জীবনের আশ্চর্য জনক রহস্য :-
আমাদের এই জীবনে আমরা কখন জন্মাব? কখন মৃত্যু হবে? এসব আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমাদের পিতা মাতা পছন্দ করতে পারি না, কোন দেশে জন্মাব পছন্দ করতে পারি না, কোন শহরে জন্মাব, কোন জাতিতে জন্মাব, গায়ের রং কি হবে এসব আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সবাই চায় শান্তিপূর্ণ মৃত্যু বা পীড়া হীন মৃত্যু কিন্তু এসব আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হবো, যে ঝামেলার সম্মুখীন হবো, তার কিছুটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কিন্তু সেই সমস্যার প্রতি আমরা কিভাবে প্রতিক্রিয়া নেবো সেটা আমাদের হাতে থাকে। যদি আমরা সমস্যার প্রতি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখি তবেই জীবন সুখময়, শান্তিময়, এবং পরিণত হবে।
জীবন
যুদ্ধ হলো অনেকটা ক্রিকেট খেলার মতো। আপনি যদি সঠিক ভাবে ব্যাট করতে জানেন কেউ আপনাকে
আটকাতে পারবে না। এই জীবন যতগুলি গুগলি আপনার দিকে ফেলবে তাদের যদি ভালোভাবে খেলতে
পারেন তাহলে আপনার লক্ষ্য প্রাপ্তিতে কেউ আটকাতে পারবে না। মন আপনাকে বার বার
গুগলি দিয়ে ‘আউট’ করতে চায়। যখন আপনার ব্যায়াম করা দরকার
তখন মন কি বলে? যাস না, ঘুমিয়ে পড়। যখন আপনি জানেন এখন
অধ্যয়ন করা উচিত, মন বলে পড়িস না খেলতে যা। বলা হয়
হোয়াটসআপ দ্বারা, ফেইসবুক দ্বারা প্রভাবিত হয়ো না, পর্নোগ্রাফি দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না, কিন্তু দেখা যায় মন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ নিতে খুব কঠিন মনে
করে।
কতজন চেয়েছেন সকালে ভোরে উঠি? কতজন পেরেছেন অনেকে ভোরে উঠার জন্য
অ্যালার্ম লাগান? লাগানো অ্যালার্ম টা যখন বাজে তখন অ্যালার্ম টা বন্ধ করে
আবার শুয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে আবার পুনরায় শুয়ে পড়ার সাথে সাথে আপনি ব্যর্থ হন।আর
সকাল সকাল ব্যর্থতা দিয়ে দিনটি শুরু করেন। ব্যাপার হলো ৫মিনিট দেরিতে উঠুন কোনো
সমস্যা নেই, কিন্তু যে কোনো কাজ কঠিন বা অসম্ভব
ভেবে অথবা অলসতার কারণে ছেড়ে দেওয়া টা সমস্যা।
কোনো
কাজ কঠিন ভেবে ছেড়ে দেওয়াটা খারাপ। আপনি কোনো কাজ ছেড়ে দিলেন এর অর্থ আপনার
মস্তিস্ক কে আপনি বার্তা দিলেন যে কাল রাত্রি যে আপনি সকালে ভোরে ওঠার সিদ্ধান্ত
নিলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি আপনার মস্তিস্ক কে বার্তা দিলেন যে মস্তিস্ক
সঠিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না। এটা শুধু সকালে ওঠা টা ব্যাপার
নয়,
জীবনের প্রতি মুহূর্তে যে কোনো ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়ার জন্য খাটে। ভোর চারটের
সময় যদি উঠতে না পারেন চারটে তিরিশ এর অ্যালার্ম লাগান তবু অভ্যাস করুন যে সময়ের
অ্যালার্ম লাগালেন সে সময় যেন ঘুম থেকে উঠেন। মন থেকে বলা বার্তা টা যেন পালন হয়।
না হলে অভ্যাস টা খারাপ হবে। নিজেকে দেওয়া বার্তা এবং শর্তের পালন এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। কারণ এরকম
জীবনের প্রত্যেক ঘটনা থেকে একটা অভ্যাস তৈরি হয়।
ক্রিকেট
এ একটা কথা আছে ‘Sledging’। বিপরীত পক্ষ যখন বল দিয়ে ‘ব্যাটসম্যান’ কে আউট করতে পারেন না তখন গালাগাল দিয়ে
