অবচেতন মনের ক্ষমতা এবং তার প্রয়োগ( Power of Subconscious Mind and its utilization):-

 অবচেতন মনের শক্তিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়?

আপনি জানেন যেমন লোহাকে চুম্বক এ পরিণত করলে সে নিজের ওজনের তুলনায় 10 গুণ পর্যন্ত ভারী ওজন বহন করতে পারে আর যদি লোহার চুম্বকীয় ক্ষমতা সরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তার বহন করার ক্ষমতা কামে যায় তেমনি মানুষের ক্ষেত্রেও যাদের মধ্যে আকর্ষণ ক্ষমতা বেশি থাকে, অন্য  জন কে যারা কথার মাধ্যমে, ব্যবহারের মাধ্যমে, তাড়াতাড়ি আকর্ষণ করতে পারেন, তারা ক্ষমতাশালী, শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় হনএসব আকর্ষণ ক্ষমতা আমাদের অবচেতন মন এবং সচেতন মনের দ্বারা পরিচালিত  হয় আমরা দেখেছি কখনো প্রার্থনা করি কিন্তু  প্রার্থনা বাস্তবায়িত হয় না যদি আপনি সঠিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে প্রার্থনা করতে পারেন আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হয় যদি আপনি অবচেতন মন কি করে কাজ করে এবং চেতন মন কি করে কাজ করে জানতে পারেন, যদি আপনি অবচেতন মনকে এবং চেতন মন কে  সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারেন তাহলে প্রার্থনা সফল হয়ে যায়

এটা ঠিক যে আমাদের জীবনে যা হয় তার 90% অবচেতন মন দ্বারা পরিচালিত হয় এবং 10% চেতন মন দ্বারা পরিচালিত হয় তাই অবচেতন মনকে সঠিকভাবে চিনতে পারলে  কাজ সফল হওয়া সম্ভব কেন কেউ স্বাস্থ্যবান হন?, কেনই বা কেউ অসুস্থ হন ?,কেনই বা কেউ সফল হন?, কেন কেউ অসফল হন? , এ সবকিছুর পেছনে মূল কারণ হলো  অবচেতন মনের সঠিকঅথবা ভুল  ব্যবহার যদি ভাবেন আপনি সবথেকে ধনী ব্যক্তি হবেন, যদি ভাবেন আপনি সবথেকে সফল ব্যক্তি হবেন, তাহলে অবচেতন মন তার জন্য রাস্তা তৈরি করে দেবে অবচেতন মন হলো আমাদের মনের সেই অংশ যা নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করে, হৃদস্পন্দন ঘটাতে সাহায্য করে, রক্ত পরিচালনা ইত্যাদি অবচেতন পদ্ধতিগুলোকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে  অবচেতন মন কি করে কাজ করে.. তা  কি করে পরিচালিত হয়.. আপনি যদি একবার জানতে পারেন, তাহলে আপনার কাজটি অবচেতন মন কে দিয়ে করাতে পারলে 90% কাজ সহজ হয়ে যাবে

 

 আমরা যা করি তার 90% অবচেতন মন দিয়ে চালিত হয়, তাই অবচেতন মনকে দিয়ে কাজ করতে জানা অতি আবশ্যক  অনেকে বলেন মনের কথা শুনুন মনের কথা শোনার অর্থ অবচেতন মন কে আপনার লক্ষ্যের অনুকূলে পরিচালিত করা, যাতে আপনার লক্ষ্য যাই হোক না কেন.. ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী,যা হতে চাইবেন, তাই হওয়া সহজ হবে অবচেতন মন কে ব্যবহার করে যে কোন কঠিন কাজ হাসিল করা যায়, সফল করা যায়

