তি সম্ভব একমাত্র ভগবানের নাম জপ করে। রাম, কৃষ্ণ, নারায়ণ শিব, দুর্গা কালী গণেশ, সব একই ঈশ্বরের নাম, কোন আলাদা শক্তি নয়। তাই আপনার ঈশ্বরের যে নামটি প্রিয় সেই নামটি গ্রহণ করুন এবং ওই নামের নিরন্তর জপ করুন। কৃষ্ণ নাম, রাম নাম, যে নামই গুরু আপনাকে দিয়েছেন সেই নাম যিনি নিরন্তর জপ করবেন, তিনি নিশ্চয়ই মায়াকে পরাজিত করতে পারবেন। রাধা রাধা, কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপতে থাকুন, আর যদি ভগবত দর্শন না হয়, তখন বলবেন। অবশ্যই হবে। ভগবানের নাম জপ করলে সকল কুশক্তি নষ্ট হবে, সকল পাপ নষ্ট হবে। জপ ক্রিয়ার সকল বৃত্তি জাগরিত হবে। ভগবানের স্বরূপ জ্ঞান প্রাপ্তি হবে, সংসারের সকল জ্ঞান প্রাপ্তি হবে, কিছু বাকি থাকবে না। শুধু নাম জপ করুন, ভগবানের নাম জপ করুন। এর থেকে সহজ এবং এর থেকে কঠিন কোন সাধন নেই।

6) যেমন আজকাল অনেক ব্যক্তি কথা বাচক এবং গুরু হয়ে দীক্ষা দিচ্ছেন। ভগবানের নাম দীক্ষা দিচ্ছেন। আমি বলছি তিনি যদি আপনাকে বলেন যে.. "রাম" নাম জপ করুন, তাতে অসুবিধা কি? 'রাম' নামে তো কোন অশুদ্ধি নেই। আমার বক্তব্য হল.. কারো মধ্যে দোষ দেখছেন কেন? আমার কথা এবং আমার সৎসঙ্গকে যদি ধ্যান দিয়ে শুনে থাকেন, তাহলে কোন সংশয় থাকবে না। এই শরীরে অশুদ্ধি আছেই, আপনি আমি কেন সবার মধ্যেই দোষ আছে। এই শরীর মায়াকৃত, এটা তো আর ভগবান নয়? তাই এর মধ্যে দোষ মিশ্রিত থাকবেই। আপনি যদি এই শরীরের মধ্যে দোষ দেখবেন তো অবশ্যই পাবেন, কারণ এই মায়াকৃত শরীর দোষ এবং গুন দিয়েই তৈরি। কিন্তু এর মধ্যে যে আসল স্বরূপ সেটা সবারই চিদানন্দময়। এবার যিনি নিজেই স্বরূপ ভুলে গিয়ে এই শরীরে আসক্ত আছেন, তিনি কি করে আমাদের শরীর রুপী রাগ থেকে সরিয়ে দিতে পারবেন? কারণ তিনি তো নিজেই শরীরের প্রতি আসক্ত  আছেন। তাই সদগুরু কে গুরু রুপে ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। 

কে সদগুরু? যাঁর পাশে বসলে, যাঁর কথা বচন শুনলে, যাঁর দর্শন করলে, আমাদের এমন অনুভূতি হয় যে.. আজ পর্যন্ত "আমি যেটা খুঁজছিলাম সেটা পেলাম। তাঁর সান্নিধ্য হতেই আমার সকল দোষ কর্ম ধরা পড়েছে। সেই কু চিন্তা গুলো যাঁর সান্নিধ্যে দূর হচ্ছে, মন ঈশ্বরের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে, যাঁর দর্শনে ভগবৎ প্রীতির অনুভব হচ্ছে, যাঁর সান্নিধ্যে এসে ভগবান এর নাম জপ করার ভাবনা আসছে।" তাহলে তাঁকেই গুরু রূপে স্বীকার করুন। যদি ভুল ভাবনা বশত যে কাউকে গুরু রুপে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং পরে সেই গুরুর আচরণে দোষ দর্শন অনুভূত হয়, তাহলে তাঁর সঙ্গে সঙ্গত আর করবেন না। তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন। কিন্তু তাঁর বদনাম করার প্রয়োজন নেই,শুধু দূরত্ব বজায় রাখুন।

 যদি গুরু বলেছেন কৃষ্ণ নাম জপ করতে হবে, তবে কৃষ্ণ নাম জপ করুন। আর যেখানে ভাব আসবে সেখানে সৎসঙ্গ শুনুন। সেখানেই আপনার মঙ্গল হবে, আপনার কল্যাণ হবে। আমার মনে হয়, যেখানে আপনার শ্রদ্ধা টিকছে না, সেখানে যাবেন না। কিন্তু সেই গুরুর দেওয়া নাম কে অবশ্যই ধরে রাখুন এবং জপ করুন, কারণ ঈশ্বরের নামটিতে তো কোন অশুদ্ধি নেই? গুরু কি হন, অথবা কি নয়, তাতে আসে যায় না। আমার মনে হয় যে মন্ত্রই আমরা গুরুর কাছে পাই, তাকে যদি ধরে রাখি এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন করি এবং সেখানেই আমার শ্রদ্ধা আসে, সেখানেই সন্তের সঙ্গ করা হয়, তাহলে ভগবত প্রাপ্তি হতে সংশয় থাকবে না।

7) আমি মন্ত্র নিলাম এবং পরে ওই মন্ত্রের শ্রদ্ধা যদি না থাকে এবং পরে অন্য কোন সন্ত ভগবানের সৎসঙ্গ শুনে, তাতে শ্রদ্ধা হয়, তাহলে সেখানে কি আবার গুরু দীক্ষা নিতে পারি? 

না নেওয়ার দরকার নেই। ওই আগের গুরুর নামই জপ করুন। হ্যাঁ তবে যদি এমন মনে হয় যে..ওই নামই আমাকে প্রেরিত করে নতুন নাম কে জপ করতে ইচ্ছে করাচ্ছে, তাহলে অন্য কথা। কিন্তু ঈশ্বরের এক নাম এর অশ্রদ্ধা করে অন্য নাম জপ করাটা ঠিক নয়। ভগবানের যে নামটাই গুরুর কাছে পান না কেন, সেটা একই পরমার্থ তত্ত্বের নাম, আলাদা নয়।

তবে যদি রস আস্বাদন  পেতে ঈশ্বরের অন্য নাম জপ করেন, তাতে দোষ নেই। সব নামই তো সচ্চিদানন্দ প্রভুর নাম,  হ্যাঁ তবে যদি ভগবানের অন্য নামটিতে প্রেম ভাব তৈরি হয়, তবে সেটা আলাদা। যেমন আমি প্রথমে সন্ন্যাস মার্গের উপাসক ছিলাম। রস আস্বাদনের ঈশ্বর জন্য আমাকে সেখান থেকে এখানে ভক্তি মার্গে নিয়ে আসেন। 