‘ব্যাটসম্যান’ এর মন কে বিচলিত করতে চান, যাতে ব্যাটসম্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
ভুল ব্যাট চালায় এবং আউট হয়ে যায়। আপনি যদি.. কেও মন্দ কিছু বললে বা গালিগালাজ করলে
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভুল প্রতিক্রিয়া দেন, তাহলে আপনার মনোযোগ নষ্ট হবে এবং
লক্ষ্য ভ্ৰষ্ট হবেন এবং জীবনের খেলায় হেরে যাবেন। তাই বলি পরের কথায় নিজের মস্তিস্ক
বিচলিত করবেন না। সচিন তেন্ডুলকর ক্রিকেট ‘sledging’ এ বিচলিত হতেন না তাই তিনি সফল। ঠান্ডা মাথায় সেই ঘটনার উপর
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন । লোক যখন আপনাকে গালি দেয়, বদনাম করে, টিটকারি মারে, তখন কি আপনি শান্ত থাকেন? না নিয়ন্ত্রণ হারান? বিপরীত পক্ষের গালিগালাজ বা বদনাম দেওয়া কি বন্ধ করতে পারবেন? না পারবেন না এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
যে ব্যক্তি ব্যাটিং করছিলেন বলটি অনুমান
করেছিলেন ইনসুইং হবে, কিন্তু সামান্য একটু হওয়ার প্রভাব এলো
এবং বলটি আউটসুইং হয়ে গেলো। তিনি বলটি মারতে পারলেন না। কিছু জিনিস থাকে যা আপনার
নিয়ন্ত্রণ এর বাইরে।
কোনো
মহান ব্যক্তিত্ব জন্ম থেকে তৈরি হয় না। একজন মহান ব্যক্তি জীবনে সমস্যার প্রতি বা
প্রয়োজনীয়তার প্রতি কিভাবে প্রতিক্রিয়া নেন তার উপর তাঁর সফলতা নির্ভর করে। সবথেকে
স্বার্থপর শব্দ হলো 'আমি' বা 'আমাকে'। আমার প্রতি এমন ব্যবহার করা উচিত, লোক যেন আমাকে এমন ভালোবাসে, এমন সম্মান দেয়, পরীক্ষায় আমাকে এতো নাম্বার দেওয়া উচিত, আমাকে এটা দেওয়া উচিত, ওটা দেওয়া উচিত না, সবকিছু আমার মতে হওয়া উচিত, সবকিছু আমি, আমার এবং আমাকে দিয়ে ঘটুক আমরা চাই।
আমার পছন্দ, আমার
আনন্দ, আমার চাহিদা, আমি এটা চাই, সবকিছু। আপনাকে কি মনে হয়? যতক্ষণ আমরা আমি এবং আমাকে মনে করি তখন
সুখ শান্তিতে থাকি? না, থাকি না । আমরা এভাবেই বড় হয়েছি, সবসময় পেতে চাই। সবকিছু আমার ইচ্ছা
অনুসারে হোক আমরা তা চাই। এমনকি মন্দির এ গেলেও বলি হে ঈশ্বর এটা দিন, ওটা দিন। চাই চাই চাই। খুব কম লোকই আছেন যিনি মন্দির এ এসে ঈশ্বর কে
ধন্যবাদ দিয়ে বলেন “আমি আপনাকে দেব।“
জন
এফ কেনেডি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন তাঁর
প্রথম রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জনমঞ্চে ভাষণ দিতে এলেন, তিনি দেশ বাসীকে বললেন “এটা বলবেন না দেশ আপনার জন্য কি করতে
পেরেছে, কি
দিয়েছে? নিজেকে
জিজ্ঞাসা করুন আপনারা দেশের জন্য কি করতে পারবেন?”
তাই
বলি জিজ্ঞাসা করবেন না যে ঈশ্বর আপনার জন্য কি করতে পারেন? জিজ্ঞাসা করুন আপনি নিজে ঈশ্বর এর জন্য কি করতে পারবেন ?
'আমি' এবং 'আমাকে' এই শব্দ আপনাকে অশান্তি দেবে। কারণ
পৃথিবীতে কেউ আপনার ইচ্ছা পূরণের জন্য আসে নি। এই আমি শব্দকে এড়িয়ে চলুন। বুঝুন যে
কেউ আপনার আশা পূরণে দায়িত্ববান নয়। বরং অন্যের সেবা করুন। যখন আপনি সেবা চান, তখন আপনাকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।
তাঁরা আপনাকে নাও সেবা করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি সেবা করতে চান? কে আপনাকে আটকাবে?