 যে সকল কাজ  আপনি সচেতনতার সাথে নেন, সেই সব কাজ সচেতন মন পরিচালনা  করে যারা জীবনে সফল হন তারা সচেতন এবং অবচেতন মন দুটি কেই সঠিক ব্যবহার করতে জানেন আর যারা জীবনে অসফল হন তারা শুধু সচেতন মনকে প্রয়োগ করতে জানেন আমাদের যে পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে, সচেতন মন তাদের মাধ্যমে বার্তা নিয়ে তারপর নিজে সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু অবচেতন মন কোন সিদ্ধান্ত নেয় না সে শুধু সচেতন মন থেকে পাওয়া আগের বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা এবং আচরণকে অনুসরণ করে প্রতিক্রিয়া নেয় আপনার অবচেতন মন খুব সহানুভূতিশীল, যদি অবচেতন মন আপনার বড় জাহাজহয়, তাহলে সচেতন মন সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন  প্রাপ্ত তথ্য সচেতন মনের দ্বারা শোধন করে তারপর সচেতন মনে একবার গ্রহণ হলে, ওই তথ্য অবচেতন মনে প্রবেশ করে অবচেতন মন কখনো আপনাকে প্রশ্ন করে না এবং অবচেতন মনের মধ্যে সব কিছুরই জবাব আছে যেটা আপনি রোজ রোজ ভাবেন, সেটা আপনার অবচেতন মনে গেঁথে যায়

 শুনে থাকবেন রাতে ঘুমনোর আগে 5 মিনিট পর কোনো জিনিস চিন্তা করতে উপদেশ দেওয়া হয় যখন সচেতন মন ও অবচেতন মন এর সঠিক ব্যবহার করা যায়, তখনই পূর্ণ ফল পাওয়া যায় যদি আপনি সচেতন এবং অবচেতন মন দুটি কি সঠিক ব্যবহার করতে জানেন, তাহলে সবকিছু পাওয়া সম্ভব আপনার দুটি জগৎ  আছে.. অন্তর্জগৎ এবং বাহির জগৎ অন্তর্জগৎ যেখানে আমরা দিন-রাত চিন্তা করি আর বহির্জগৎ হলো পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, প্রকৃতি ইত্যাদি থেকে যে প্রতিক্রিয়া আমরা পাই যিনি    অন্তর্জগৎ কে সঠিকভাবে জানলেন তিনি নিজের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন আমরা দিনভর কাজ করে রাতে শুয়ে পড়ি কিন্তু সেই শুয়ে পড়ার পরেও অবচেতন মন কাজ করতে থাকে অবচেতন মন 24 ঘন্টা আপনার জন্য কাজ করতে থাকে অবচেতন মন আমাদের আমাদের রোগ জ্বালা কেও  দূর করতে সাহায্য করে যদি ধনাত্মক চিন্তা  করেন, সেই চিন্তন সম্বন্ধে আপনি মনকে নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে সেই চিন্তন বাস্তবে রূপায়িত হয়

 

 একটি দুর্ঘটনার কথা নিজেকে আশ্চর্য মনে হলেও সেটা বাস্তবে হয়েছেমরিস গুডম্যান নামক এক ব্যক্তির জীবনের ঘটনা বলছি.. তাঁর বিমান দুর্ঘটনার ফলে শরীরের 103 টি হাড় ভেঙে গিয়েছিল এবং ডাক্তার বলেছিলেন তাঁর দ্বারা জীবনে চলা সম্ভব হবে না ডাক্তার বলেছিলেন কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মারা যাবেন কিন্তু তার প্রচন্ড আত্মশক্তি এবং আত্মবিশ্বাস তার অবচেতন মনের মধ্যে বারবার এই বার্তা পাঠাতে থাকে যে তিনি সুস্থ হবেন এবং সুস্থ হয়ে চলতে পারবেন এই বারবার চিন্তাধারার অভ্যাস এর ফলে তিনি আট মাসের মধ্যে হাঁটা চলা করতে সক্ষম হন তিনি সেই ধনাত্মক চিন্তন কে ক্রমাগত আট মাস মনের মধ্যে রাখেন এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন

 আপনার অবচেতন মনই আপনাকে সফল বানাবে আপনি অবচেতন মনকে রাতে ঘুমনোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোনো প্রয়োজন বার্তা পাঠাতে পারেন যে যেটা সোজাসুজি অবচেতন মনের মধ্যে চলে যায় ঘুমোতে যাওয়ার শেষ পাঁচ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ এই সময় অবচেতন মন 95% কাজ করে এবং দিনের বেলা  75% কাজ করে সেজন্য ঘুমোতে যাওয়ার শেষ পাঁচ মিনিট কে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আপনার বার্তা একটি কাগজে লিখে তারপর  আপনার ফোনে রেকর্ড করে নিন, এবার এটাকে রিপিট মোডএ রেখে দিন এবার আপনি দশবার লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে মনকে শান্ত করে নিন আপনার ঘুম আসতে থাকবে এবার রেকর্ডকরা বার্তাও চালু করে দিন এবং রিল্যাক্সড অনুভব করুন  রেকর্ড করা বার্তাশুনতে শুনতে আপনার ওই কথার কাল্পনিক চিত্র মনের মধ্যে কল্পনা করতে হবে দেখবেন যে বার্তা অবচেতন মনকে ঘুমানোর আগে দিয়েছিলেন, ঘুম থেকে উঠে সেই বার্তা সারাদিন মনের মধ্যে আসতে থাকবে

