নিজেকে উৎসাহী রাখার দশটি পথ:-
কোন কাজ সম্পন্ন করতে গেলে কাজে উৎসাহ অতি প্রয়োজন। যখন কোন কাজে আমরা উৎসাহী থাকি, তখন সে কাজটি আমরা সহজেই করতে পারি। কারণ তখন মন ক্লান্ত হয় না, কারণ ওই কাজের প্রতি একটি আগ্রহ থাকে, ভালোবাসা থাকে।
কিন্তু আবার দেখা যায় অনেক ব্যক্তি থাকেন যাঁরা প্রায়শই যেটাই করেন, পুরো উৎসাহ দিয়ে করেন ।
সেটা কি করে সম্ভব হয় ?
আমরা যখন ইউটিউবে মোটিভেশনাল ভিডিও দেখি, তখন আমরাও উৎসাহিত হই। পুরো জোশ চলে আসে এবং মনে হয় আমরাও পারবো। জীবনে অনেক কিছু করার জন্য পরিকল্পনা করে ফেলি। স্বপ্ন দেখি সফল হওয়ার কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এসেই উৎসাহ ঠান্ডা হয়ে যায়। কেন এমন হয়?
Steve Chandler এর এই " Ten ways to motivate yourself " বইতে কিছু পদ্ধতি বলেছেন, যাকে অনুসরণ করে সব সময় উৎসাহ কে বজায় রাখা সম্ভব। আজ আমরা সেই পুস্তকের স্যার বস্তু সম্বন্ধে জানবো।
1)সীমিত সময়:-
যখন খেলা হয়, ফুটবল, হকি যাই হোক না কেন, তার একটা সীমিত সময় থাকে। অর্থাৎ কাজের একটা সীমাকাল টানা থাকে, যার মধ্যে কাজটি সবথেকে ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু ভাবুন যদি সেই খেলার সময় সীমা না থাকতো ? তাহলে খেলার ফল নির্মিত হতো কিভাবে? যখন খুশি ইচ্ছে মতো খেলতো, আড্ডা মারতো, ঘুমতো, আবার খেলতো, এভাবেই সময় নষ্ট করত এবং ফল নির্ণয় হতো না । লক্ষ্যে পৌঁছানো যেত ই না।
এমনটাই হয়। অনেকেই যখন কোন কাজ করার জন্য দায়িত্ব হাতে নেন, ভাবেন," আমার কাছে অনেক সময় আছে"। তাই কাজকে দেরি করতে থাকেন। মনে মনে ভাবেন ..আজ করবো না, আজ বিশ্রাম নিই, কালকে করব। রোজ রোজ এই বাহানায় এইভাবে কাজের প্রক্রিয়াকে দেরি করতে করতে সময় নষ্ট করেন এবং সে সুযোগও নষ্ট করে ফেলেন। কিন্তু বাস্তব হল সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। যতটা আশা রাখি ততটাও সময় হাতে নেই। তাই সময় নষ্ট করা চলবে না। মনে রাখতে হবে যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাকে আগে করতে হবে। যে সময় চলে যায় আর ফিরে আসে না। তাই সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে আজই শুরু করুন।প্রত্যেকটি দিনকে এমন ভাবে ব্যবহার করুন যেন এটাই আপনার শেষ দিন। এবং সেই জন্য যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাকে আগে করুন। সীমিত সময় হিসাবে সেই ভাবে কাজের তালিকা প্রস্তুত করুন। সময় যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই শেষকালে যেন আফসোস না থাকে যে আমি সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারলাম না। অযথা অপ্রয়োজনীয় কাজের সময় নষ্ট করবেন না। পুরো মানসিক এবং শারীরিক শক্তি দিয়ে কাজ করুন। সেটাই আগে সম্পন্ন করুন যেটা অত্যন্ত জরুরী কাজ।
2) প্রাপ্য পুরস্কারের প্রতি নজর রাখুন (Eye on the rewards):-আপনি আপনার ধ্যান সর্বদা লক্ষ্য বস্তুর প্রতি রাখুন। কাজের পুরস্কার স্বরূপ যা আপনি পেতে চান, সেটার উপর নজর রাখুন। ধরুন আপনাকে একটি মেঝেতে একটি দড়ি শুইয়ে দেওয়া হলো এবং তার উপর হাঁটতে বলা হলো। আপনি সহজেই হাঁটবেন। কারণ ওতে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই। কিন্তু যদি সেই দড়ি দুটি উঁচু বাড়ির মাঝে বেঁধে দেওয়া হয় এবং ওই দড়ি দিয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে পার হতে বলা হয়, তখন আপনি সহজে পারবেন না। কারণ আপনার মন বিচলিত হবে, মনে ভয় হবে, পাছে যদি উপর থেকে পড়ে যাই? এ থেকেই বুঝুন দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনি পারছেন না, কারণ আপনার ধ্যান সফলতার দিকে নয়, বিফলতার দিকে আছে। এমনটাই হয়। কারণ হেরে যাওয়ার ভয় মন কে বিচলিত করে। তাই সর্বদা লক্ষ বস্তুর দিকে মনোনিবেশ করুন। তাতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে গেলেও আবার চেষ্টা করবেন। বারবার চেষ্টা করবেন এবং দেখবেন সফলতা আসবেই।
3)সফলতা পাওয়ার জন্য খিদে রাখুন:-