যখন
আপনি চান লোক আপনাকে সম্মান করুন, লোক নাও করতে পারে। কিন্তু আপনি যদি
চান অন্যদের সম্মান করবেন? কে আপনাকে আটকাবে?
যখন
আপনি চান লোক আপনাকে ভালোবাসুক, লোক আপনাকে নাও ভালোবাসতে পারে। কিন্তু
যদি আপনি চান জনগণ কে ভালোবাসবেন? কে আপনাকে আটকাবে ?
যদি
আপনি চান, লোক আপনাকে নাও দিতে পারে। কিন্তু যদি
চান আপনি দান করবেন, কে আপনাকে আটকাবে?
তাই
জীবন যাত্রা কে 'আমি' থেকে সরিয়ে 'আপনাকে' তে নিয়ে আসুন। যখন আপনি 'আমি’ ‘আমি' করবেন আপনি খুশি থাকবেন না। অন্যদের
সেবা করুন খুশিতে থাকবেন।
জিরাফ এর জন্ম কাহিনী টি বুঝুন। যখন শিশু জিরাফ
জন্ম নেয় তখন মায়ের এতো উঁচু শরীর থেকে সোজা মাটিতে পড়ে যায়। তারপর তার মা তার
কাছে যায় এবং সোজা একটা লাথি মারে। শিশু জিরাফ ভাবে “সবে তো পৃথিবীতে এলাম, এসেই লাথি?” হঠাৎ সেই ব্যাথা থেকে সামলে উঠে সে দাঁড়াতে চায়। উঠে দাঁড়াতেই মা
তাকে আরেকটা লাথি সজোরে লাথি মারে। এবার শিশু জিরাফ বুঝতে পারে আমি যদি কিছু না
করি তাহলে লাথি খেতেই থাকব। এবার সেই লম্বা সরু পা দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। হালকা
একটু দাঁড়াতেই মা আবার লম্বা একটা লাথি মারে। এবার সেই শিশু জিরাফ উঠে পালানোর
চেষ্টা করে। যখনি শিশু জিরাফ দৌড়তে শেখে তখনি তার মা তাকে আদর করতে শুরু করে।
জিরাফ এর মা জানে সে সবসময় শিশুদের দেখভাল করতে পারবে না। তাই শিশুকে নিজেকে
আত্মরক্ষা করতে শিখতে হবে, তাই দৌড়তে শিখতে হবে। সেই জন্যই সে তার
বাচ্চা কে লাথি মারে। এই জীবনেও পরিস্থিতি আমাদের সময় সময় লাথি মারে যাতে করে আমরা
নিজে নিজে উঠতে শিখি এবং দৌড়তে শিখি। এটা ব্যর্থতা নয়, এটা হলো শিক্ষার একটা অঙ্গ। Don’t just go through life , Grow
through life .
যখন
দাঁতের ফাঁকে কিছু আটকে থাকে, আমাদের জিভটা সবসমই সেই আটকে থাকা টুকরো টির দিকেই যায়, যতক্ষণ না সেটা বের হয়। অন্য ৩১টি দাঁতে কিছু লেগে নেই, কিন্তু জিভটি সেদিকে যায় না।তেমনি আমাদের
জীবনে অনেক অন্য ভালো জিনিস থাকে যার উপর কেন্দ্র করে আমরা জীবন কে মধুময় করতে
পারি, কিন্তু আমাদের সাধারণ প্রবণতা এই যে
আমাদের মন ও তাই করে, যখন জীবনে কোনো প্রান্তে সমস্যা বা কাঠিন্য আসে মন সেখানে বার বার
যায় এবং ঋনাত্বক হয়ে সেখানেই থাকতে চায়। জীবনের অন্যদিকে থাকা খুশি তাকে অন্যদিকে
আকর্ষণ করতে পারে না। জীবনে যা কিছু ভালো হচ্ছে তার দিকে মন কে নিয়ে যাওয়া দরকার। এবং যা সমস্যা রয়েছে সেটা সমাধানের
জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে, কিন্তু সেটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার দরকার নেই।
জীবনে নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, অনিয়ন্ত্রিত জীবন পীড়া দেয়। যেমন গাড়ির ভারসাম্য রাখার জন্য চারটি চাকা থাকে তেমনি জীবনের নিয়ন্ত্রণ থাকার জন্য জীবনের চারটি দিকেই ভারসাম্য থাকা জরুরি:-
১)Personal life (নিজস্ব জীবন)
২) relationship (অন্যের সাথে সম্পর্ক )
৩)work life (কর্ম জীবন )
৪) social contribution
(সমাজের
প্রতি অবদান )।
Personal Life:- আমাদের কাছে অখুশি হওয়ার থেকে খুশি হওয়ার জিনিস অনেক কিছু আছে। কিন্তু