 

  অবচেতন মন সহানুভূতির ভাষা বোঝে, কিন্তু যুক্তি বোঝে না তাই আপনি অবচেতন মনে যা বার্তা পাঠান তাকে সে যাচাই করতে পারে না সেটি ঠিক, কি ভুল, অবচেতন মন অবচেতন মন বুঝতে পারে না

                                        



প্রাচীনকালে লোক এই সূত্রকে ব্যবহার করতেন আপনি যদি কোন কিছু চান তাহলে সেটা পাবেন বলে বিশ্বাস করুন এবং আপনি সেটা পেয়ে যাবেন বিশ্বাস রাখুন যে প্রার্থনা সফল হবে প্রবল আত্মবিশ্বাস ওই প্রার্থনা কে সত্যি তে রূপান্তরিত করে আপনি যা পেতে চাইছেন বা যেটা প্রার্থনা করছেন.. সেটা কল্পনা করুন,  মনে মনে  বিশ্বাস করুন যে আপনি তা পেয়ে গেছেন এবং সব সময় সে জিনিস আপনার কাছে আছে এভাবে  চিন্তন করতে করতে দেখবেন সত্যিই আপনি তা পেয়ে যাবেন

  যতদিন না ঐ চিন্তাশক্তি অবচেতন মনে পৌঁছায়,  এই পদ্ধতি অনেকদিন অনুসরণ  করে যেতে  হবে আপনি প্রচন্ড বিশ্বাসের সঙ্গে  প্রার্থনা করুন, দেখবেন প্রার্থনা সফল হবে

                                                                       


   

Passing over technique:- আপনার ইচ্ছা কে স্বীকার করুন এবং আপনার সচেতন মন যদি একবার বুঝে নিল এটা সম্ভব, তাহলে  তখন আপনার ইচ্ছা  সচেতন মনে গৃহীত হবে এই চিন্তা ধারাকে বারবার মনের মধ্যে পুনরাবৃত্তি করতে হবে তাহলে ওই বার্তা সচেতন মন থেকে অবচেতন মনে চলে যায় এবং ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজ করতে থাকে এবং ইচ্ছা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়

 

Visualization technique:- আমরা যেমন চোখে দেখি, তেমনি মনকে শান্ত করে.. “সফল হওয়া চিত্রএবং সফল হলে যা কিছু প্রাপ্তি হবে সেসব চিত্র মনের মধ্যে কল্পনা করুন নিকোলা টেসলা কোন আবিষ্কার কে মনের মধ্যে পুরোপুরি ভিজুয়ালাইজকরতেন এবং সেটার খুঁটিনাটি বার করতেন

 

Mental Movie technique:- সবথেকে বেশি সেলিং বিজনেস এ এই পদ্ধতি ব্যবহার হয় মনের মধ্যে প্রথমে নিজেকে সন্তুষ্ট করতে হবে এবং মনে মনে ভাবতে হবে আপনি   বিক্রয়যোগ্য বস্তু র যে মূল্য রেখেছেন.. সেটা ক্রেতার জন্য সঠিক মূল্য আপনার মনকে শান্ত করুন এবং কিছুক্ষণ নিজেকে শিথিলকরুন, প্রকৃতি র হাতে সৃষ্টিতে নিজেকে নিয়ে আসুন ঘুমের পূর্বাবস্থা সকল অন্যান্য মানসিক চিন্তন কে কম করে দেয় এবার আপনি প্রপার্টি চেকচিন্তন করুন এবং অনুভব করুন যে ওই চেকআপনার হাতে আছে, আপনি নিজেকে খুশি অনুভব করুন যে আপনি এই টাকা পেয়ে গেছেন আপনি চেকপাওয়ার  জন্য ধন্যবাদ করুন এবং ধন্যবাদ করতে করতে  চিন্তন  প্রকৃতি র হাতে  ছেড়ে দিন  আপনি যেটা ভাবছেন সেটা অবচেতন মনে রাতভর চলতে থাকবে