একটি লক্ষ্য বস্তু পূরণ হলে অন্যটি শুরু করুন। বৃদ্ধির শেষ নেই। আমেরিকান বডি বিল্ডার আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার কে বডিবিল্ডিং কম্পিটিশন এ অংশগ্রহণ কালে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি চ্যাম্পিয়ন হলে তার পর কি করবেন? তিনি বলেছিলেন তিনি অভিনেতা হবেন। অর্থাৎ একটা লক্ষ্য পূরণের আগেই দ্বিতীয় লক্ষ্য তৈরি ছিল।জীবনে শুধু বসে থাকা সফলতা নয়। আপনার লক্ষ্য বড় রাখতে হবে। একের পর এক শিখর জয় করতে হবে।
আপনার খিদে যেন শেষ না হয়।কাজের খিদে, লক্ষের খিদে যেন শেষ না হয়, চলমান ই জীবন থেমে থাকাই মৃত্যু। যতই একাধিক লক্ষ্য থাকবে ততই আপনি তীব্র এবং শীঘ্র পদক্ষেপ নেবেন। সফলতার খিদে সব সময়ই আপনার কাছে থাকবে।
4)সফলতাকে আগাম অনুভব করুন :-
বাস্তবে মিথ্যে বলা খারাপ কিন্তু আপনার লক্ষ্যকে পাওয়ার জন্য একটু মিথ্যে বলুন। আপনি যদি কোটিপতি হতে চান, তাহলে কোটিপতি হওয়ার স্বাদ মনে মনে অনুভব করুন। মনে মনে কল্পনা করুন আপনি কোটিপতি হলে কি রকম আপনার চারপাশটা হবে। কোটিপতি হলে কি করবেন এবং সেটাকে দিয়ে কাকে সাহায্য করবেন ? বা কি করবেন সবকিছু আগাম অনুভব করুন। অনুভব করুন আপনি কোটিপতি হয়ে গেছেন। তাহলে আপনার ব্যবহার চিন্তাধারা কেমন হবে, সেসব চিন্তন করুন, কারণ ওই চিন্তা নিয়ে এবং অনুভবই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কোটিপতি হওয়ার পরিস্থিতি কে গ্রহণ করুন, স্বীকার করুন যাতে কোটিপতি হয়ে গেলে সেই অবস্থা যেন আপনার কাছে সহজ-লভ্য মনে হয়। যেমন ধরুন আপনি সফল বক্তা হতে চান। যখন জনসমক্ষে বক্তব্য রাখছেন যেন ঘাবড়াবেন না। একজন সফল বক্তা যেমন নির্ভীক থাকেন তেমনি নির্ভীক হতে চেষ্টা করুন যাকে বলে "Fake it Untill you make it".
5)শান্তির সময়ও ঘাম ঝরান:-
সেনাবাহিনীতে একটি কথা আছে অভ্যাস কালে বেশি ঘাম ঝরাও তাহলে লড়াই করার সময় রক্ত কম ঝরবে। ব্যাপারটা এমনি যে যদি আপনি যতই অভ্যাস করবেন,কাজটি ততই সঠিক হবে। সেই জন্য যখন আপনার হাতে কাজ নেই, তখনও ঘাম ঝরান। অভ্যাস করুন, নিজের দক্ষতাকে তীক্ষ্ণ করুন।বক্সার মহম্মদ আলী সেটাই করতেন। প্রতিযোগিতার আগেই কঠিন প্রতিযোগীদের সঙ্গে অভ্যাস করতেন। নিজের দক্ষতা বাড়ান, আরো শিখুন, আরো জানুন যাতে কাজ সহজ হয়।
6) নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখুন:-
কোন মেশিনারি হোক কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান, যত বেশি পারেন জানার চেষ্টা করুন। যতই বেশি দায়িত্ব নেবেন তত বেশি শিখবেন। তত বেশি জানবেন, ততই বেশি সফল হবেন। আপনার নিজের জীবনের চালক আপনি নিজে। তাই জানুন কোনটি আপনার ভালো লাগে এবং কোনটি ভালো লাগেনা। কোন কাজ আপনি করতে চান, কোন কাজ নয়। এসব বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিন। আপনার জাহাজের সবকিছু যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে আপনিই জ্ঞাত হন।
7) নিজের কাজের প্রগতির প্রতি পদকে নথিগত করুন (Keep your track record):-
নিজের অগ্রগতির সব কিছু নজর রাখুন। নথিবদ্ধ করুন। কেউ ব্যর্থ হলে কেন ব্যর্থ হলেন? তার সমাধান কি করবেন? কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় যাতে দ্বিতীয় বার সেই ভুল না হয়, অতীতের ভুল থেকে কি শিক্ষা নিলেন? সবকিছুই নথিবদ্ধ রাখুন। কাজ যদি বড় হয় তাহলে তাকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করুন এবং একের পর এক ছোট ছোট অংশ সম্পন্ন করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকুন। প্রতিদিন সপ্তাহ অনুযায়ী, বছর অনুযায়ী, লক্ষ্য কে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভক্ত করুন। এবং একবার ধাপে ধাপে কাজকে সম্পন্ন করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকুন।
দেখবেন যতই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে, তখন ওই সম্পন্ন হওয়া কাজের জন্য মনে সন্তুষ্টি বাড়বে এবং এভাবেই খণ্ডে খণ্ডে কাজকে সম্পন্ন করতে করতে সম্পূর্ণ লক্ষ্যের শিখরে পৌঁছাবেন। ছোট ছোট সফলতা একসঙ্গে যুক্ত হয়ে বড় সফলতার প্রাপ্তি হয়। তাই প্রতিদিনের প্রগতির উপর নজর রাখুন।