8) গুরু নাম জপ ই হল ঈশ্বরের নাম জপ।  অন্য সব সাধন হলো শূণ্য এবং নাম জাপ হলো অংক। অংক বিরাজমান করে গুণ বৃদ্ধি করুন, দেখবেন 10 গুন ফল পাবেন। নাম জপ করতে করতে ঝাড়ু লাগান, নাম জপ করতে করতে ব্যবসা করুন, নাম জপ করতে করতে ভগবানের সেবা করুন, অর্চনা করুন, দেখবেন অর্চনা, বন্দনা, করতে করতে.. সব ভালো হয়ে যাবে। যেমন সুখ চাই, যা চাই আপনার, তাই পাবেন। শুধু নাম জপ বেশি করুন। যেমন বাজারের কোন জিনিস কিনতে গেলে আপনার পাশে টাকা থাকা দরকার। তেমনি এই সংসারে কিছু পেতে গেলে নাম রূপী ধন থাকা চাই। ত্রিভুবনে যা চাইবেন,তাই পেতে পারেন। তবে আপনার পাশে ভজন বল থাকতে হবে। নাম জপের তুল্য কোন সাধন নেই। যে ব্যক্তি সব সময় ভগবানের নাম জপ করেন। তিনি ইচ্ছা অনুসারে ভোগ প্রাপ্তি পান। আর যদি ভোগ না চান, তাহলে ভগবত সাক্ষাৎকার হয়ে যাবে। ভগবত সাক্ষাৎকারও যদি না চান,তাহলে অদ্ভুত প্রেম প্রকট হবে। যতই বিপত্তিতে থাকুন না কেন ঈশ্বরের নাম জপ করুন। সব বিপত্তি নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন সূর্যের কিরণ আসতেই অন্ধকার দূর হয়, তেমনি ভগবানের নাম জপ দ্বারাই সব বিপত্তি নষ্ট হয়। 

9) কারো দেওয়া কোন দোয়া বা বদ দুয়া প্রভাব ফেলে না, কর্মের ফল স্বরূপই সুখ-দুঃখ প্রাপ্তি হয় ।

10)  রাম রাম জপতে থাকুন, এই নামের মধ্যেই সব জ্ঞান বিরাজমান। রাম নাম স্বয়ংসম্পূর্ণ। সম্পূর্ণ জ্ঞান, সম্পূর্ণ ভক্তি, সম্পূর্ণ ঐশ্বর্য এবং ভগবানকে অধীনে আনার সমস্ত সমর্থ্য রাম নামের মধ্যে আছে। গোস্বামী তুলসীদাস বলতেন.."রাম ই আমার মাই, রাম ই আমার বাপ।" একটি নিঃশ্বাস ও যেন নাম জপ থেকে খালি না চলে যায়। 

তুলসী দাস জি লিখেছেন.."নাম আউর শ্বাস দো বিলত চলত হেয়, ইনকো ভেদ না মোকো ভাবে, স্বাস হি নাম, নাম হি স্বাসা, নাম স্বাস কা ভেদ মিটাবে।" রাম নাম রামের এমন রূপকে প্রকাশিত করতে পারে, যা বড় বড় যোগীও ধ্যানস্থ হয়ে করতে পারেন না। যখন রাম কৃপা করেন, তখন স্বয়ং রাম ভগবান ওতে প্রকাশিত হন। 

11) এই ত্রিগুণাত্মিকা মায়া, অবিদ্যারূপী অন্ধকারকে ব্যপ্ত করে, অবিদ্যার প্রভাবে, প্রকাশ্য রূপ ভগবৎ অংশ জীব নিজের স্বরূপকে ভুলে গিয়ে দেহাত্মভাবকে প্রাপ্ত করেছে, এটাই অন্ধকার। কোনোদিন এই অবিনাশী স্বরূপ কে কেউ ঢাকতে পারে, এমন সৃষ্টিতে কেউ নেই। না মায়া, না কাম, না ক্রোধ, না লোভ, না আগ্নেয়াস্ত্র, না বরুনাস্ত্র, না বায়ু অস্ত্র,.. "নৈনম ছিন্নতি  শাস্ত্রাণী"- তাহলে.. এতে মায়া কিরূপে ঢুকতে পারে?

  আমরা নিজেই একে ছুঁয়েছি, আমরা নিজেই মায়া কে ধরে রেখেছি। মায়া আমাকে ছাড়ছে না এমনটা নয়, আমিই মায়া কে ছাড়ছি না। রাম রাম জপ করুন, সব মায়া কেটে যাবে। মায়াবদ্ধ হয়ে আমাদের এখন এমন খারাপ অবস্থা যে.. নিজে নিজেকে মায়া থেকে মুক্ত করতে পারছি না। কারণ মায়া আমাদের দুর্বল করে দিয়েছে, পরাজিত করেছে। 

কিন্তু এখনও মুক্তির উপায় আছে। গোস্বামী তুলসীদাস বলছেন-"বিগড়ি জনম অনেক কি, অবহি শুধরে আজ।" রাম নাম জপ করুন। এমন ভাবনা নিয়ে আসুন যে.." হে রাম আমি আপনার।" দেখবেন এখান থেকেই দেহাভিমান ভাঙতে শুরু করবে। আমরা এখন অন্য সম্বন্ধী, ইন্দ্রিয় সম্বন্ধি, ভোগ্যবস্তু এসবকে স্বীকার করে নিয়েছি। তাই কোটি কোটি বছর ধরে সাধনা করেও এখান থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। তবে এখান থেকে মুক্তির শুরু এখনই সম্ভব। স্বীকার করুন যে আপনি প্রভুর, আপনি প্রভু শ্রী রামের এবং এমন স্বীকার করে রাম রাম, রাম, নাম জপ করুন। যাঁর থেকে আপনার সৃষ্টি হয়েছে সেই ভগবানের নাম জপ করুন, রাম নাম জপ করতে থাকুন।  প্রশ্ন হল রাম নাম জপে আসক্তি কি করে আসবে? 

উত্তরে বলি..যেগুলি ভগবৎ বিমুখ আচরণ, যেগুলি শাস্ত্রবিমুখ আচরণ, সেগুলিকে ত্যাগ করুন। 

যখনই আমরা ভাবি যে.."আমি প্রভু শ্রী রামের। আমি ভগবানের।" তখনই এক আনন্দ প্রকট হয়। এই আনন্দ এই যে .."সৃষ্টিকর্তা আমার সঙ্গে আছেন।"

 আপনি ভগবানের সন্তান। আপনাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। যতই কষ্ট হোক, যখন মনে হয় আমি ঈশ্বরের সন্তান, তখনই মনে শান্তি আসে। আমি প্রভুর, এই ভাব রেখে প্রভু শ্রী রামের নাম জপ করতে থাকুন, দেখবেন নাম জপ করতে করতে এমন ভাব আসবে, যে..আপনি বুঝতে পারবেন সবকিছুতেই রাম আছেন, সবের মধ্যেই রাম আছেন। তখন আপনি এবং প্রভু রাম মিলে একাকার হয়ে যাবে। দুজনের মধ্যে আর কোনো ভেদ থাকবে না। মনও রাম, বুদ্ধিও রাম, ইন্দ্রিয়ও রাম, হৃদয়ও রাম, প্রানও রাম, সবকিছুই রাম। আমি বলে কিছুই থাকবে না, সব কিছুই "রাম"ময় হয়ে যাবে। আপনি প্রভু শ্রী রামের মধ্যে লীন হয়ে যাবেন। "আমি" র অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমাদের কাছে রাম নামই হলো সবথেকে বড় পাহারাদার। রাম নাম এমন পাহারাদার যে.. কেউ আপনাকে ছুঁতে পারবে না। রামের থেকেও রাম নাম শ্রেষ্ঠ।