আমরা সেটার দিকে না ভেবে যেটা খারাপ হয়েছে বা অভাব রয়েছে সেটা নিয়ে কান্না কাটি
করি। ধনাত্বক এবং খুশি থাকার মন্ত্র হলো কৃতজ্ঞতা
অর্থাৎ যা আছে সেটা কে ধন্যবাদ দেওয়া,
যেটা
নেই সেটা নিয়ে কান্নাকাটি করা নয়। এই ‘কৃতজ্ঞতা’ কে আয়ত্ত করা যায়। উঁচু স্তরে অভ্যাস করবার পর কৃতজ্ঞতা কে সচেতন ভাবে আবার অভ্যাস কারবার দরকার পড়ে না, তখন সেটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। যা কিছু আপনার কাছে আছে সেটার জন্য প্রকৃতি
কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন।
আমরা
যেমন রঙের চশমা পরি, বাইরের জগৎ কে তেমনি ভাবে দেখতে পাই। প্রকৃতি কে তেমন দেখতে পাই না
যেমন ভাবে সেটা আছে। আমাদের মধ্যে যেসব সংস্কার, চরিত্র এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা সঞ্চিত আছে তার উপর নির্ভর করে আমরা দুনিয়া কে
সেইভাবে দেখতে পাই। কোনো জিনিস কে ধনাত্বক না ঋনাত্বক ভাবে দেখব সেটা আমাদের মন নির্ণয়
করে।
আমাদের সেই সব জিনিস কে ছেড়ে দিতে হবে যে সব জিনিস আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। কারণ তাদের নিয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না। অনেকে গ্রহ নক্ষত্রের দৃষ্টি নিয়ে মাথা ঘামান। সেসব ছেড়ে দিন। গ্রহ নক্ষত্র আপনার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। নিজের কর্ম আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে সেটা করুন। আবার আমরা কখনো কিছু খারাপ হলে ভেঙে পড়ি, সেটা করলে চলবে না। কোনো জিনিস দেখবেন একসময় যেটা ভুল মনে হয়, দেখা যায় পরবর্তীকালে সেটা ঠিক প্রমাণিত হয়ে যায়। এ জন্য সেই ব্যক্তির কাছে পরামর্শ নেওয়া দরকার যাঁর কাছে স্বচ্ছতা আছে।
![]() |
আমাদের
অন্যের প্রতি সম্মান থাকা দরকার।আপনি যদি অন্যের কাছে ভালো ব্যবহার চান, তাহলে আপনাকেও অন্য কে তার থেকেও বেশি ভালো ব্যবহার করতে হবে।
দেখা
যায় যিনি
প্রাণহীন বস্তু যেমন বালতি, মগ ইত্যাদি জিনিস কে সঠিক সম্মান দেন না, সঠিক ভাবে যত্ন নেন না, অর্থাৎ অবহেলা করেন, তাদের মধ্যে দেখা যায় অন্য কোনো ব্যক্তিকেও অবহেলা করার
তাঁদের মধ্যে প্রবণতা রয়েছে। আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি কোনো ব্যক্তি
এবং জড়বস্তুর মধ্যে তফাৎ খুঁজে বের করতে পারে না। তাই যখন আমরা কোনো জিনিস পত্র কে খারাপ
ভাবে ব্যবহার করি, বা অবহেলা করি, তখন ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কেও অসংবেদনাতা চলে আসে। যখন আমরা কোনো
জিনিস কে সম্মান দিই না সেটা ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যায় এবং সেই অভ্যাস এর কারণে
আমরা কোনো ব্যক্তি কেও সম্মান দিতে ভুলে যাই।
লোকের
স্বাভাবিক প্রবণতা হলো অন্যের দোষ বের করে সেটা নিয়ে চর্চা করা। আপনি ভালো এবং
মন্দ দুটোই দেখলেও, সচেতন ভাবে ভালোটাই নেয়া উচিত।
খারাপটা ত্যাগ করতে হবে। খারাপ টা না দেখার অর্থ এই নয় যে খারাপ জিনিসটার
বিষয়ে ভাবতে হবে না, এর অর্থ হলো খারাপ জিনিস এর মাধ্যমে মনকে বিচলিত হতে না দেওয়া। এই অভ্যাস টা সহজে আসে না, এর জন্য অভ্যাস করতে হয়। এটা তাঁদের