8) জীবনকে সহজ সরল করুন (Simplify your life):-
জীবনে যত কিছু চাইবেন সব পাওয়া সম্ভব নয়। তাড়াতাড়ি করার চক্করে একসঙ্গে অনেকগুলি লক্ষ্য বা কাজ একসঙ্গে করতে চাইলেও করা সম্ভব নয়। আপনার জীবনে যদি অনেকগুলি লক্ষ্য থাকে, তাহলে একটির পর অন্যটি করুন। সবগুলি একসাথে করতে পারবেন না। একটি সম্পন্ন করুন, তারপর অন্যটি সম্পন্ন করুন। আরেকটা জিনিস জেনে রাখবেন, সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক হয় না। তাই আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী যে সময় ভেবেছেন সেই সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন নাও হতে পারে, ধৈর্য রাখতে হবে।
9) হারিয়ে যাওয়া দামি জিনিসটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন (Look for lost gold):-
জীবনকে ধনাত্বক ভাবে দেখুন নিরাশ হবেন না। আপনার মনের স্থিতি যেমন পারিপার্শ্বিক টা ও তেমনি হয়ে আপনার কাছে আসবে। যখন আপনি খুশি থাকেন, তখন চারপাশে সব কিছুই সুন্দর মনে হয়। আর যখন মন খারাপ থাকে, তখন সবকিছু খারাপ মনে হয়। তাই মনের ভিতরের সম্পদ কে জানতে হবে। মনকে সর্বদা খুশি রাখুন। বাহিরের পারিপার্শ্বিক সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই কিন্তু আপনি আপনার মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা আপনার দায়িত্ব। খারাপ পরিস্থিতিতে মন খারাপ করবেন না। পদ্ম পাঁকে জন্মায়, গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা লাগতেই পারে, বিনামূল্য দিয়ে জীবনে কিছু পাওয়া যায় না। এখানে কোন কিছুই ফ্রিতে পাওয়া যায় না। তার মূল্য দিতে হয়। তাই জেনে রাখুন খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেই সুন্দর পরিস্থিতির বীজ লুকিয়ে আছে।
10) অস্বাভাবিক ঘটনাকে স্বীকার করুন (Welcome the unexpected):-
নিজেকে কমজোর ভাববেন না। মাছ সাঁতারে দক্ষ এবং বানর গাছে চড়তে দক্ষ কিন্তু মাছের গাছে চড়া সম্ভব নয়, বানরের সাঁতার কাটা কঠিন,এটা বুঝতে হবে।
এখানে সবার মধ্যেই বিশেষ গুন আছে। এবং তেমনি অন্য ক্ষেত্রে দুর্বলতাও আছে। তাই কারো সঙ্গে কারোর তুলনা করে লাভ নেই। যার মধ্যে যে বিশেষ গুন আছে, তাকেই প্রস্ফুটিত করে তুলতে হবে। আপনি নিজেকেও কমজোর ভাববেন না। আপনার মধ্যেও বিশেষ গুণ আছে। কেউ হয়তো সঙ্গীতে দক্ষ, কেউ বিজ্ঞানে, কেউবা খেলাধুলায়, কেউবা দক্ষ সাঁতারে। সবার মধ্যে যে বিশেষ গুন আছে তাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তাহলেই তার জীবন বিকশিত হবে। জীবন সফল হবে।
উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like এবং Share করুন।
আরো পড়ুন:- Ratan Tata, Mukesh Ambani, Azim Premji, Gandhiji, Mandella, Kalam's Quotes , Rich Dad vs Poor Dad, THE 10X RULE
Motivational And Inspirational Quotes For Success
Dan Lok's Advice And Quotes For Success , Start with "WHY"? "IKIGAI" A path for Success, 14 Risks you must take for Success,
চিন্তন করুন এবং সফল হন , কেন করবেন ? সেটা জেনে তবেই কাজটি করুন ,
জীবনে কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর প্রভাব , বাধার মধ্যে দিয়ে পেরিয়েই সফলতা আসে ,
অহংকার হলো চরম শত্রু , আত্মজ্ঞান কি , শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সার ,
আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ ,
সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?, জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,
ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি ,
মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস , 11 Qualities of a Successful Person.
ব্যবসার জন্য মুদ্রা লোন PMMY Loan , Inner Engineering by Sadguru Jaggi Vasudev
For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com
0 Comments