12) প্রকৃতি শব্দের অর্থ ভৌতিক জগত। কৃতি কথার অর্থ হচ্ছে রচনা। তাহলে রচনা যদি আছে, নিশ্চয়ই কেউ রচনাকার আছেন? পুত্র থাকলে তার পিতা তো থাকবেন। তাই এত বড় সৃষ্টির কেউ তো মালিক আছেন। সেই রচনাকারের যদি প্রমাণ চাই, তাহলে আমার কথা অনুসারে সাধনা করুন। এই রচনা কারকে বুদ্ধির বসে তর্কের মাধ্যমে জানা কঠিন। তাঁকে সাধনার মাধ্যমে জানতে হবে, এক্ষুনি আপনি অধর্ম আচরণ ত্যাগ করে পবিত্র হন, পবিত্র আহার গ্রহণ করুন, আর আমি আপনাকে যে নাম জপ করতে বলছি তা জপ করুন। কত সংখ্যা জপ করতে হবে জানুন এবং এক বছর পর্যন্ত অনুসরণ করুন। দেখবেন প্রশ্ন নয়, সমাধান আপনার হৃদয়ে জাগরিত হবে। তিনি সাধনায় নয়, কৃপা করে জাগ্রত হবেন। কিন্তু সেই রস স্বাদ নেওয়ার আগে আপনাকে তার যোগ্য হতে হবে। যদি জানতে হয়, তাহলে আহার শুদ্ধ করুন, নাম জপ করুন এবং কোন অসহায়ের সেবা করুন। এবং ঈশ্বরকে প্রার্থনা করুন "হে প্রভু! আমি আপনাকে অনুভব করতে চাই। আপনি কোথায় এবং কেমন ভাবে থাকেন?" সব উত্তর পেয়ে যাবেন। দেখবেন বুদ্ধি তর্ক দিয়ে সৃষ্টিকে যা অনুভব করেছেন, তার থেকে এই প্রভু কৃপা প্রাপ্ত অনুভব আলাদা। এই অনুভব পরম সুন্দর এবং আনন্দময়। যখন আপনার অনুভূতি আসবে আপনি বুঝতে পারবেন 'রাম তত্ব' বুদ্ধি এবং মনের উপরে। কেউ সেখানে প্রভুর কৃপা ছাড়া পৌঁছাতে পারেনা। সূর্যকে কে প্রকাশিত করছে? চন্দ্রকে কে প্রকাশিত করছে? অগ্নিতে দাহিকা শক্তি এলো কি করে? কে দিল? জলবায়ু আকাশ, পৃথিবী, এসবের সৃষ্টি হলো কি করে? ভারতে ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা আছে, সবার আলাদা আলাদা চেহারা, ব্যক্তিত্ব, কি করে সম্ভব? সমস্ত জীব পশু পক্ষী সবার ভরণ পোষণ হচ্ছে।

 রাষ্ট্র আছে তো রাষ্ট্রপতিও আছেন, তবে  যিনি নিরক্ষর তিনি রাষ্ট্র সম্বন্ধে জানবেন না, এটা হতেই পারে। তেমনি কোনো অজ্ঞানী এই সৃষ্টি এবং সৃষ্টি কর্তাকে জানবেন না, এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। বেশিরভাগ লোক নিজের পরিচয়ই তো জানে না। এই সাড়ে তিন হাতের শরীর, এর ভেতরে যে আমি আছি, তাকেই তো জানা নেই। নিজেরই তো প্রমাণ দিতে পারেন না। যদি আপনাকে আপনার সম্বন্ধ্যে জিজ্ঞাসা করা হয়.. আপনি বলবেন এটা আপনার হাত, আপনার পা, আপনার হৃদয়, আপনার মাথা, তাহলে আপনি টা কে? এসব আপনার তাহলে আপনি কে? আপনি কি মন? আপনার বুদ্ধিটা আপনার। তাহলে আপনি কে? আপনি তো শরীর নন, মন ও নন, বুদ্ধি ও নন, এসব আপনার। তাহলে আপনি কে? নিজেকে জানতে পারলেন না? তাহলে এত বড় সৃষ্টির নির্মাতাকে জানা সহজ? যদি আমি কে জানলেন, যদি নিজেকে জানলেন, তাহলে তাঁকে আপনা আপনি জেনে যাবেন। আপনি এবং তাঁর মধ্যে কোন ভেদ নেই, তিনি সবেতে বিদ্যমান। তিনি আপনার ভেতরেও তিনি সাক্ষী রূপে বিদ্যমান আছেন। আপনার হৃদয়ের মধ্যেই তিনি আছেন, আপনার ঐকান্তিক গুহায় তিনি অবস্থিত। ভগবান কোনো বৌদ্ধিক বা প্রাকৃতিক বস্তু নয়। সমস্ত বুদ্ধি ঈশ্বরকে সমর্পণ করুন, তবে বুঝতে পারবেন। এই এক কনাও বাদ নেই, যেখানে ঈশ্বর নেই। 

13) কামনা-পূর্তি হলে পুণ্য ক্ষয় হয়, আপনার কত তপস্যা কত ভজন আছে, তা থেকে বোঝা যায় আপনি কত কামনা পূর্ণ করতে পারবেন। তাই নিজের কামনায় নয়, যাই পান, তাতেই সন্তুষ্ট হন। তাহলে যতসব আপনার সাধন ভজন আছে, তা জমা থেকে যাবে ।

14) আগে শরণাগত হয়ে যান, কাজ হয়ে যাবে। আপনি রক্ষা পাবেন। আপনি ভক্ত হন, বা আর্তভক্ত হন অথবা জিজ্ঞাসু ভক্ত হন, কিন্তু ভগবানকে ভগবানের হয়ে জপ করতে হবে। তাহলে তিনি স্বেচ্ছায় আপনার ইচ্ছা পূরণ করবেন। কিন্তু এখনো অনেকে আছেন, যাঁরা ভগবানকে নিজের বলে জানেন না। আমার ছেলে, আমার স্ত্রী, আমার স্বামী, আমার বাড়ি, আমার ঘর, যাঁরা এরূপ ভাবেন, তাদের কিছু প্রাপ্তি পেতে গেলে তপস্যা করতে হবে। সাধনা করতে হবে। তবেই কামনা পূর্তি হবে।

 আর যিনি ভগবানের প্রতি সমর্পিত আছেন, বা ভগবানের সমর্পিত হয়ে যান, সত্যি কথা বলতে গেলে তাঁদের কামনা-বাসনা থাকে না, আর যদি কামনা থাকলোই বা, তাহলে সেটা ঈশ্বরের কৃপায় পূর্ণ হয়ে যায়। এঁদের কামনা পূর্ণ এমন ভাবে হয়, যেমনটা এক পিতা পুত্রের কামনা পূর্ণ করেন। মাতা পিতা আমাদের কামনা পূর্ণ করেন, কিন্তু তার পরিবর্তে তাঁরা কিছু নেন কি? না নেন না। নিজের পুত্র কন্যার খুশিতেই পিতা-মাতা খুশি হন। এমনিভাবে প্রভুকে নিজের ভাবলে.. প্রভু পুত্রবৎ ভেবে আপনার কামনা পূর্ণ করবেন। 

অনেকে তো প্রভুকে প্রয়োগের বস্তু মেনে নেন । সাধ্য রূপে সংসারকে এবং প্রভুকে সাধনা বানিয়ে নিয়েছেন। এমন ব্যক্তিকে কোনো কিছু প্রাপ্তির জন্য তপস্যা করতে হবে, তবেই ইচ্ছা পূরণ হবে। কথা হল..হয় আপনি প্রভুতে সমর্পিত হয়ে যান অথবা প্রভুর প্রতি সাধনা করুন। 