 আপনি যা চান তা  পাওয়ার  জন্য চিন্তন শক্তি কে ব্যবহার করতে হবে, নিজের লক্ষ্য কে শেষ প্রাপ্তি পর্যন্ত ভিজুয়ালাইজকরতে হবে যখন এটা করবেন দেখবেন যাত্রার সকল পথ সুগম হচ্ছে যা আপনি চিন্তা করবেন, ধারাবাহিকভাবে করতে হবে, দেখবেন পদক্ষেপ নেওয়াটা সতস্ফুর্ত ভাবে হচ্ছে

অবচেতন মন আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করবে যখন আপনি নিজেকে ধনী ব্যক্তিকল্পনা করুন, চিন্তন করুন, এই কথা বার বার চিন্তন করতে অভ্যাস করলে,দেখবেন আপনি সত্যি সত্যিই ধনী হবেন আপনার চিন্তনঅবচেতন মনে গেঁথে যায়, তখন মন থেকে ধনী হওয়ার বিভিন্ন উপায় আসতে থাকে,যা আপনাকে নতুন নতুন সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে এবং আপনি ধনী হাতে থাকেন

 

 আপনি চিন্তন শক্তি কে যেভাবে ব্যবহার করবেন তেমনি কাজ করবে নিজেকে এমপ্লয়ীভাবলে এমপ্লয়িই থেকে যাবেন

 

 আপনাকে সেই কাজটি করতে হবে যা আপনি পছন্দ করেন এবং ভালবাসেন যে কাজ আপনি খুব মনোযোগ সহকারে করছেন তাহলে সেটা সফল হাওয়া সম্ভব হবে সফল ব্যক্তিরা নিজের কাজকে ভালোবাসেন

 

 আপনাকে যে কোনো একটি ক্ষেত্রে অন্তত ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন করতে হবে আপনি যে কাজ করছেন তাতে শুধু নিজের সফলতা দেখবেন না আপনাকে অন্যজনকেও সফল হতে সাহায্য করতে হবে আপনার সফলতা যেন অন্য মানুষের প্রয়োজনীয়তা  পুরন করে,সমাজের প্রয়োজনীয়তা পুরন করে আপনার  মনোনিবেশ যাতে ধনাত্মক জিনিসের প্রতি থাকে, তাহলে আপনি ধনাত্মক থাকবেন মনোনিবেশ খারাপ বস্তুর উপর থাকলে আপনার মন খারাপ হবে আপনার ধনাত্মক চিন্তন আপনার অবচেতন মনে ভালো বার্তা পাঠাবে এবং আপনি সফলতার সিঁড়ি চড়তে থাকবেন

 

 অবচেতন মন কে ব্যবহার করে একজন ভালো জীবনসঙ্গী কেও আকর্ষণ করতে পারেন আগে নিশ্চিত থাকতে হবে কেমন সঙ্গী আপনাকে চাই কি গুন দরকার? তাহলে সঠিক সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে পারবেন

 

 আমরা অবচেতন মন কে প্রয়োগ করে খুশিতে থাকতে পারি যখন আপনার ফোকাসমানসিক চিন্তার উপর থাকবে তখন যা আপনার মনে ভাববেন, তাই অনুভব করবেন যখন আপনার মনোনিবেশ ভালো জিনিসের প্রতি থাকবে, তখন আপনি সুখি থাকবেন যখন আপনার মনোনিবেশ খারাপ জিনিসের উপর থাকবে, তখন দুঃখী হবেন যদি আপনি চান লোক আপনাকে ভালো স্বভাবের মনে করে, তাহলে লোক সম্বন্ধে আপনি ভালো ভাবতে শুরু করে দিন যদি চান লোক আপনাকে নিয়ে ভালো অনুভব করেন, তাহলে আপনিও লোকেদের সাথে তেমনি ব্যবহার করুন যদি চান সবাই আপনাকে সম্মান করেন, তাহলে অন্য জনকে ক্ষমা করতে শিখতে হবে অন্যকে ক্ষমা করতে শিখুন, আপনি যখন কাউকে ক্ষমা করেন আপনি তখন ধনাত্মক বার্তা কে আকর্ষণ করেন এবং শান্তি কে আকর্ষণ করেন

Post a Comment

0 Comments