মধ্যে সহজেই সম্ভব যাঁরা আধ্যাত্মিকতা অভ্যাস করেন।
আমাদের
সম্পর্ক ভালো করতে হলে কিছু নেওয়ার আগে দিতে শিখতে হবে। অর্থাৎ কারো কাছ থেকে ভালো
স্বভাব এবং ব্যবহার পেতে হলে নিজেকে ভালো ব্যবহার এবং স্বভাব দিতে হবে। যদি আপনি লোকের
কাছে ভালো ব্যবহার করেন তাহলেই তাঁর কাছে
ভালো ব্যবহার পাবেন। অন্যকে যদি প্রেম ভালোবাসা দেওয়া হয়, তাহলেই তার কাছ থেকে প্রেম ভালোবাসা
আশা করা যায়।
কাউকে
পরিবর্তন করতে চাইলে তার আগে ভেবে দেখতে হবে তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য আপনি কি
উপযুক্ত? এই প্রশ্নটা এই জন্যই বলা হচ্ছে কারণ কাউকে
সঠিক পথ দেখানোর আগে নিজেকে সঠিক পথে চলতে
হবে। আপনি চিনি খান, আর যদি অন্যকে চিনি খেতে বারণ করতে যান, সেটা মানানসই হবে না।
FORGIVENESS
:- আমরা তৎকাল
ট্রেন টিকিট কাটতে পারি। কাউকে ফোন করতে পারি, কিন্তু কোনো সম্পর্ক এমন তৎকাল তৈরি হয়
না। সম্পর্ক ধীরে ধীরে তৈরি হয়। এর কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই।
‘কাউকে
ক্ষমা করা’ এই
গুন টি পাওয়ার জন্য আমাদের কিছু জিনিস মনে রাখতে হয়। যখন কোনো পরিস্থিতি আমাদের
দুঃখ দেয়,
তখন তাকে অন্য নজরে দেখতে হবে। ভেবে দেখতে হবে যে তাঁর মধ্যে এমন কি বাধ্যবাধকতা
এলো যে তাঁকে এটা বলতে হলো। হয়ত তিনি কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন, তাই এমন বলছেন। হতে পারে তাঁর কোনো মজবুরি আছে। এটা কাউকে ক্ষমা
করার একটা পদ্ধতি। কোনো ঘটনা কে লোকটি থেকে আলাদা করে দেখা দরকার। লোকটির দোষ নেই, দোষ তাঁর ব্যবহারের। তাই ব্যবহার কে
ঠিক করতে হবে। এরকম ভেবে সহজেই আমরা লোকটিকে ক্ষমা করতে পারি এবং সমস্যার সমাধান
খুঁজতে পারি।
WORK LIFE :-অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে লাভ নেই। নিজের
মধ্যে গুন্ জ্ঞান এবং দক্ষতার ক্রমাগত বৃদ্ধি করে যেতে হবে। খেলা, ব্যবসা, রাজনীতি অথবা যে কোনো ক্ষেত্রেই এটা
খাটে। নিম্নমানের স্বার্থপর লোকেরা চান অন্যেরা বড়ো না হন ,
অন্যেরা
জ্ঞানী, গুণী, দক্ষ বা সমৃদ্ধশালী না হন। তাঁরা অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় নামেন।
অন্যের সাথে হিংসা করে অন্যকে টেনে নামাতে চান বা নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি
পর্যন্ত করতে চান। কিন্তু অন্যের
প্রতি হিংসা করে সুখ শান্তি পাওয়া যায় না।
নিজের
প্রতি নজর দিন, নিজেকে প্রতিদিন জ্ঞানে, গুনে, দক্ষতায় বাড়িয়ে তুলুন। প্রতিদিন উন্নত
হন। প্রতিদিন নতুন গঠনমূলক কিছু শিখুন, জানুন এবং করুন । প্রতিদিন
এভাবে নিজে উন্নত করতে থাকলে দেখবেন.. সময়ের সাথে সাথে আপনি সফলতার চরম
শিখরে পৌছে যাবেন। আপনার জীবন সার্থক হবে।
Self Discovery
:-আপনার
জীবনের উদ্দেশ্য কে জানতে হলে আত্ম গবেষণায় যেতে হবে। প্রথমে নিজের ক্ষমতা, দক্ষতা সম্বন্ধে সঠিক বিশ্লেষণ করতে
হবে,
তবেই সেই স্তর কে ধরে নিজের সাথে প্রতিযোগিতা আরম্ভ করা যাবে। প্রতিদিন নিজেকে
উন্নত করতে হবে। আপনার কি পছন্দ, কি অপছন্দ, আপনি কোথায় যেতে চান, জীবনে কি করতে চান? আপনার সফলতা বলতে আপনি কি বোঝাতে চান
বা কি পেতে চান?