আর যদি আপনি প্রভুতে সমর্পিত নেই, তাহলে চাইলেই যা কিছু পাওয়া যাবে না। যদি পূন্য সঞ্চিত থাকে, সুকৃত থাকে, তাহলে কামনা পূর্ণ হবে। কিন্তু এটা জানবেন,কামনা পূর্ণ হলে সুকৃত নষ্ট হয়ে যায়, পুণ্য ক্ষয় হয়।                               


                                                                                


15) যেমন পলক আপনা আপনি নড়ে, তেমনি আপনা আপনি আপনার কাছেও ধন আসবে। আপনাকে প্রভু বিধান করেছেন ..আপনি কেবল হরি ভজন করুন এবং নিজের কর্ম করে যান। আপনি নিজের কর্তব্য করতে করতে ফলের ইচ্ছা না রেখে, ভগবত স্মরণ রাখুন। যিনি ঈশ্বরকে স্মরণ রাখেন, তাঁকে স্বয়ং ঈশ্বর দেখাশোনা করেন। যখন অখিল ব্রহ্মাণ্ডের মালিক আমাদের দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন চাহিদা লিস্ট তাঁকে কেন ধরিয়ে দিচ্ছেন? যখন দরকার উনি ঠিকই দেবেন। এর জন্য চাওয়ার দরকার কি? শুধু প্রভুতে এতটুকু ভরসা থাক, আর বিশ্বাস-ভক্তি থাকুক। যদি ঈশ্বরের কাছে কিছু ভোগ্য বস্তু চান, তাহলে অনুষ্ঠান করতে হবে। আর যদি প্রভুতে বিশ্বাস-ভক্তি থাকে, সমর্পণ থাকে, তাহলে চাইতে হবে না। অনুষ্ঠান করতে হবে না। 

সত্যি কথা হল যখন ভক্তি করবেন, ধীরে ধীরে কামনাই দূর হয়ে যাবে। প্রভু পদে পদে আপনাকে এমনভাবে সামলাবেন যে ..চাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। 

আপনি উন্নতি কাকে বলেন? বালক.. সংসারে যে লৌকিক সুখ আছে, তাও পুণ্যের প্রতাপ এ ফলীভুত হয়। যদি আগে আপনি পূন্যা করে আছেন, তপস্যা করে আছেন, তাহলে এখানে আপনি এর ফলস্বরূপ সুযোগ-সুবিধা পেতে থাকবেন। যেমন ..আপনার বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হবে, সব কাজে অনুকূলতা পেতে থাকবেন, ইত্যাদি। আর যদি আপনার পূর্ব পূণ্য না থাকে, তাহলে আপনি অনেক চেষ্টা করে যাবেন এবং আপনার সামনে বাধার পর বাধা আসতে থাকবে। হয়তো আপনি অনেক বড় পড়াশোনা করলেন, তবুও চাকরি হলো না অথবা অনেক পড়াশুনা করতে আপনি ইচ্ছুক, কিন্তু টিউশন দেওয়ার পয়সা জুটছে না। অনুকূল ব্যবস্থা হচ্ছে না। লৌকিক উন্নতিতে আমাদের পূন্যা ফল কাজ করে এবং লৌকিক অবনতিতে পাপ ফল কাজ করে। যেমন..যে ব্যক্তি বিবেকবান, বুদ্ধিমান, তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান..যে "আমি যেন সুখ পাই, দুখ না পাই।" কিন্তু সেটা হয় না। পরিস্থিতি জোরপূর্বক তাঁকে দুঃখ প্রদান করে। এর কারণ আমাদের কর্ম। আধ্যাত্মিক ব্যক্তি এটা ভালকরে বুঝতে পারেন। 

আপনি সংসারে চলে আসা দুঃখকে বুদ্ধিমানের সহিত স্বীকার করে গ্রহণ করুন। ভজন, ভগবানের নাম জপ, ভগবানের লীলা গায়ন, লীলা শ্রবণ এবং অন্যের মধ্যে ভগবৎ সেবা, এটাই একমাত্র পথ যা আপনার বাধা রূপী যে পাপকর্ম আছে,  তাকে ভস্ম করতে পারে, তাকে নষ্ট করতে পারে। 

বালক..ভগবানের নাম জপ এর প্রভাব আপনার উন্নতি আর পথে যে বাধা আসছে,  বা আসবে, সেই বাধা কে নষ্ট করে দেবে। জ্যোতিষগন বলেন,"আপনার জন্য যে গ্রহ প্রতিকূল আছেন, তা যদি অনুকূল হন, তাহলে আপনার উন্নতি হবে।"  গ্রহের অনুকূলতা বা প্রতিকূলতা কথাটা মিথ্যা নয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র সত্য কিন্তু যতই গ্রহ, নক্ষত্র, লোকপাল, যতই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ইত্যাদি বীকার আছে, সবই ভগবানেরই শাসন বিভাগে যুক্ত। আপনি যদি আইনের অনুকূলে চলেন, সহযোগিতা করেন, তাহলে এঁরা সহযোগী হবেন, আর যদি আইনের প্রতিকূলে গেলেন, তবে এঁরাই কষ্ট দেবেন। তাই যতই গ্রহ শুক্র, শনি, রবি, রাহু,কেতু, যায় হন..আপনার মধ্যে যদি ভগবানের নাম চলছে, তাহলে এনারা কিছুই ক্ষতি করতে পারবেন না।  আর যদি গ্রহের প্রভাবে কেউ সুখী আছেন, তাহলে তিনি এখন পূর্বের পূণ্য ফল ভোগ করছেন।

 বালক ..পিতা-মাতার আজ্ঞায় থাকুন। যতটা সম্ভব এবং মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করুন। কর্ম করুন, দেখবেন সফলতা পাবেন। 

16) আমি অনেক স্তোত্র পড়েছি, কিন্তু নাম জপ করি না। কি স্তোত্র পড়লে কিছু লাভ পাবো?

 স্তোত্র পড়লে লাভ পাবে। কিন্তু পরম লাভ পেতে গেলে নাম জপ জরুরী। মনে করুন আপনি স্তোত্র পড়ে উঠেছেন, আর মারা গেলেন। যে কল্যাণ হয়, সে তো অন্তিম চিন্তন থেকে হয়। "অন্ত:মতি সৌগতি।" এই জন্য সর্বদা নাম জপ করা দরকার। 

17) মহারাজ কিছু লোক ধর্মাচরণ এবং পাপাচরণ দুটোই করেন। তাহলে কি ধর্মাচরণ দিয়ে পাপাচরণকে নাশ করা যায়?

 পাপ আর পূণ্যের আলাদা আলাদা হিসাব আছে। যদি আপনার অনেক পাপ থাকে এবং নামমাত্র পূন্য থাকে, তাহলে আপনাকে  নরক যেতে হবে। আর যদি অনেক পূণ্য থাকে এবং স্বল্প পাপ থাকে, তাহলে স্বর্গ যেতে হবে। স্বর্গে গিয়ে পূণ্যের বড় অংশ ভোগ করতে হবে, তারপর যে কিছু পাপ ও কিছু পূণ্য বেঁচে থাকে সেটা নিয়ে শরীরের রচনা হয়। এবং মৃত্যুলোকে আসতে হবে। পূণ্য দ্বারা পাপ নষ্ট করা যায় না।   হ্যাঁ একটা উপায় আছে, যা দিয়ে নষ্ট করা যায়। সেটা হলো ভগবানের ভজন। এই ভজন কার্য ত্রিগুণত্বিকা মায়া কর্তৃক রচিত কার্য নয়। যেমন রাধা রাধা ভজন, ভগবানের  নাম নেওয়া, ভগবানের স্বরূপ ও ভগবানের লীলা গায়ন, ভগবানের ধর্মীয় আলোচনা, এসব হলো ত্রিগুনাতীত। এই সাধন ভজন হল মায়াতীত কর্ম। এর দ্বারা আমরা মায়া থেকে বিজয় প্রাপ্ত করতে পারি। যে বিদ্বান ব্যক্তি এই বিষয়ে বুঝেন, তিনি ভগবানের ভজন কীর্তন, শ্রবণ, ভগবানের ধ্যান, এসব করে,পাপ পুণ্য দুটোকেই নষ্ট করে, পরম সুখ, পরম আহ্লাদ, পরম পদ, পান। 

আর যিনি এটা বুঝেন না, তিনি দেহাভিমানি থেকে, ক্রমশ পাপ পুণ্যের ফল ভুগতে থাকেন, জন্ম জন্মান্তর। যখন সৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এমনটাই চলে আসছে। 

এই ভাবেই পূণ্য বাড়লে স্বর্গ প্রাপ্তি, পাপ বাড়লে নরক প্রাপ্তি। স্বর্গ এবং নরক দুটোই অস্থির। যাঁর পাপ পুণ্যের বিশেষ ভোগ হয়ে গেল, তিনি কিছু পূণ্য  এবং কিছু পাপ নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেন। এবং পৃথিবীতে আবার কর্ম অনুসারে পাপ পুণ্য সংগ্রহ করেন। যাকে পরে আবার ভোগ করেন। এই ভাবে কর্মচক্র চলতে থাকে। এই চক্র থেকে বের হওয়ার একমাত্র শরীর হলো মানব শরীর।এই তত্ত্ব তখনই বুঝতে পারবেন, যখন ভজন করবেন। ভজন এবং সৎকর্ম ছাড়া ভগবৎ তত্ত্ব বুঝতে পারবেন না। যদি এই তত্ত্ব বুঝে থাকেন.. তাহলে সর্বদা সৎ মার্গে যাওয়ার পথ খোলা থাকে। 

কখনো যদি সৎ মার্গ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে যান, তাহলে ঈশ্বরকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে তন মন প্রাণ ভগবানকে সবকিছু সমর্পিত করে, সংকল্প নিন, আর মনস্থির করুন, যে.. ধর্ম পথে চলবো, ঈশ্বরের নাম জপ করব এবং জীবনে সুক্ষ দুঃখ যাই আসুক, তাকে সহ্য করে নাম জপ করব। করুন । দেখবেন মুক্ত হয়ে যাবেন। নিশ্চিত মুক্ত হবেন। কথায় বলে ..." ত্বদীয়ম বস্তু গোবিন্দম, তুভ্যমেব  সমর্পয়ে।"  এখনো পর্যন্ত অহংকারের কারণে যে দুর্গতি হয়েছে, হে নাথ আর করবো না।

 পাপ নাশ করার একমাত্র উপায় হল ..ভগবানকে স্মরণ করা, তাঁর নাম তার চিন্তন, এবং তাঁর ভজন করা। আর যদি কোন দেহাভিমানী এটা না মানেন, তাহলে তিনি পাপ পুণ্য অনুসারে তার ফল ভুগতে থাকেন এবং তাঁর বারবার জন্ম মৃত্যু ঘটতে থাকে। 

18) যখন আমরা সৎ এর সঙ্গে জুড়ে যাই, তখন অসৎ ভালো লাগেনা। সৎকর্মের স্থিতিশীলতা যেন নড়ে যায়। যেন যুদ্ধের মতো স্থিতিতেও না নড়ে। যুদ্ধের সময় ও ভজন চলতে পারে। তবে সেবা ছেড়ে ভজন করা নয়। 

শাস্ত্রে প্রমাণিত আছে যে.. আমাদের যে কর্তব্যকর্ম আছে তাকে করতে করতেই ভজন করা উচিত। দৈনন্দিন কর্ম ছেড়ে নয়। এমন নয় যে ভজন ইচ্ছা করলো তো সংসার কর্ম ছেড়ে দিতে হবে। সংসার ছেড়ে কোথায় যাবেন? সমাজে জন্মেছেন.. সমাজের সেবা আপনাকে করতেই হবে। যখন মন ভগবদাকার হয়, তখন নামের মধ্যে প্রভু নজরে আসেন।  সকল জীবেই উনি সমাহিত। তাই মনযোগ সহকারে প্রভুর সেবা করুন। বিনা মন লাগিয়ে প্রভুর সেবা সম্ভব নয়। তাই বলা হয়। যে কাজেই মন লাগুক তার মধ্যে প্রভুর কৃপাই থাকে।  বলা হয়, প্রভু পত্নিরূপে আসেন, তো পত্নিরূপে ব্যবহার করুন,  প্রভু পুত্র রূপে এলে পুত্রবৎ ব্যবহার, মাতা রূপে এলে মাতার মতো ব্যবহার এবং পিতা রূপে এলে পিতা রূপ ব্যবহার করুন। ধর্ম অনুসারে ব্যবহার করুন। যে নাটক আপনি পেয়েছেন, সেটাতে যে ভূমিকা পেয়েছেন, সেটা করুন। এই নাটক আপনি করছেন প্রভুর জন্য। আর যদি এটা না বুঝেন, তবে বিক্ষেপ আছে। যেখানেই যান সংসার আপনাকে ছাড়বে না। পাহাড়ের গর্তে ধ্যানস্থ হলেও সেখানেও সংসার আছে। সেটাও সংসারের বাইরে নেই। যদি ভগবৎ প্রাপ্তি পেতে হয় তাহলে যে কর্ম আপনি পেয়েছেন সেটা ভালোভাবে করুন। ঈমানদারীর সঙ্গে বীরতা পূর্বক করুন। কিন্তু এটা করছেন কেন?  যাই করছেন, সকল কর্ম ঈশ্বরকে অর্পণ করার জন্য। এমন ভাবুন যা কর্ম পাবো ঈশ্বরের কাজ ভেবে করবো। তাহলে  খারাপ কাজ আপনি করবেন না। আমাদের যেখানেই যা কর্তব্য আছে, সেটাই পূজা। যদি কর্ম ভগবানকে উৎসর্গ করে হয় তাহলে সেটা কর্মযোগ হয়ে যায়। এই রকম ভাবে দৈনন্দিন কর্ম ঈশ্বরকে সমর্পণ করলে, আপনার কর্ম সিদ্ধ পুরুষের যেমন কর্ম, তেমনি কর্মই হয়ে যাবে। যতক্ষণ স্বাস আছে, যতক্ষণ হিম্মত আছে, এই শরীরকে সেবার কাজে লাগান। এত রূপে ভগবান আমাদের কাছে আসেন। তাঁর সেবা করুন।  প্রভুকে বিভিন্ন রূপে দেখে খুশি অনুভব করুন। তাহলে সেটাই সেবা হয়ে যাবে। পত্নী, পুত্র, পরিবার, সমাজ, দেশ, সবকিছুর সেবা করুন। নিজের কর্তব্য পালন করতে করতে যিনি সাধন ভজন করেন, তিনিই আসল ভজনানন্দী। 