এসব নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। এই সব প্রশ্নের উত্তর থেকেই আপনার জীবনের উদ্দেশ্য
বেরিয়ে আসবে।
আমরা
যখন কাউকে উপহার দিই তখন উপহার টি কাগজ বা ঢাকনা দিয়ে মোড়া থাকে। কেন? কারণ সেটা একটা রহস্য তৈরি করে, জানার জন্য কৌতূহল তৈরি করে, যে উপহার নিয়ে আসা হয়েছে সেটা কি জিনিস ? এই রহস্য দিয়ে আনন্দ এবং উত্তেজনা দুটোই তৈরি করা হয়। প্রত্যেক
ব্যাক্তির একটি নিজস্ব বিশেষ গুন্ বা দক্ষতা রয়েছে যেটা ঢাকনা দিয়ে মোড়া আছে। সেটা
কে উন্মোচন করে রহস্যের সমাধান করা হলো জীবনের উদ্দেশ্য।
ঈশ্বর আমাদের দক্ষতা এবং সম্ভাবনা কে উপহারের
মতো করে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। সেই বহুস্তরীয় ঢাকনা কে একটি একটি করে উন্মোচন
করাই হলো জীবনের উদ্দেশ্য। এবং সেটা কর্ম
এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং জ্ঞান এবং দক্ষতা লাভের মাধ্যমে ঘটে। একটি একটি করে
ঢাকনা কে আমরা উন্মোচন করতে থাকি এবং উপহার পেতে থাকি। এটাই হলো জীবনের যাত্রা।
জীবন কে অনুভব করার জন্য অপেক্ষা বা কর্ম এর বিরাম এর প্রয়োজন নেই। জীবনের প্রতি
পদে উত্তেজনা অনুভূতি আছে, সেটাকে অনুভব করতে হবে।
জাপানি
ikigai কথার
অর্থ হলো বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য। এতে চারটি বস্তু উল্লেখ আছে:-
১)আমরা
কি জিনিস কে ভালোবাসি?
২)আমি
কি জিনিস এ দক্ষ?
৩)এই
পৃথিবী আমার কাছ থেকে কি প্রাপ্তি আসা রাখে?
৪)আমি
এই সমাজ কে, এই
পৃথিবী কে, কি দিতে পারি?