19) ভগবান খেল খেলার জন্য এই সৃষ্টির বিস্তার করেছেন। "একোহম বহুশ্যামা" অর্থাৎ একজনই ঈশ্বর বহুরূপে প্রকাশিত। আমরা যাকে ঈশ্বর বলি তাঁর মূল প্রকৃতি প্রকৃতি থেকে ত্রিঘোনা থেকে প্রকৃতি শত রজতম গুণ এর উৎপত্তি সেখান থেকে মহৎ তথ্য থেকে ত্রিবিধ অহংকার, সকল দেবী, দেবতা, সবকিছু প্রকট হল। "একোহম বহু শ্যামা" সংকল্পে তৎক্ষণাৎ অখন্ড ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হল। তাই কথা হল.. সবার মধ্যে তিনি আছেন। ৮৪ লক্ষ  যোনি আছে, তার মধ্যে ৮৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৯ যোনি তে আপনি মুক্ত হতে পারেন না। একটাই মাত্র দরজা রাখা আছে উদ্ধার হবার জন্য, সেটা হলো মানব যোনি। আপনি এবং তিনি আলাদা কেউ নন। তাই একই মায়া থেকে তাই এই মায়া থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু এই রচনা এমনি ভাবে রচিত হয়েছে যে.. যখনই এলাম, আসা  মাত্রই ভুলে গেলাম আমি কে? আমি পুরুষ, স্ত্রী ইত্যাদি কেউ নই। যিনি দেহ ভাব কে প্রাপ্ত করেন, তাঁকেই জীব বলা হয়, আর যিনি দেহ ভাব মুক্ত তিনিই শিব।তাই তো সন্তগন জপ করেন.. "শিবোহম, শিবোহম" অর্থাৎ আমিই শিব, বা "অহম ব্রহ্মষ্মী", অর্থাৎ আর অন্য কেউ নয়, আমিই ব্রহ্ম। আমরা নিজেকে নিজের পরিচই  ভুলে গেছি। 

যিনি ব্রহ্ম কে জানলেন, তিনি ব্রহ্মময় হয়ে যান। তখন তিনি বুঝতে পারেন ব্রহ্মই ছিলেন, ব্রহ্মই আছেন এবং ব্রহ্মই থাকবেন। 

নিজেকে দেখুন আপনি কে? আপনি নিজেই নিজেকে ফাঁসিয়েছেন কেউ আপনাকে ফাঁসায়নি। মাকড়সা নিজেই নিজের মুখ থেকে জাল বের করে, জাল বোনে এবং নিজেই নিজের মায়াজালে খেলা করেন। আমরা নিজেই নিজেকে বাসনায় আবদ্ধ করেছি, অন্য কেউ নয়। আমরা নিজেই নিজের চাহিদায় আবদ্ধ । চাহিদা ছেড়ে দিন, এক্ষুনি আপনি মুক্ত হবেন। না কেউ আপনাকে বেঁধে রাখে নি। কেউ আপনাকে বেঁধে রাখতে পারে না। 

চাহিদা কখনো উৎপন্ন হল? যখন আমরা শরীরকে আমি ভেবেছি? খিদে আছে, পিপাসা আছে, দেখতে হবে, ছুঁতে হবে, শুনতে হবে,  জন্ম আছে, মৃত্যু আছে। এসব  কি করে হলো? এই দেহই  আমি এরকম নিজেকে মানতেই, এসব হয়েছে।  আমরা ঈশ্বরের অংশ জীব, হলো অবিনাশী। আপনি হলেন অমর। কিন্তু এখন তো আপনি এই অবিনাশীর বিরোধী। আপনিতো বিকারী হয়ে আছেন। আপনার সম্বন্ধ হল সুখ রাশি কিন্তু আপনি তো দুঃখী হয়ে আছেন? কারণ আপনি এই শরীরকে স্বীকার করেছেন। সেই গ্যভুলটা বুঝিয়ে আপনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। এই শরীরকে যদি তাই এবং আপন নাম হবেন তাহলে আপনার ঈশ্বর তত্ব অনুভব হবে। যেমন সমুদ্রে বায়ু বিকার এলে যে জলরাশি উঠে আসে তাকেই বলা হয় ঢেউ। আর বায়ু বিকার না থাকলে, সেটা হয়ে যায় সমুদ্র। তেমনি মায়া রূপে বিকারের জন্য এই ভুল বোঝা। মায়া রুপী বিকার সরে গেলেই  আপনিই ঈশ্বর। যেমন ঢেউ সাময়িক, তেমনি এই দেহও সাময়িক। ভ্রম যুক্ত হয়ে, নিজেকে দেহ ভেবে, কর্তা ভেবে, ভোক্তা ভেবে, বিচরণ করছেন। এই মায়াকে সরিয়ে ফেললেই নিজের স্বরূপ প্রকাশিত হবে। না স্ত্রী, না পুরুষ, না জড়, না চৈতন্য যেদিকে দেখবেন সবই ব্রহ্ম।

আমাদের ইচ্ছাই আমাদের বেঁধে রেখেছে। ভোগ্য বস্তু ভালো লাগছে, জিনিসপত্র ভালো লাগছে, ফলমূল ভালো লাগছে, এই চক্করে ফেঁসে গেছি। এখন হৃদয় পবিত্র না হলে, এর থেকে সামলে উঠতে পারবো না। যদি মায়াতে মন মজে থাকে, তাহলে আপনার স্বরূপই দেখা দেবে। যে জ্ঞান বুদ্ধি সত্যের উপর ছিল তা মায়ায়161ও ঢাকা গেছে। 

এই আধ্যাত্মিকতা কে জানতে গেলে এখন ভজন দরকার ,ভজন করতে হবে, এখন আমরা মায়াগ্রস্ত স্বপ্নের মধ্যে আছি। যখন জ্ঞানচক্ষু খুলবে, তখন এই মায়া নজরে আসবে না। যখনই জানবেন তখনই এই সৃষ্টি হারিয়ে যাবে। দেখুন, কোন না কোন রূপে এখনো প্রভু কৃপা আছে। কর্ম থেকেই সুখ-দুঃখের বিধান তৈরি হয়। মনুষ্য শরীর ঈশ্বরের কৃপায় প্রাপ্ত, এটা বড় ভাগ্যের ব্যাপার। এখন কাজ হল ভগবৎ স্মৃতি পরায়ণ হওয়া। যিনি যেখানেই আছেন, সেখান থেকেই ভগবত প্রাপ্তি সম্ভব। 

যদি আমরা অধর্ম আচরণ করি, শাস্ত্রের বিধান এর বিপরীত কাজ করি, তাহলে যতই ধন হোক, যতই বড় পদ হোক, যদি হৃদয় শীতল না হয়, শান্তি নেই। তাহলে সুখ আসবে কোথা থেকে? আমরা এখন বাহারি সুখে আসক্ত কিন্তু এ সুখ কতদিন? আমাদের আয়ু, আমাদের জীবন, সীমিত সময়ের জন্য। আর এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। যতই টাকা পয়সা দিন, একটি নিশ্বাস বায়ুও কিনতে পারবেন না। আমাদের নিশ্বাস বায়ু এতটাই মূল্যবান যে .. প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসে যদি আমরা রাম, কৃষ্ণ, হরি, বলতে না পারি, ভগবানের নাম জপ না করি,  আর যদি ধর্মযুক্ত কর্ম না করি, তাহলে আমরা নিজের সঙ্গে খুব বড় বিশ্বাসঘাতকতা করছি। আমরা যে এই অবসর পেয়েছি, আর পাওয়া যাবে কিনা কোনো ঠিক নেই। পরে মনুষ্যজনী পাই, কি না পাই, কোন ঠিক নেই। যদি পরের যোনি অন্য জীব হল, তাহলে তো মুশকিল। এটা বড় কৃপার বিষয় যে.. আপনারা সন্ত-সমাগম করছেন। এবার আমার প্রার্থনা এই যে.. আপনি যখন সন্ত সমাগম করছেন, তখন নিশ্চিত আপনার উপর ঈশ্বরের কৃপা আছে। এবার আমরা সাবধান হয়ে যাই, যে সময় পেরিয়ে গেছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন নেই, এখন থেকে যেন প্রভুতে মন থাকে, আজ থেকে যেন প্রভুর কাছ থেকে দূরে না যাই। 

আধ্যাত্ম্যের পথে যেখানে এসেছি, সেখান থেকে যেন পুনরায় পতিত না হই। যদি ভগবৎ প্রাপ্তি পাওয়া নাও  যায়, পরবর্তী জন্ম অন্তত যেন মানুষ জন্ম হয়। আবার যেন দেশ সেবা করার সুযোগ পাই। আবার যেন ঈশ্বর ভক্তি থাকে এবং অধ্যাত্মের এই অসম্পূর্ণ পথ পূর্ণ করতে পারি। আমার কাজ হল এই পৃথিবীতে আসা যাওয়া থেকে মুক্ত হওয়া। মানুষ জন্মের পরম লক্ষ্যই হলো ভগবান কে  পাওয়া। আপনি যেখানেই থাকেন, যেমনি অবস্থায় থাকেন, আপনি প্রভুর। নাম স্মরণ, ধর্মযুক্ত আচরণ, এটাই শাস্ত্রে সার। যদি চরিত্র পবিত্র থাকে এবং নাম স্মরণ চলতে থাকে, তাহলে ত্রিভুবনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব। যদি চরিত্র না মরে, না পড়ে যাই, তাহলে উঁচু কুলে জন্ম। পরম বৈভব এবং গুণ থাকতে ও পতন হয়। যেমন লঙ্কার রাজা রাবণের হয়েছিল। আমাদের দেশে চরিত্র পূজনীয়, যার চরিত্র পবিত্র এবং যিনি ভগবত পরায়ন হন, তিনি প্যান্ট শার্ট পরে থাকুন অথবা ধুতি কর্তা পড়ে থাকুন। তিনি যে বেশেই থাকুন, তিনিই মহাত্মা।

20) একজন সৎ ভালো মানুষকে বাঁচানোর জন্য যদি শত মিথ্যা কথা বলতে হয়, বলবো,তবু তাকে বাঁচাবো। এবং কোন খারাপ ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য যদি লক্ষ লক্ষ টাকা পাই তবু তাকে বাঁচানো তো ছাড়, তার দিকে তাকাবো না। এরকম ভাবে চললে, ঈশ্বরের শক্তি পাওয়া যায়। 

21) মাতা পিতার ব্যবহার দেখতে নেই। তাঁদের দেখাশোনা করুন। আমাদের কর্তব্য হলো যদিও বা তাঁরা গালি-গালাজি করেন না কেন, যতক্ষণ মাতা পিতা জীবিত আছেন তাদের সেবা করতে থাকলে আমাদেরও জীবন সুখে কাটবে। মাতা পিতা হয়তো খারাপ ভাষা বলুন কিন্তু তাঁরা যে ভালবাসাটা দেন, পৃথিবীতে আর কেউ দেবেন না। তাই যতই দুঃখ থাক মাতা পিতাকে আলিঙ্গন করাটা এক অসীম আনন্দের ব্যাপার। 

22) মাতা পিতাকে ভগবানের রূপ বলা হয়। যখন মাতা পিতার সেবা আপনি করেন, বা সাধু জনের সেবা করেন, যদি আপনি সেবা করছেন, আর তিনি আপনাকে গালি দেন, আপনি কিছু মনে করবেন না, সেটা আপনার আশীর্বাদ হয়ে যাবে। কখনো কখনো মাতা পিতা বৃদ্ধ হলে নিয়ন্ত্রণ হারান, ব্যবহার বিগড়ে যায়, কখনো হয়তো সেবা করলেও তাঁরা গালি দেবেন অথবা কোন বহিরা গত ব্যক্তি বা আত্মীয় এলে তাঁদের কাছে আপনার নিন্দা করবেন। আপনার স্ত্রীর নিন্দা করবেন। তা বলে মাতা পিতাকে ধমক দিবেন না অথবা মারবেন না,তবুও তাদের সেবা করুন, এবং নাম জপ করুন। এতে ভগবত দর্শন হবে। 

23) গৃহস্থীরা পূজার জন্য জেদ করবেন না। পূজার জন্য জেদ তখন করবেন, যখন পরিবার এর সকল কাজ শেষ হয়ে গেছে। যখন ঘরের কাজ শেষ তখন মনকে বোঝান এখন টিভি দেখবো না, "শ্রীজী" র  সামনে বসি, আর নাম জপ করি। কিন্তু যখন ছেলেপুলে স্কুলে যেতে তৈরি হচ্ছে, স্বামী ডিউটিতে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছেন, সেই সময় যদি আপনি পুজো করতে বসেন, তাহলে সাংসারিক কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। পুজোয় ব্যস্ত থেকে স্বামীর সেবা বা পরিবার এর সেবা না হলে, শেষে ঝগড়াঝাঁটি উৎপন্ন হবে, পরিবারে অশান্তি আসবে। এজন্য বলি আগে ঘরের কাজ করুন, পরিবারের সেবা করুন, এবং মনে মনে প্রভুর নাম জপ করুন। আর যখন সময় পাওয়া যাবে.. তখন ঠাকুরজীর সেবা করুন। ভগবান সব জানেন। আর ভগবান তো সর্বত্র সব জীবে বিদ্যমান। পরিবার সেবা, সমাজ সেবা, ঈশ্বর সেবা, এসব সেবা ঈশ্বর সেবা ভেবে করলেই হয়ে যাবে। কাজে কোন বাধা বিঘ্ন আসবে না। 

24) যদি ঘরে দশ মিনিট কীর্তন শুরু করুন, রাধা রাধা জপ শুরু করুন, ভগবানের যে নাম প্রিয় সেটা জপ করুন। ঈশ্বরের সব নামই সমান প্রভাবশালী। ১০ মিনিট কীর্তন শুরু করুন, আর উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, ভগবানের নাম জপ করুন এবং ফলস্বরূপ প্রার্থনা করুন হে ভগবান আমার পরিবার সৎ পথে চলুক, বা কারো বুদ্ধিমন্দ হলে, তার বুদ্ধি শুদ্ধির জন্য প্রার্থনা করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে সব ভালো হতে শুরু করেছে।