এই
চারটি জিনিস এর উপর নিয়ন্ত্রণ রেখেই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য তৈরি হয়। আমাদের জীবনের যা উদ্দেশ্য, অন্তরাত্মা যা করতে চায়, বা যে ভাবে জীবনে যা প্রাপ্তি করতে
চায়, সেই পরম উদ্দেশ্য এর জন্য সময় বের করা
অবশ্যই দরকার। দরকার পড়লে ঝুঁকিও নেয়া দরকার।
Decoding Spirituality at
work :- আধ্যাত্মিকতা
আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করে। আধ্যাত্মিকতা অভ্যাস করবার জন্য সন্যাসীই
যে হতে হবে তেমন নয়। আধ্যাত্মিকতা আমাদের
জীবনের লক্ষ্য কে হত্যা করে না বরং সেটাকে সক্রিয় করে। আধ্যাত্মিকতা আমাদের শেখায়
যে আমাদের এইজন্যই সফল হাওয়া দরকার যাতে করে আমরা অন্যদের সহায়তা করতে পারি।
অন্যকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে যতখুশি প্রয়োজন পড়ে টাকা রোজগার করুন এবং অন্যদের সাহায্য করুন।
Integrity and character :- যদি আমাদের স্বভাব চরিত্র ভালো হয় তাহলে সেটাই
আসল। কখনো হয়ত অনেকে কথাবার্তার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না, কিন্তু তাঁর আচরণই তাঁকে সম্মান দেয়।
মুখের কথায় নয়, করে
দেখানো কাজই মানুষ কে বেশি প্রভাবিত করে। যাঁদের
স্বভাব, চরিত্র ভালো তাঁদের দ্বারা আমরা
সর্বদাই প্রভাবিত হই।
Social Contribution :-কেউ সম্পূর্ণ স্বার্থপর হন, কেও সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন, অথবা কেউ দুটোর মাঝামাঝি তে থাকেন।
জীবনের প্রকৃত যাত্রা হলো স্বার্থপর থেকে নিঃস্বার্থপর হওয়া। বিমান যাত্রীদের জন্য
প্রত্যেক সিট এর পেছনে নিরাপত্তা বিবৃতিতে
লেখা থাকে নিশ্চিতভাবে আপাদকালে আগে নিজের ‘musk’ পরুন তারপর বাচ্চা, অসহায় বা অন্যদের সহায়তা করুন। যতক্ষন আমরা নিজেকে সহায়তা করতে পারি
না ততক্ষন অন্যদের সহায়তা করা সম্ভব নয়। আপনি তখনই অন্যকে ধন সম্পদ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন যদি
আপনার কাছে ধন সম্পদ থাকে। আপনি অন্যদের তখনি ভালোবাসতে পারবেন যদি নিজেকে
ভালোবাসতে জানেন। যদি নিজেকে নিরাপদ অনুভব করতে পারেন তাহলেই অন্যদের নিরাপত্তা
দিতে পারবেন। সম্পূর্ণভাবে নিঃস্বার্থ হওয়া সম্ভব কিন্তু সেটা হওয়া একদিনে সম্ভব
নয়, দীর্ঘদিন
অভ্যাস করতে হবে।
অন্যদের বড়ো হতে সাহায্য করি। বক্সিং
চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলী বলতেন " আপনি যে অন্যদের সাহায্য করছেন তাঁর মাধ্যমে
আপনি এই পৃথিবীতে থাকার ভাড়া মেটাচ্ছেন।" যখন আমরা নিজেকে সেই পরম দিব্য
পরমাত্মার সাথে নিজেকে ধ্যানে যুক্ত হই, যখন আমরা সচেতন থেকে আধ্যাত্মিকতা কে অভ্যাস করি তখন তারই মাধ্যমে
আমরা জীবনের পরম উদ্দেশ্য কে, সেই পরম লক্ষ্য কে বুঝতে পারি। অন্যদের সাহায্য করেই আমরা পরম শান্তি
লাভ করতে পারি এবং ঈশ্বর এর সাথে সংযুক্ত হওয়ার ও এটাই মাধ্যম।
যাঁরা
ঈশ্বর কে ভালোবাসেন, তাঁরা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং অন্যের সুখ দুঃখ বুঝতে পারেন।
যদি সেবা এবং সহায়তা করাই জীবনের মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তাহলে ভয়, লজ্জা সবকিছু অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে
হবে।
***অনেকেই
জীবনের সমস্যা এলে ভয় পান। ভয় বিষয়টি নিয়ে এভাবে ভেবে দেখুন :-
১)আপনার
জীবনে কোনো সমস্যা আছে? যদি আছে। সমস্যার প্রতিকার এর কোনো পথ
আছে? আছে। তাহলে ভয় কিসের ?
২)আপনার
জীবনে কোনো সমস্যা আছে? না নেই। তাহলে ভয় কিসের ?
৩)আপনার
জীবনে কোনো সমস্যা আছে? আছে। সমস্যার প্রতিকার এর কোনো পথ আছে? না নেই। তাহলে ভয় কিসের ? যা হবে হবে !
সার বস্তু ভারতীয় সন্যাসী এবং যোগী "গৌর গোপাল দাস" জীর লেখা "Life's Amazing Secrets" নামক বই থেকে গৃহীত।
আরো পড়ুন:- ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , আকর্ষণের সূত্র ,
আপনার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কে জাগান , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না ,
সফলতার ১০ টি সূত্র , সৌভাগ্যবান অথবা দুর্ভাগ্যবান তা জানুন , আত্মজ্ঞান কি ,
For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com
0 Comments