25) ভগবান শঙ্কর বলেছেন .."উমা কহু মই অনুভব আপনা, সৎ হরি ভজন, জগৎ সব সপ্না।" এই মায়া রুপি সংসারের আসল অস্তিত্ব নেই। আর নিরন্তর রাম নাম যাপক কে আবিদ্যা রুপী মায়া কখনও ছুটে পারে না, বা মায়া তার কোন অমঙ্গল করতে পারে না। ভগবান সর্ব সমর্থ এবং সদা মঙ্গলময়। তিনি অমঙ্গল ভাবতেই পারেন না। আমি পুরো জীবনের অনুভবের সার কথা বলছি, সকল গ্রন্থের সার বলছি, যাঁর জিহ্বা এবং যাঁর মনে সর্বদা রাম নাম চলে, তাঁর জন্য কিছুই দুর্লভ নয়। আর যিনি ভগবানের নাম ধরতে পারলেন না, তাঁকে শত জন্ম সাধনা করলেও এই সংসারে ফিরে আসতে হবে। যেমন দুধ কে গ্যাস চুল্লিতে রেখে দিলে তা ফুলে ওঠে, তেমনি হৃদয় ফুলে উঠবে রাম নাম জপ করলে। আমাদের জীবনে যতগুলি প্রাণবায়ু শ্বাস-প্রশ্বাস বেঁচে আছে, তার প্রতিটিতে নাম জপ করুন এবং নাম যাপক সন্তদের সেবা করুন, অন্য জীবের সেবা করুন এবং প্রকৃতির সেবা করুন। যদি আমাদের ভগবানের নাম সুমীরণ চলতে থাকে এবং দাসত্ব ভাব রেখে সেবা চলতে থাকে, কোন জীবের সেবা, বিগ্রহের সেবা, সাধু সন্তের সেবা, মানসিক সেবা, এসব চলতে থাকে, তাহলে কোন চিন্তা নেই। এমনটা যদি চলতে থাকে তাহলে আপনি এখনই জীবন মুক্ত হয়ে গেছেন। যদি মনে এই ভাব এসে যায়, যে .."আমি শ্রী রঘুনাথজীর, আর তাঁর সেবক আমি, আমরা এক্ষুনি নির্ভয় হয়ে যাব। হৃদয়ে এক পরমানন্দের অনুভূতি আসবে।"প্রভু সর্বজ্ঞ এবং সব জায়গায় বিরাজমান। আমি যেখানেই আছি, সেখানেই প্রভু সর্বদা খুশি ভাবে আমার সঙ্গে আছেন, এমন অনুভব করুন। আসলে আমরা নিজেই "মায়া" র বসে প্রভুর দিকে পিঠ করে আছি, কিন্তু আনন্দের বিষয় প্রভুর দিকে পিঠ করে থাকলেও তিনি অমঙ্গল করেন না। তাহলে ভাবুন। যদি আমরা তার প্রতি সম্মুখ হয়ে থাকি, তাহলে দুশ্চিন্তা কি করে সম্ভব? অমঙ্গল হওয়া কি করে সম্ভব? এই পথ তো আনন্দের পথ।

26) সত্যি কথা বলছি, যদি আপনার পাপকর্ম না থাকে,অপরাধ না থাকে, তো যেখান দিয়েই যান, কোন সাপ কামড়াবে না। কোন কাঁটা লাগবেনা। আর যদি অপরাধ থাকে তাহলে রাজমহলে থেকেও আপনার কষ্ট থাকবে। রাজমহলের ভেতরে এসেও পাপ আপনাকে দন্ড দিয়ে যাবে। এজন্য অপরাধমুক্ত জীবনই হলো সুখী জীবন। আমরা এমন এমন অপরাধ করি যে কেউ জানে না। আর তার কোন দন্ড এখনও ভুগিনি, কোন প্রায়শ্চিত্ত হয়নি, তার মানে সেই কর্মের কর্মফল প্রস্তুত নিচ্ছে, সামনে আগামী দিনে সেই ফল আসবে এবং আপনাকে পরাজিত করবে। এইজন্য সকলকে প্রার্থনা করছি.. সুখের লোভে পাপ আচরণ করবেন না। ওই ব্যভিচার, ওই অপব্যবহার, মাংস খাওয়া, অন্যের প্রতি হিংসা করার স্ব।

27) সেটাই খেতে পারতাম যা ভিক্ষে করে পেতাম। যা ভিক্ষা করে আনতাম সেটাই। এবং যদি ভিক্ষা না করতে গেলাম, তো খিদেতেই পড়ে থাকতাম কুটিরে। ওষুধের জন্য  তো যার বাড়ি গিয়ে দক্ষিণা পেতাম তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ। তা ১৮০০ টাকার মাসে ওষুধ কিনতে হতো। এখন লক্ষ টাকা মাসে খরচ হয়। কিডনি ফেল, ডায়ালিসিস, ওষুধ, এটা, ওটা, কি দশাই না হতো। এখন শত শত লোক সেবা করছেন। ব্যবস্থা হল। যদি আমি নিজের চেষ্টায় এই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতাম তাহলে টাকা চাইতে যেতে হতো ওষুধের জন্য। যখন প্রাণ সমর্পিত করে দিলাম রাধারাণীর কাছে। হে রাধা রানী হে লালজু ,আমাকে যদি মারারই থাকে, তো মারুন। আমি বাবাজির কাছে কি আছে? আমার কাছে না আছে লোক, না  আছে টাকা,  না আছে  এক ইঞ্চি থাকার জায়গা? যেখানে আমি আশ্রমে থাকতাম, তাঁরা যখন খবর পেলেন যে আমার কিডনি ফেলিওর আছে, তখন সেখান থেকে বের করে দেওয়া হল। ভাই আশ্রমের থাকলে রোগের জন্য খরচ করতে হবে। তোমার যদি এখানে থাকার  থাকে তাহলে তোমার কিডনি ফেল আছে তার ব্যবস্থা কর। ধীরে ধীরে আমাকে বের করে দেয়া হতো। আমি বুঝতে পারতাম আমার সঙ্গে এমন হচ্ছে কারণ আমি অসুস্থ। আমার পাশে কেউ ছিল না। কিছু ছিল না । ভাবুন এখন যা সব আপনি দেখছেন। সব লাডলিজুর কৃপা। একসময় এই বৃন্দাবনেই শীতকালে গমের বস্তাকে সেলাই করে তাকে চাদর করে গায়ে দিয়ে শীত কাটিয়েছি। ভিক্ষা করে যা রুটি পেয়েছি, যেমনি রুটি পেয়েছি, খেয়েছি। যদি 5 টাকারও প্রয়োজন তাহলে কারো কাছে চাইতে হবে। এই ব্যবস্থা না হলে আজ আমার কি দশা থাকতো ভাবুন।

28) অকাল মৃত্যু কেন হয় ?

খুব বড় কোনো অপরাধ করে থাকলে অকাল মৃত্যু ঘটে। যেমন সাধারণ ক্ষেত্রে অপরাধী সাংবিধানিক আইন অনুসারে শাস্তি পান। আর যাঁরা খুবই বড় অপরাধী তাদের সোজাসুজি এনকাউন্টার করা হয়। 

এবার "প্রেমানন্দ মহারাজের বাণী" এর দ্বিতীয় ভাগ দেখুন।.. 


উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like  এবং Share করুন।


আরো পড়ুন:Ratan Tata, Mukesh Ambani, Azim Premji, Gandhiji, Mandella, Kalam's Quotes

                      Motivational And Inspirational Quotes For Success

                      Dan Lok's Advice  For Success ,   14 Risks you must take for Success

                      চিন্তন করুন এবং সফল হন ,  কেন করবেন ? সেটা জেনে তবেই কাজটি করুন , 

                      জীবনে কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর প্রভাব , বাধার মধ্যে দিয়ে পেরিয়েই সফলতা আসে ,

                      অহংকার হলো চরম শত্রু , আত্মজ্ঞান কি , শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সার ,

                     আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ , 

                সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,

                ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , 

                মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস

                ব্যবসার জন্য মুদ্রা লোন PMMY  Loan ,  Inner Engineering by Sadguru Jaggi Vasudev

                  Teachings of Premananda Maharaj -2


For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com


Post a Comment

0 Comments